২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:৫১/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:৫১ অপরাহ্ণ

কোরআন ও রমজান

     

মাহমুদুল হক আনসারী

কোরআন ও রমজান দুটি শব্দই অতীব পবিত্র। মুসলিম সমাজে দুটি বিষয় মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত সম্মান মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু পবিত্র রমজান মাস মুসলিম বিশ্বে তাৎপর্য বহন করে, সেহেতু রমজান ও রোজা নিয়ে কিছু বলা দরকার। রমজান মাসের রোজা, সেহেরী, ইফতার সবকিছু রোজাদারের জন্য ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। এসব ইবাদত বন্দেগী মুসলিম বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক নরনারী অবশ্যই পালন করার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে থাকে। মুসলিম নরনারীর জন্য যেভাবে রোজা পালন করা ফরয, একই নিয়মে নামায আদায় বা প্রতিষ্ঠা করাও ফরয। নামায রোজা সম্পর্কিত বিভিন্ন বক্তব্য আলোচনা ফযিলত ও ফযায়েল অসংখ্য বই কিতাবের মাধ্যমে পড়তে পাওয়া যায়। বাজারে এসব বিষয়ে হাজার হাজার বইপুস্তক থাকলেও আমি মনে করি তা গতানুগতিক। গতানুগতিকভাবে রোজা , নামায, হজ্ব, যাকাত প্রদান করা এক প্রকার ইবাদত। বাস্তবে এসব ইবাদতের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সামাজিকভাবে কী অর্জন সেটা কতটুকু মুসলিম সমাজ ভাবে এবং বাস্তবায়ন করে সে জায়গায় আমার বক্তব্য। রমজান মাস আসলে একটি পক্ষ দ্রব্যমূূল্য বৃদ্ধি করে থাকে, তাদের বেশিরভাগ সিন্ডিকেট মুসলমান। তারাও রোজা নামায ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োযিত থাকে। তাদের মধ্যে অনেক সামর্থ্যবান মুসল্লীদের দেখা যায় পবিত্র মক্কা মদীনায় ওমরাহ করতে চলে যায়। পবিত্র ঘরে ওমরাহ পালনের মাধ্যমে তারা বেশি পূর্ণ অধিক ইবাদত সওয়াবের উদ্দেশ্যে তাদের ওমরাহ পালন। ব্যবসায় হালাল হারাম বৈধ অবৈধ কী পরিমাণ আয় ইনকাম করলো অথবা হলো সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণও চিন্তা না করে রোজাদার সমাজকে অস্থির করে তথা বাজার হতে হাজার কোটি টাকা মুনাফার নামে অতিরিক্ত অর্থ জনগণের নিকট থেকে কেড়ে নিয়ে যে বা যারা এ ধরনের কারসাজির ব্যবসা করে রোজাদার মুসল্লীদের অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের মধ্যে ফেলে বাস্তবে তাদের উক্ত অধিক সওয়াবের আশায় ইবাদত কী পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা পাবে সে জায়গায় আমার প্রশ্ন। আমার বক্তব্যের সাথে অনেকের দ্বিমত ও মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ ভালমন্দ যে যাই করুক না কেনো আমাদের দেশে তার সমালোচনা আলোচনা থাকবেই। এটাই একেবারে চিরসত্য কথা। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যতনিয়মেই অনিয়মের বিরুদ্ধে তৎপরতা আর ব্যবস্থা করা হোক না কেনো তবুও অনিয়ম বন্ধ করা কোনো অবস্থায় সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যক্তি পরিবার রাষ্ট্র তাঁর নিজস্ব ভালমন্দে সে যদি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ না হয় তাহলে তাকে কেউ আইন দিয়ে জোর করে শুদ্ধ করতে পারবেনা। এসব বিষয়ে অনেক কথা অনেক উদাহরণ দেয়া যায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবেনা। পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের কিছুটা অতিরিক্ত চাহিদা থেকে থাকে। সে চাহিদা কারো সামর্থ্যনুপাতে, আবার দেখা যায় সামর্থ্যের বাইরেও অনেক রোজাদার পাওয়া যায় যারা এ মাসে অনেক কিছু সেহেরী আর ইফতারীতে ভোগ করতে চায়। ইফতার ও সেহেরী খাওয়া সুন্নাত। কী পরিমাণ ইফতারী ও সেহেরী খেতে হবে তার একটা নিয়ম বেধে দেওয়া আছে ইসলামের সুন্নতী শরীয়াতের মধ্যে। নবীর সুন্নত তরীকায় সেহেরী ইফতারের নিয়ম কানুন থাকলেও মুসলিম সমাজ অথবা রোজাদার মুসল্লীগণ তা মানতে রাজী নন। কেননা সমাজে দেখা যায় সামর্থ্যবান রোজাদার ইফতার করার পূর্বে বাজারে যত প্রকারের খাদ্য জাতীয় আইটেম পাওয়া যায় সবকিছু আমার সামনে চায়। যেমন- ইফতারের সময় ঝাল কিছু আইটেম সকলেই কমবেশী রাখে। যেমন চনা, পিঁয়াজু, বেগুনী, শরবত দুএকটি ফলফ্রুট। মোটামোটিভাবে এসব বিষয় সবার জন্য কমন থাকে। এর বাইরে একটি শ্রেণীর দেখা যায়, ইফতারের সময় তাঁর টেবিল শত আইটেমে ভর্তি হয়ে আছে। ঝাল আইটেম থেকে যত ধরনের ফলফ্রুট আছে সবকিছু দিয়ে টেবিলকে সাজানো হয়েছে। এর বাইরে নানাপ্রকারের ফলের শরবত। তারপর গরু আর মুরগীর নানা পদের আইটেম। এর সাথে পোলাও বিরাণীর সাজানো ভাত। এতসব বাহারী আইটেম নিয়ে ইফতারীতে বসে সমাজের উন্নত শ্রেণীর এলাকার রোজাদার মুসল্লীগণ। তাদের রোজা আর ইফতার সে এক আজব অভ্যাস। এ যেনো রোজা নয়, বাহারী খাবার গ্রহণের একটি আয়োজন। কেনো রোজার মাস হলো? কেন রোজাদারের জন্য রোজাকে ফরয করা হলো? সেটায় এখানে হাজার প্রশ্নের জন্ম দেয়। আসলে রোজা কী ত্যাগের! না ভোগের। যদি রোজা ত্যাগের হয় তাহলে একটি রোজা শেষ করার পর এতগুলো আইটেমের খাবার কেন। আমি কী সব খেতে পারব, একটি নির্দিষ্ট সময় খাবার দাবার পানাহার থেকে বিরত থাকার পর যেখান থেকে ত্যাগ শিক্ষার কথা ছিলো সেখানে হাজার প্রকারের খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমার রোজার বাস্তব ত্যাগের শিক্ষা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো। সেখানে আমার কথা। ত্যাগ আর ক্ষুধা যেখানে অনুধাবনের কথা ছিলো সেখানে ভোগ আর বিলাসী খাবারে বাস্তবে রোজার কী শিক্ষা সমাজ গ্রহণ করছে সেখান থেকেই আমার বক্তব্য। একদিকে একটি শ্রেণী হাজার প্রকারের ইফতার আর সেহেরীতে মশগুল। অপরদিকে ভুভুক্ষ মানুষ এক মোঠ আহার আর ক্ষুধার জ্বালায় যেখানে কোনো ইফতার আর সেহেরী পায় না, সেখানে রোজাদারের একটি অংশ যারা ইফতার আর সেহেরীতে লাখ লাখ টাকার খাবার অপচয় করছে সেখানেই রোজার ইফতার আর সেহেরী নিয়ে না বলে পারা যাচ্ছেনা। মূলত রোজা এবং ইফতার সেহেরী এসব ইবাদত অথবা সংস্কৃতির যে আল্লাহপ্রদত্ত উদ্দেশ্য ছিল বাস্তবে সে উদ্দেশ্য এবং সাফল্যের মধ্যে মুসলিম সমাজ আছে কিনা সেখানেই আমাকে বলতে হবে। বলতে হবে প্রকৃতভাবে রোজা পালনের কী উদ্দেশ্য, সে উদ্দেশ্য সমাজে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে কিনা। রোজার মূল তাৎপর্য রোজাদারের অন্তরে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে কিনা। রোজা পালনের ব্যাপক উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল নিজের জিহ্বা লোভ লালসা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, অন্যের উপর জুলুম অত্যাচার না করা। নিজের উপর অর্পিত ক্ষমতা পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সঠিকভাবে পালন করা। তাহলে সে জায়গায় ব্যক্তি সমাজ ও পরিবার চলছে কিনা সেখানে আমাকে আপনাকে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে আমার রোজা নামাজ সেহেরী ইফতার আসল ইসলামের নিয়মের মধ্যে হচ্ছে কিনা। এসব প্রশ্ন ও উত্তর একজন মুসলমান রোজাদার হিসেবে আমাকে ঠিক করে নিতে হবে। এসব প্রশ্ন এবং উত্তর ইসলাম সম্মত হলে আমার ইবাদত গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আর যদি প্রশ্ন এবং উত্তর সঠিকভাবে একজন রোজাদার মুসল্লী দিতে না পারেন তাহলে তার রোজা নামাজ কোন প্রকারের ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে সেটাও নিজে থেকে জানা যাবে। রোজা নামাজ এসব ইবাদতের মূল তাৎপর্য উদ্দেশ্য যতক্ষণ না মুসলিম সমাজে বিশুদ্ধভাবে অনুধাবনের মাধ্যমে না হবে, ততক্ষণ এসব ্আনুষ্ঠানিক ইবাদতের সঠিক ফলপ্রসু রেজাল্ট আশা করা যায়না। পবিত্র কোরআন নাযিলের মাস রমজান মাস। রমজানের রোজা আর কোরআন তেলাওয়াত অতীব ফযিলতের ইবাদত। এ মাসে মানবজাতির পথনির্দেশনার জন্য জীবন চলার কর্মসূচী হিসেবে পবিত্র কোরআনুল কারীমের জমীনে নাজিল হয়। মানবজাতির মহামূল্যবান এ কোরআনুল কারীম সর্বাবস্থায় মানবজাতিকে সঠিক পথনির্দেশনা দিতে পারে। কোরআন শরীফ তেলাওয়াতে পাঠে যেরকম সাওয়াব পাওয়া যায়, তার অনুসরণ অনুকরণ সমাজ ও রাষ্ট্রকে একটি আদর্শ সুশৃংখল সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। রমজান মাসে পৃথিবীর মুসলমানগণ এ কোরআন শরীফকে অধিকভাবে পাঠ করে থাকে। নামাজ ও নামাজের ব্ইারে এর পাঠ অধ্যয়ন অনুশীলন ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। রমজানে শহর গ্রাম প্রায় সবখানে দুনিয়ার মসজিদ সমূহে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নামাজে তারাবিহ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে নানা অনিয়ম দেখা যায়। কতিপয় মসজিদে ছয়দিন , সাতদিন,দশদিন, চৌদ্দদিন,ষোলদিন, বিশদিন এবং সাতাশদিনে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফের তেলাওয়াতের মাধ্যমে তারাবীর নামাজ শেষ করতে দেখা যায়। এখানেও ইচ্ছেমতোভাবে মুসল্লী ও সমাজ তারাবীহ নামাজ আদায় করে থাকেন। সঠিকভাবে কী নিয়মে কীভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নামাজে তারাবীহ শেষ করবে সেটাও গ্রহণ করতে চায়না। ইচ্ছেমতো একেক মসজিদে একেক নিয়মে নামাজ আদায় করা হয়। শারীরিক সামর্থ্য সময় ও অন্যান্য বিষয় চিন্তা না করে কতিপয় মুসল্লীর সিদ্ধান্তে এভাবে মসজিদে মসজিদে তারাবীহ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পুরো রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ পড়ার হুকুম থাকলেও এক্ষেত্রে কয়েকদিনে কোরআন খতমের মাধ্যমে তারাবীহ নামাজ পড়ে পুরো মাসের জন্য নামাজ শেষ করে দেয়। এভাবে রোজা নামাজ ও পবিত্র কোরআন শরীফের যে নিয়মে মুসল্লীগণ নামাজ রোজা পালন করছেন বাস্তবে ইসলামের বিধানের সাথে প্রচলিত এসব ইবাদত কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে সেখানেই মুসলিম সমাজকে সঠিকভাবে সঠিকপন্থায় চলার জন্য মানসিকভাবে ইচ্ছাপোষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই রোজা, নামাজ, ইফতার ও সেহেরী রোজাদারের ব্যক্তি পরিবার ও সামাজিকভাবে উপকারে আসবে। কোরআন নাযিলের মাস রমজান মাসে বাস্তবে কোরআনের তেলাওয়াত ,তাফসীর, অনুশীলন ও অনুকরণ বৃদ্ধি করতে পারলেই পূণ্যতায় ভরপুর হবে মুসল্লীদের জন্য এ মাস।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply