১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:২০/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১০:২০ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে কবর ও শ্মশানের জমি দখলের অভিযোগ

     

 

হিমেল তালুকদার,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিরুদ্ধে কবর ও শ্মশানের জমি দখল করে আম বাগান করার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার ভোমরাদহ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ও তাঁর ৭ চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ঐ ইউনিয়নের কুশারীগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা।

এ ঘটনায় কুশারীগাঁও গ্রামের ২৮৬ জন বাসিন্দা গত ৩১ জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কবর ও শ্মশানের মাঝখানে একটি ‘কাপনিহার’ পুকুর রয়েছে। এই পুকুরের চারপাশের জমিগুলোতে ভুট্টা ক্ষেত ও আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কুশারীগাঁও গ্রামের ৮৭ জেএল নম্বর ও ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৮৪০, ৮৪১, ৮৪২, ৮৪৪ ও ৮৪৭ দাগের প্রায় ৮০ বিঘা জমি ‘কাপনিহার’ পুকুরের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় মুসলমানদের গোরস্থান এবং উত্তর ও পূর্ব পাড় হিন্দুদের শ্মশান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একই গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল মান্নান, তাঁর চাচাতো ভাই মো. লাল, সাহেদ আলী, গোলাম মোহাম্মদ, মোজাফ্ফর আলী, আবদুর রশিদ, শরিফ উদ্দীন ও আবু হোসেন মিলে পুকুরের চারপাশের গোরস্থান ও শ্মশানের প্রায় ৩০ বিঘা জমি দখল করে পুরোনো কবরগুলো ভেঙে মাটি ফেলে এবং হিন্দুদের শ্মশানের জমিতে হালচাষ দিয়ে আমগাছের চারা রোপণ করেন।

কুশারীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কুতুব উদ্দীন (৬৮) বলেন, আমাদের চৌদ্দগুষ্টি ঐ গোরস্থানে শুয়ে আছেন। শুধু আমাদের গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রামের মানুষরাও এই গোরস্থানটিকে ব্যবহার করে আসছে। অথচ আ.লীগ নেতা আব্দুল মান্নান সহ তাঁর পরিবারের লোকজন জোরপূর্বকভাবে গোরস্থানের জমিদখল করে আমগাছ রোপন করেছেন। এতে করে বাপ-দাদার আমলের ঐতিহ্য বিলীন হয়ে গেছে। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

একই গ্রামের মোবার আলী (৭০) বলেন, ঐ গোরস্থানে আমাদের পূর্বপুরুষদের কবর দেয়া হয়েছে। আর সেসব কবর ভেঙে হালচাষ দিয়ে সেখানে আমগাছ রোপন করেছেন স্থানীয় আ.লীগ নেতার পরিবার।

সুরেন্দ্র নাথ (৭৩) বলেন, কাপনিহার পুকুরের উত্তর ও পূর্ব পাড়ের ঢালের জমিগুলো শ্মশান হিসেবে ব্যবহার করছেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আজ সেই শ্মশানের জায়গা দখল করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েজন ব্যক্তি।

শাহমত আলী নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আব্দুল মান্নান ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। সে ঐ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কবর ও শ্মশানের জমি দখল করে নিয়েছে। আমরা স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি প্রদান করছে।

দবির উদ্দীন (৬৭) নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বিষয়টি নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন কবর ও শ্মশানের জমিটি সরকারি। এজন্য আব্দুল মান্নানকে জমিটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা জমিটি ছাড়েনি।

অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুকুরের চারপাশ মানে ৮৪৭ দাগের মধ্যে গোরস্থান ও শ্মশানের রেকর্ডভুক্ত জমি বাদ দিয়েই ১৫ বিঘায় আম গাছ রোপন করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। এগুলো আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি; আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে।

ভোমরাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিটলার হক বলেন, আব্দুল মান্নান ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে গোরস্থান ও শ্মশানের জমিতে গাছ রোপন করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তাঁরা শোনেনি।

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। অভিযুক্ত আব্দুল মান্নানকে জমিটি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে কথা শোনেনি।

জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল আওয়াল বলেন, স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়েছেন এ বিষয়টি আমরা মনে নেই। কেউ যদি কবর ও শ্মশানের জমি দখল করে থাকে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply