২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:০৫/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

মৌলভীবাজার ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভা

     

 

আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ, বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। ৪ মে’১৯ শনিবার সন্ধ্যায় শহরের কোর্টরোডস্থ কার্যালয়ে জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কমিটির সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ সর্বজনশ্রদ্ধেয় আইনজীবী, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাজনীতিবিদ এডভোকেট মনির উদ্দিন আহমদ(৯৬) এর মৃত্যুতে তাঁর অসমাপ্ত কাজকে অগ্রসর করার প্রত্যয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। একই সাথে ঘুর্ণিঝড় ফনীর আঘাতে উপকূল এলাকার এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮ জন নিহত এবং অসংখ্য বাড়িঘর ও ফসল, গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় নিহিতদের পরিবারবর্গ ও ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান করার দাবি জানান। সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৪৫৩ এর সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক মোঃ জামাল মিয়া, কোষাধ্যক্ষ তারেশ বিশ্বাস সুমন, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি গিয়াস মিয়া, হাসান মিয়া প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন চাল, ডাল, তেল, লবনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি; বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি; চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির ব্যয় বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী জনগণের জীবন-যাপন আজ দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। তার উপর রমজান মাস আসলে নানা অজুহাতে একটি গোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের কষ্টের অর্থ লুটপাট করে নেয়। শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী জনগণের জীবন-যাপনের এই ভয়াবহ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য দরকার বাঁচার মত ন্যূনতম মজুরি। অথচ নেই বাঁচার মত সেই মজুরি, না আছে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, দেওয়া হয় না অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি। কর্মক্ষেত্রে নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক, সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, নারী ও পুরুষের সমকাজে সমমজুরি ইত্যাদি আইনি অধিকার ব্যক্তি মালিকানাধীীন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কার্যকরী করা হয় না।
বক্তারা আরও বলেন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা মন্দা থেকে মহামন্দার দিকে ধাবিত হয়ে ইতিহাসের এক কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাজার ও প্রভাব বলয় পূণঃবন্টন নিয়ে বৈশিক অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপে বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। এর বিপরীতে শ্রম ও পূঁিজর দ্বন্দ্ব এবং নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ধনী আরো ধনী এবং গরীব আরো গরীব হওয়াসহ বিশ্বের দেশে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, করের বোঝা বৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ায় শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের আন্দোলন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বিপ্লব তথা বিশ্ব বিপ্লবের সম্ভাবনা তরান্বিত করছে। আমাদের দেশের শ্রমিক শ্রেণিকেও পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ ও বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

সভা থেকে আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ, বর্তমান বাজারদেরে সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, মাসিক বেতনের সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান, হোটেল, স’মিলসহ বিভিন্ন সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন ও সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি কার্যকর, রিকশা শ্রমিকদের উপর জুলুম-অত্যাচার বন্ধ ও ন্যায্য ভাড়ার তালিকা প্রদান, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply