ভোলায় নির্মমতার শিকার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিয়া সহযোগিতা কামনা মা -বাবার
আকতারুজ্জামান সুজন
মেয়েটির নাম লিয়া। বাবা মো. ফিরোজ মিয়া দিনমজুর। চট্রগ্রামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। মা মাফিয়া বেগম গৃহিনী।
ফিরোজ মিয়ার ৪ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে লিয়া তৃতীয়। লিয়া স্থানীয় নেয়ামতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। দরিদ্র দিনমজুর ফিরোজ মিয়ার পরিশ্রমের টাকা দিয়েই কষ্টেসিষ্টে চলে ওদের সংসার। না, চলে না, চালিয়ে নেয় ওরা।
সমাজ-সংসারের অনেক উন্নতি হলেও লিয়াদের জীবনযাত্রার কোনো উন্নতি হয় না। ওরা দরিদ্র আর নোংরা পরিবেশেই বাস করে। বাদলার দিনে চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ে। ঝড়ে ঘর ভাঙে। কোনো বেলা খেতে পায়, আবার কখনও কষ্টেশিষ্টে চলে একসময় কেটে যায়। দিনরাত পরিশ্রম করার পরও অভাব যেন ওদের ছায়াসঙ্গী। তারপরও চোখমুখে অন্ধকারে রাস্তা খোঁজার প্রাণান্তকর চেষ্টা।
দ্বীপজেলা ভোলার সদর উপজেলার ১৩ নং দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের নেয়ামতপুর হাইস্কুল সংলগ্ন গ্রামে এক দরিদ্র দিনমজুরের ৯ বছরের মেয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎতের অবৈধ নিয়ম বহির্ভুতভাবে টানা লাইনের নির্মমতার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নং বেডে চিকিৎসাধীন হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ নির্মমতার নানা তথ্য-উপাত্ত। যন্ত্রনায় ছটফট করা লিয়া কিছুক্ষণ পরপর ওর মাকে ডাকে, আর মাঝে মাঝে বলে উঠে ‘আম্মু আমার হাতটি লাগিয়ে দাও, আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।’
লিয়ার আম্মু মাফিয়া বেগম অশ্রুসজল চোখে লিয়াকে এই বলে সান্তনা দিচ্ছে যে, তোমার হাতের ব্যান্ডেজ ভালো হলে ডাক্তার পুরো হাত আবার লাগিয়ে দিবে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে লিয়ার মা-বাবা বলেন, ‘পল্লী বিদুৎ অফিসে আমরা লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছিলাম। আজ এক মাস সাত দিন হলেও তাহারা কোনো খোঁজ খবর নেননি। যদি আমরা বড়লোক হতাম, আমাদের টাকা থাকতো; তাহলে দেখতেন এত বড় একটা ঘটনা ঘটলে কত কিছুই হয়ে যেত। আজ আমরা গরীব মানুষ বলে আমাদের কথার কোন মুল্য নাই’।
বালিয়া গ্রামের নিজ বাসা থেকে মাত্র ১৫০ গজ দূরেই লিয়ার নানা মরহুম আবদুস সাত্তারের বাসা। নিজ বাসার কাছেই নানার বাসা হওয়ায় লিয়া নানা-নানীর কাছে নিয়মিত যাতায়াত করতো।
কারো বসত ঘরের উপর কিংবা বাসার ছাদ অথবা টিনের চালের উপর দিয়ে কোনো বিদুৎ লাইন টানানো অবৈধ ও নিয়ম বহির্ভুত হলেও মাত্র সাত মাস আগে লিয়ার নানার বাসার সামনের বারান্দার টিনের চালের মাঝ বরাবর উপর দিয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎ এর লাইন টানা হলে লিয়ার নানার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও লিয়ার আম্মা মাফিয়া বেগম বাধা দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সেকথা শুনেননি।
লাইন টানানোর কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে লিয়ার আম্মা মাফিয়া বেগমের অনেক বাগবিতন্ডাও হয়। এক পর্যায়ে জোরপুর্বক পল্লী বিদুৎ এর লোকজন টিনের চালের উপর দিয়ে টানিয়ে নেয়।
গত ২৭ মার্চ লিয়া সামনের বারান্দার টিনের চালে পাশে থাকা আম গাছ দিয়ে খেলার ছলে টিনের চালে উঠা মাত্রই বিদুৎস্পৃষ্ট হয়। তাৎক্ষণিক ভোলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সংশ্লিস্ট ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঠিয়ে দেন।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পরপরই লিয়ার দুই পায়ের মাঝের তিনটি করে আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। এরপর বাম হাত অপারেশন করে কব্জির উপর থেকে সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে লিয়া বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় এলাকার সমাজকর্মী মোঃ জাহিদুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে বলেন, ‘পল্লী বিদুৎ অফিসে আমি নিজে গিয়ে জানিয়েছি এ ঘটনা। বলেছি বিদুৎ লাইন সরাতে। তারা আমাদের কাছে লাইন সরাতে উল্টো সার্ভিস চার্জ বাবদ টাকা দাবি করেন’।
নেয়ামতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রিয়াজ বলেন, ‘এটি অত্যন্ত অমানবিক একটি ঘটনা। পল্লী বিদুৎ কারো বসত ঘরের উপর দিয়ে লাইন টানতে পারে না। ওরা বাধা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি পল্লী বিদুৎ এর সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। আমরা স্কুল হতে লিয়াকে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছি। এত বড় একটি নির্মম ঘটনার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও পল্লী বিদুৎ অফিস লাইনটি পর্যন্ত সরায়নি’।
এ বিষয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎ এর জিএম কেফায়েত উল্লাহর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে জানেন না বলে জানান। তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এক দিন সময় চান।
বিদ্যুতে স্পৃষ্ট মেয়েটির ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি পল্লী বিদুৎ এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলে দিয়েছি সাহায্য করতে’।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ চিত্র নতুন নয়। তারপরও আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দিকে তাকিয়ে বুক বেঁধে আছি ন্যায় বিচারের আশায়। লিয়ার ন্যায় বিচার চাইতে আমার এ লেখা নয়, ন্যায় বিচারের ব্যাপারটা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দিলাম, বরং লিয়াকে বাঁচাতে ও লিয়ার চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য চাইতে আমার এ লেখা।
লিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত সংশ্লিস্ট ডাক্তারের সাথে আলাপকালে জানা যায়, লিয়ার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। সুস্থ হওয়ার পর সাভারে অবস্থিত নিটোরে কৃত্রিম হাত লাগাতেও প্রচুর টাকার প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত চার হাজার টাকার ঔষধ বাহির হতে কিনে আনতে হয়। লিয়াকে সাহায্য করতে চাইলে নিচের এ নাম্বারে বিকাশ করতে পারেন।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা :
মোঃ ফিরোজ মিয়া (লিয়ার বাবা) মোবাইল নং(বিকাশ): ০১৭৯৪৯৬১৭৭৮
মাফিয়া বেগম (লিয়ার আম্মা): ০১৭৭০২৩৮৬৮০
