২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:১৭/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৭:১৭ অপরাহ্ণ

মশা মাছির উৎপাত ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য জীবন

     

মাহমুদুল হক আনসারী
মশা মাছির উৎপাতে শহর নগর জীবন অতিষ্ট। ছোট্ট প্রাণী এসব মশা মাছি ময়লা আবর্জনা থেকে প্রতিনিয়ত জন্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর নগর যেখানেই মানুষের আনাগোনা সেখানেই মশা মাছির যন্ত্রণা বিড়ম্বনার শেষ নেই। ছাত্র ছাত্রী থেকে বয়ো:বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষকে দিন রাত ছোট্ট প্রাণীর যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নগর শহর গ্রামের কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের মশা মাছি নিধনের কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সমাজ ও জনগণের নিরাপদ স্বাস্থ্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকলেও বাস্তবে তা জনগণ পাচ্ছে না। ঋতু পরিবর্তনে গ্রীষ্মকাল এখন শুরু হলেও বাংলাদেশের ঋতুতে বড় ধরনের জলবায়ু পরিবর্তন দৃশ্যমান। ফলে শীত গরম ঝড় বৃষ্টি কখন আসে কখন যায় জনগণ বুঝে উঠতে পারে না। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব একদিকে শিশু ও বয়:বৃদ্ধ মানুষকে কাবু করে ফেলছে। অন্যদিকে ছোট্টপ্রাণী মশা মাছির যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কেউ। কী ধনী কী গরিব, বস্তি বাসা বাড়ি, প্লাট বাড়ি, বাজার, মার্কেট, দোকান, বিদ্যালয়, মসজিদ মন্দির গীর্জা সবখানেই ওই প্রাণীর যন্ত্রণা। তাহলে কী সমাজ রাষ্ট্র প্রশাসন দায়িত্বশীল সকলেই ছোট্ট প্রাণীর কাছে জিম্মি? আরামের ঘুম হারাম করছে, শিক্ষা, আরাধনা, ইবাদত, পড়াশুনা, বিশ্রাম সবকিছুতেই যন্ত্রণায় ফেলছে ওই প্রাণী। দেশের সরকার জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও সমস্ত প্রশংসা ছোট্ট প্রাণী মশা মাছির যন্ত্রণায় ধূলিস্মাত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত ওইসব প্রাণী ধ্বংস করতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে তার বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসু পদক্ষেপ জনগণ দেখছে না। সাম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত দিন রাত মশার উৎপাত, মশক নিধনে চলতি অর্থবছরে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ সাড়ে ছয় কোটি টাকা। নেই ওষুধ ছিটানোর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা। এমন ধরনের একটি সংবাদ নগরবাসীকে উদ্বিগ্ন করে দেয়। এখানে উল্লেখ করা হয় ২০১৭ সালের ১০ জুলাই চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে পরবর্তী দুই মাস একটি কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল চসিক। এ কর্মসূচীর আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ২‘শ লিটার লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) এবং ৬‘শ লিটার এডালটিসাইড ( পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ) ছিটানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে। কিছুদিন পরেই এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মশা মাছি নিধনের বড় কোনো কার্যক্রম নগরবাসী দেখে নি। ২০১৮ সালেওষুধ ছিটানোর চেয়ে খাল নালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দেয় সিটি কর্পোরেশন। ১০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ২৫ দিনের বিশেষ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিল। ওই ২৫ দিন বিভিন্ন নালা নর্দমা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। যাতে মশা ডিম পাড়তে না পারে, তবে অতীতে প্রতিটি নগরীর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর ক্রাশ প্রোগ্রাম থাকতো সংস্থাটির। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে নালা নর্দমায় লাইট ডিজেলএবং লিমব্যাক, (লাল তেল নামে পরিচিত) নামে মশার ডিম ধ্বংসকারী তেল ছিটানোর প্রোগ্রাম দেখা যেত। সিটি কর্পোরেশনকে নগরবাষী সর্বাবস্থায় অভিভাবক হিসেবে মনে করে। কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক বাতি, সড়ক নির্মাণ মেরামত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন ও সৌন্দর্য্য বর্ধন কর্মকান্ড পরিচালনা তার দায়িত্বরই অংশ। আবশ্যকীয় কর্মকান্ডের মধ্যে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও তার উন্নয়ন অন্যতম একটি কাজ। সে হিসেবে মশক ও মাছি নিধন সিটি কর্পোরেশনের একটি ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ। বলা যায় নগরবাসীকে মশা মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। সেজন্য প্রতিবছর বাজেটে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ থাকে। বছর বছর এ বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি পায়। বাজেটের আকার বাড়লেও মশার উপদ্রব কোনোভাবেই কমছে না। অভিযোগ আছে কর্পোরেশন যন্ত্রপাতি আর ওষুধের মহড়া দিয়ে জনগণের চোখে ধূলা দিয়ে দায়সাড়া কাজ করছে বলে সচেতন জনগণ মনে করছে। মশা মাছির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নগরবাসী একাকী ভাবে কিছুই করতে পারে না। বাঁচতে হলে নগরবাসীকে মশারি এবং মশা প্রতিরোধক কীটনাশক ছাড়া রক্ষার কোনো উপায় নেই। ছোট্ট এসব প্রাণীর জীবাণু অত্যান্ত মারাত্মক এবং বিপজ্জনক। সুতারাং নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুন্দর জীবন সুরক্ষায় মশা মাছি নিধন করে নাগরিক পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত রাখা নগর প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। Í

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply