১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:৫৩/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় মিনি পতিতালয় ধ্বংসের ঘটনায় মামলা : ক্ষোভে ফুঁসছে ব্যবসায়ী ও আলেম-ওলামারা

     

 

জাহেদুর রহমান সোহাগ,রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকায় আবাসিক হোটেল ব্যবসার আড়ালে গড়ে উঠা একটি মিনি পতিতালয় ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন আবাসিক হোটেলটির মালিক মো. ইউনুচ। এতে ব্যবসায়ী ও আলেম ওলামারা ফুঁসে উঠছেন। সে দীর্ঘদিন ধরে লিচুবাগান বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ভাই ভাই বোর্ডিং নাম দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী এনে অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ি ও আলেম-ওলামারা মিনি পতিতালয়টি বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি। কয়েকবার হানা দিয়ে পতিতালয়টিতে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দিলেও সেটির মালিক ইউনুচ অদৃশ্য শক্তির জোরে কিছুদিন পর অনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় চালু করেন বীরদর্পে।

স্থানীয় মুসলিম ও ব্যবসায়িরা ঘেরাও করে কয়েকবার পতিতাসহ খদ্দেরদের ধরে পুলিশে দিয়েছেন এবং বোর্ডিংটিতে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপর মালিক ইউনুচ আর কখনো এধরণের অনৈতিক কাজ করবেননা মুচলেখা দিয়ে তালা খুললেও কয়েকদিন না যেতেই সে পুরনো কাজ চালান নির্বিঘেœ । সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে মিনি পতিতালয়টি ভেঙ্গে চুরমার করে দেন ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ি ও আলেম ওলামারা। এঘটনার পর ১১ ফেব্রুয়ারি লুটের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৭নং সিআর মামলা করেন মিনি পতিতালয়ের মালিক ইউনুছ। আদালত ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলায় লিচুবাগান ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হারুন, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ও বাজারের চৌকিদার মো. লোকমানসহ ২০/২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। অসামাজিক কাজের হোতা ইউনুচের অপকর্মের সঙ্গী স্থানীয় একটি কুচক্রীমহল ইন্ধন দিয়ে মামলা করানোর অভিযোগ তুলেছেন লিচুবাগানের ব্যবসায়ি ও আলেম ওলামারা। এতে ক্ষোভে ফুঁসছে বাজারের ব্যবসায়ি, আলেম-ওলামা ও মুসল্লিরা। গতকাল সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লিচুবাগান ব্যবসায়ি সমিতির কার্যালয়ে রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ কয়েকটি মাদ্রাসার প্রধান আলেম ও লিচুবাগান বাজারের ব্যবসায়িরা চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ও দোভাষি বাজার থেকে সব ধরণের অসামাজিক কর্মকান্ড বন্ধে যৌথ সভা করেছেন। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ব্যবসায়ি ও ধর্মীয় নেতারা অংশ নেন।

লিচুবাগান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর, সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মো. ইসহাক নুর, চন্দ্রঘোনা ইউনুছিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মৌলানা মো. মুছা, মাওলানা নুরুল আজিম, ক্বারী মো. রফিক, মাওলানা শেহাব উদ্দিন, মাওলানা আলমগীর হোসেন, ইউপি সদস্য আবদুল মালেক, ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. লোকমান তালুকদার, ব্যবসায়ি অধ্যাপক সাইফুল, মাওলানা নেজাম উদ্দিন, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. এমরান, মো. হাছান সিকদার, দেলোয়ার হোসেন, আবদুর রহিম, হাবিবুর রহমান ও সালাউদ্দিন বক্তব্য রাখেন। যৌথ সভায় চন্দ্রঘোনা এলাকায় সব ধরণের অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধে ব্যবসায়ি ও আলেম ওলামারা যৌথভাবে সোচ্চার থাকবেন। এবং অনৈতিক কর্মকান্ডের ডিপোখ্যাত ভাই ভাই বোর্ডিং পুনরায় চালু করার চেষ্টা করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। রাঙ্গুনিয়া কাপ্তাই এলাকার সর্ববৃহত্তর বাণিজ্যিক কেন্দ্র লিচুবাগান-দোভাষি বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে এধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে এলাকার পরিবেশ ও উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা নষ্ট হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানায়। এসব বন্ধে পুলিশের কার্যকর উদ্যোগ চেয়েছেন ব্যবসায়ি ও মুসল্লিরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আবাসিক হোটেল ব্যবসার নামে ভাই ভাই বোর্ডিংয়ে মিনি পতিতালয় খুলে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছেন স্থানীয় ইউনুচ। দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসলেও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ঘুমে মগ্ন রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ী ও মুসল্লিরা। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তার যোগাযোগ থাকায় সে কাউকেই পরোয়া করেননা। এসব বন্ধে প্রশাসনের কোন পর্যায় থেকে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয় আলেম ওলামা ও ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে ধ্বংস করে দিতে বাধ্য হন বলে তারা জানান। চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুন সওদাগর বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ লিচুবাগান মসজিদের পাশে বেপরোয়াভাবে অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে ইউনুচ। অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে ব্যবসায়ী সমিতি তার কাছ থেকে কয়েকবার স্ট্যাম্পে মুচলেখা নিয়েও বিরত রাখতে পারেনি। আলেম ওলামা ও মুসল্লিরা ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মো. ইসহাক নুর বলেন, এধরণের অনৈতিক ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে আলেম ওলামারা সোচ্চার রয়েছে। আর কোন ভাবেই এধরণের কর্মকান্ড চলতে দেয়া যাবেনা বলে তিনি জানান।

চন্দ্রঘোনা তৈয়বিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন ইসলাম কোন ভাবেই এধরণের অনৈতিক কাজ সমর্থন করেনা। এসব বন্ধে প্রশাসন স্থায়ীভাবে উদ্যোগ না নিলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বসে থাকবেনা।

চন্দ্রঘোনা ইউনুছিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মো. মুছা বলেন, অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ও তাদের সহযোগীতাকারী সকলেই সমান অপরাধী। কোন মামলা হামলা করে মুসল্লিদের এধরণের নৈতিক প্রতিবাদ থেকে সরানো যাবেনা।
চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, কয়েকবার স্ট্যাম্পে মুচলেখা দিয়ে সে ছাড়া পেলেও এবার ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সে পুরো এলাকাটিকে নষ্ট করে দিয়েছেন। মিনি পতিতালয় খ্যাত ইউনুচের ভাইভাই বোর্ডিং আর কোনভাবেই খুলতে দেয়া যাবেনা বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁঞা বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কয়েকবার বোর্ডিংটিতে অভিযান চালানো হয়। অসামাজিক কাজে লিপ্তদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। পুলিশের নজর রয়েছে এসব বোর্ডিংয়ে। যেকোন ধরণের অসামাজিক কর্মকান্ড কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে তিনি জানান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply