২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২৮/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৯:২৮ অপরাহ্ণ

এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী রাউজান বাসির জন্য আশির্বাদ

     

এম.দিদার কাদেরী – রাউজান 
চট্টগ্রাম জেলার উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি সুশোভিত উপজেলার নাম রাউজান। ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তির জন্ম। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মাস্টারদা সূর্য সেন, কবি নবীন সেনসহ অনেক জ্ঞানতাপস ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান রাউজান। এক সময় রাউজান নামটা ছিল একটি সন্ত্রাস এর অভয় আশ্রয়স্থল। সারা বাংলায় এমন একটি উপজেলা, যেটি সবসময় পত্রিকার পাতার শিরোনাম হত বিভিন্ন অপকর্মের। অথচ, এই রাউজানেই ছিল সিংহভাগ প্রভাবশালী নেতা। সকলেই নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতেন। সে আশ্রয়ে বলি হত আমজনতা। আমজনতা এতই ভয় ভীতিতে থাকত যে, সর্বদা নিজেকে জিম্মি মনে করত। যা ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ছিল দেশের অন্যতম সন্ত্রাসের জনপদ। এমন কোন দিন, সপ্তাহ, মাস ছিল না যখন গুলির আওয়াজ আর লাশের গন্ধ পাওয়া যেত না।
সেই রাউজান এখন শান্তি ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যেখানে গুলির আওয়াজে পাখির কলকাকলি পর্যন্ত শোনা কষ্টকর ছিল, সেখানে এখন দেশি পাখি তো বটেই, বিদেশি পাখিরও আনাগোনা বেড়েছে। এমন কোন সড়ক নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ জনপদে ও রাস্তার দুইধারে সড়ক বাতি এবং সারি সারি বিভিন্ন জাতের বৃক্ষরাজি চলার পথে মানুষের মন কাড়বে সন্দেহ নেই। যা একমাত্র ফজলে করিম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নজরদারি ও আন্তরিকতার কারণে সম্ভব হয়েছে। রাউজানকে ঘিরে তাঁর চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগিয়ে যা করেছেন, তা দেশের অন্য উপজেলাতে তো নয়ই, দেশের অন্য কোথাও হয় নি বলা চলে। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ করে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
এ কাজে রাউজানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতো বিপুল ফলদ চারা সংগ্রহ করাও একটি দুরূহ কাজ। এসব চারা তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করেন। ২০১৬ সালেও তিনি লক্ষাধিক চারা রোপণ করেন। শুধু চারা রোপণ করেই তিনি থেমে যান নি। এখন চলছে চারা গাছের তদারকি ও পরিচর্যা। যেসব স্থানে গাছ মরে যাচ্ছে, সে সবে আবার নতুন চারা লাগানো হচ্ছে। ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে রাউজানে ১০৮৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। একদিনে একটি উপজেলা থেকে এতো ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ দেশে বিরল ঘটনা। এর আগের বছরেও এদিনে রাউজানে ৫৭৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। যা একমাত্র ফজলে করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
ফজলে করিম চৌধুরীর বদন্যতায় রাউজানের সরকারি-বেসরকারি ১৮২টি স্কুলে শুরু হয়েছে স্কুল ফিডিং (দুপুরের টিফিন) কার্যক্রম। এর আওতায় সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিদিন ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। যা দেশে সর্বপ্রথম রাউজানেই তিনি চালু করেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে রাউজানকে কেউ বলে পিংক সিটি, আবার কেউ বলে গ্রিন সিটি। রাউজানের জন্য এই শব্দ দুটিও যথাযথ মনে করেন অনেকেই। কারণ, রাউজানের প্রতিটি বাড়িঘর এবং সড়কের পাশে অবস্থিত সব দোকান-পাট, দালান-কোঠা ও গাছে গোলাপি রঙ লাগানো। এছাড়া উত্তর রাউজানে এবং দক্ষিণ রাউজানে পিংক সিটি নামে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই দুই আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দ হয়ে গেছে।অপরদিকে চারিদিকে সবুজ বৃক্ষরাজির সমারোহে রাউজান হয়ে উঠেছে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ বান্ধব অনন্য উপজেলা।
ইতিমধ্যে রাউজানে স্থাপন করা হয়েছে ২৬ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাউজানের বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণ করে পাশের  উপজেলাতেও বিতরণ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি একনেক সভায় বিসিক শিল্প নগর স্থাপনকল্পে ৮০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন হয়েছে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি কলেজ ও একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রাউজানস্থ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় আইটি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা সম্বলিত একটি নথি ফজলে করিম চৌধুরী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
ফজলে করিম চৌধুরীর দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা শুরু হয় সকাল ৬টা থেকে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। নিয়ামানুবর্তিতা আর কাজে বিশ্বাস করেন তিনি। দিনরাত ভাবেন কীভাবে রাউজানের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় সে কথা। কোনো ধরনের স্বীকৃতির আশায় তিনি কাজ করেন না। মানুষের কল্যাণের জন্যই তিনি অবিরাম কাজ করে চলেছেন। রূপকথার গল্পের মত একেকটি কাজ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এদেশে আমরা অনেক মানুষকে প্রতিনিয়ত দেখেছি কিংবা দেখছি যারা বাহবা কুড়ানোর জন্য নতুবা স্বীকৃতি আদায়ের জন্য লোক দেখানো কাজ করে থাকেন। ডানে বামে চোখ রাখলেই এ ধরনের মানুষের অভাব হবে না। আবার এমনও অনেকে আছেন যারা সরকারি- বেসরকারি স্বীকৃতির কথা মাথায়ও রাখেন না। তারা সমাজ তথা দেশের মানুষের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মানুষকে ভালো ও নিরাপদে রাখার অহর্নিশ চেষ্টা করেই তারা সুখ অনুভব করেন। কিছু পাওয়ার আশায় নয়, বরং তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তা থাকে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু করার।
তবে, এ ধরনের মানুষের সংখ্যা দেশে ক্রমেই কমছে বলা চলে। অধিকাংশ শ্রেণি-পেশার মানুষের মগজে নিজের স্বার্থ এবং আখের গোছানোই যেখানে কাজ করে বেশি, সেখানো ভালো কাজ করা মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়াটা অনেকটা স্বাভাবিক। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি সত্যিকার অর্থে দেশে একটি উপজেলাকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। রাউজানকে তিনি পরিপূর্ণতা দিয়েছেন। রাউজানে আজ যানজট লেগে থাকার মত কোন সিঙ্গেল ব্রীজ নেই,নেই কোন অনির্মিত রাস্তাঘাট, নেই কোন বিদ্যুৎবিভ্রাট। রাউজানে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
পিংক সিটি গ্রীন সিটির রাউজানে ট্রেন লাইন আসছে। এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার সংরক্ষণে মা মাছের অভয় আশ্রয়স্থলও সুরক্ষা করেছেন মাননীয় এম পি মহোদয়। শত শত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করার লক্ষে এই রাউজানে সিইপিজেড গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। এ রাউজানকে উপহার দিয়েছেন ২ মেগা সিটি। রাউজান আজ অভিভাবকহীন কোন উপজেলা নয়, নয় কোন সন্ত্রাসীর অভয় আশ্রয়স্থল। রাউজানের আছে এক সুদক্ষ কর্মঠ অভিভাবক। যিনি পায়ে হেঁটে পথ চলে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা জিজ্ঞেস করে তা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। যা ইতিহাসের অনন্য নজির।
এই নেতার হাত ধরে এ রাউজান কখনো তার ঐতিহ্য হারাবে না। এই রাউজানে বিপ্লবীদের জন্ম হয়েছে যুগে যুগে। যাঁরা আজ ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। তেমনি আজ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর মতো একজন বিপ্লবী ন্যায়বান দক্ষ ও কর্মঠ নেতাকে দেখছি। রাউজান যতদিন থাকবে এ মহান নেতার নেতৃত্বে, শোভা শোভিত হবে চট্টলা। অনুপ্রাণিত হবে পরবর্তী প্রজন্ম। মাননীয় সংসদ তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী জনাব ফারাজ করিম চৌধুরীকেও তার পথের অনুসারী করে গড়ে তুলেছেন। তিনি গত বিজয় দিবসে পুরো রাউজান উপজেলায় ব্যতিক্রম ধর্মী ক্লিন রাউজান ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করেছেন। ঐদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপজেলার প্রতিটি গ্রাম, মহল্লায় যে যার অবস্থান থেকে বাড়ির আঙ্গিনায় স্কুল কলেজ মাঠ-ঘাট পরিচ্ছন্ন করেছেন। এই ক্যাম্পেইনে একাত্ম প্রকাশ করে রাউজানের গহিরা চৌমুহনী এলাকায় বেলা ১২.৩০ ঘটিকায় ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার করেন সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী। যা ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে। তরুণ রাজনীতিবিদ  ফারাজ করিম চৌধুরী এক সম্মেলনে বলেন, নিজের দেশকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখার জন্য রাউজান থেকে বার্তা পৌঁছে দিতে এই কর্মসূচীর আয়োজন। “আমি রাউজানের মানুষের কাছে একটি প্রবাদ প্রচলন করতে চাই, তা হল ডাক্তার হলে যেন রাউজানের ডাক্তার হন, ইঞ্জিনিয়ার হলে যেন রাউজানের হন, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হলে যেন এ রাউজানের হন, উকিল হলেও যেন এ রাউজানের হন। আমি চাই উচ্চ মানের শিক্ষা, বিশ্বমানের আচরণ।”- এ কথাগুলো আসলেই আমাদের রাউজানের আমজনতার মনের কথা।
মাননীয় সাংসদ আন্তর্জাতিক পদবী অর্জন করেছেন স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে।  এ মহান নেতা বিশ্ব দরবারে আমাদের বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের এ রাউজানকে আরো বেশি পরিচয় করিয়ে দিক। আরো বেশি রাউজানকে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিক। সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হোক। দীর্ঘায়ু হোক আমাদের প্রাণপ্রিয় জনাব এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী (এম পি)। যাঁর হাত ধরে পিংক সিটি রাউজান হয়েছে বাস্তবায়িত। তিনিই রাউজানের লক্ষজনতার সৌভাগ্যের দর্পণ, জনতার  প্রাণের স্পন্দন, আস্থা ও ভালবাসার উজ্জ্বল আলোর প্রদীপ ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply