২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:০৪/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:০৪ অপরাহ্ণ

স্মরণে:- আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)

     

আজহার মাহমুদ
পৃথিবীতে যুগে যুগে কতিপয় আলোকিত মহা মানব জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা জন্মের সময় মাতা-পিতার কোল আলোকিত করে ইহজগতে পদার্পণ করেন। ইন্তিকালের পূর্বে দুনিয়ায় তাদের অবস্থান হয় অল্প সময়ের জন্য। যে সময়টুকু তাঁরা দুনিয়ায় থাকেন, তাঁরা খুবই গোপন থাকেন। নিরবে নিঃশব্দে মানব কল্যাণে কাজ করে থাকেন। তাঁরা মানুষের মাঝে থেকেও সাধারণ মানুষ তাঁদের চিনতে ও বুঝতে পারেনা। তাঁরা তাঁদের আমল-আখলাক ও রাসুলের প্রেম মুহাব্বত পর্দার অন্তরালে চালিয়ে যান। পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সামাজিক কাজ কর্মে নিয়োজিত থাকলেও মূলত; তাদের সম্পর্ক থাকে গভীরভাবে আল্লাহর প্রিয় হাবিব এর সাথে। তাঁরা আশেকে রাসূল (দ.), নবী ও রাসূল পাগল, সর্বদা নবীর ইশক আর মুহাব্বাতে তাঁদের জীবন অতিবাহিত করে থাকেন। আমি এখন এমন মর্যাদা সম্পন্ন একজন আশেকে রাসূল, আশেকে ওলী ও বুজুর্গের কথা বলছি, তিনি হচ্ছেন এ যুগের ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ:)। ১৯৪০ সালে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ওয়াজেদীয়া এলাকার সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে চাঁদের আলোর মত আলোকিত করে এ পৃথিবীতে আগমন করেন তিনি। তিনি শৈশবকালে নিজ এলাকায় পারিবারিক তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ফোরকানিয়া মাদ্রাসা হতে পড়ালেখার মাধ্যমে ছাত্রজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে কোরআন হাদীসের সমস্ত সর্বোচ্চ ডিগ্রি দরছে নিযামী, দরসে হাদীস, দরসে ফিকাহ এবং আধ্যাত্মিক জগতের যাবতীয় দর্শন ও ছবক হাসিল করেন, যুগ বিখ্যাত পীর বুজুর্গদের সুহবতে গিয়ে। তিনি ছিলেন মুহাদ্দিস, মুফতী, ইমাম ও খতীব। সর্বশেষ তিনি সামাজিকভাবে উপাধি অর্জন করেন, ‘আমিরুল হুজ্জাজ’। তিনি বয়ান, বক্তব্য, শিক্ষকতার পাশাপাশি পবিত্র আল্লাহর ঘরের মেহমান হাজী সাহেবানদের খেদমতের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন, ‘শাহ আমানত হজ্ব কাফেলা’। নির্লোভ, নিরহংকারী, পরোপকারী, সমাজ সেবক আল্লাহর এ মহান ওলী ১৪ জানুয়ারী ২০১৭ সালে আত্মীয় স্বজন এবং ভক্তদের রেখে, না ফেরার জগত মহান আল্লাহ তাআলার জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হয়েছেন। মহান এ ওলীর নামাযে জানাযায় এ এলাকায় সর্ববৃহৎ মুসল্লীর সমাগম হয়। তাঁর সুযোগ্য সন্তান কাফেলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গণ মানুষের পরম দয়ালু, ত্যাগী সন্তান, যোগ্য উত্তরসূরী, আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াছিন মাহমুদ সিদ্দিকী সাহেব (দা: বা:) জানাযার নামাজে ইমামতি করেন। হুজুর ছিলেন সর্বদা পরোপকারী, মানব ও সমাজ দরদী। কোন মানুষ বা মেহমান তাঁর কাছ থেকে খালি মুুখে আসতে পারতো না। তিনি হাস্যজ্জ্বল আন্তরিকতা ভালবাসা দিয়ে মানুষ কে জয় করে নিতেন। তাঁর নিকট কেউ একবার গেলে বার বার যেতে ইচ্ছে করতো। মানুষকে তিনি সর্বোত্তম ভালবাসতেন। যে কোন ধর্ম গোত্রের হউক না কেন কোন মানুষ তাঁর নিকট থেকে খালি হাতে ফেরত আসতে দেখা যায়নি। মহান ওলামায়ে কামেল এ সাধক অন্তরালে চলে যাওয়ার ফলে গোটা এলাকায় ও কাফেলার মাঝে গভীরভাবে শোকের ছায়া নেমে আসে। মানুষ মরণশীল, সব জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সে হিসেবে কেউ আগে কেউ পরে সকল মানুষকেই মহান আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। হুজুর ওয়াজেদি (রহ.) একই নিয়মে আমাদের সম্মুখ হতে অন্তরালে চলে গেলেন। তাঁর ভালোবাসা স্মৃতি কর্মময় জীবন আমাদের সাথেই আছে। তাঁর রেখে যাওয়া মূল্যবান চরিত্র আদর্শ, তাঁর ভক্ত,ছাত্র এবং পরিবারের জন্য অমূল্য সম্পদ। মহান এ ওলীয়ে কামেল তাঁর মূল্যবান সময় ইসলাম, সমাজ ও আশেকে রাসূলের জন্য ব্যয় করে গেছেন। তিনি ছিলেন বাস্তব আল্লাহওয়ালা নবী প্রেমিক, আহলে সুন্নাত প্রতিষ্ঠায়, তাঁর প্রচেষ্টা চেষ্টা সারাজীবন অব্যাহত ছিল। আল্লাহর বাস্তব ওলীদের তিনি মন ভরে ভালোবাসতেন, ভক্তি করতেন। তাঁদের মাহফিল ও সম্মেলনে বয়ান নছিহত পেশ করতেন। সুন্নী জনতার নিকট তাঁর যথেষ্ট গুরুত্ব মুহাব্বত ছিল। তিনি যে কোন সুন্নীয়তের কর্মকান্ডে এগিয়ে যেতেন। মানব ও সমাজ কল্যাণমূলক সমস্ত ভাল কাজে তার পদচারণা ছিল সর্বাগ্রে। তিনি তাঁর পীর বুজুর্গ-ওলীদের প্রতি খুবই অনুগত ছিলেন। প্রতি মাসে হিসেব করে ওলী বুজুর্গ পীর আলেম ওলামা, মাতা-পিতা, মুরুব্বীদের পবিত্র মাজার জিয়ারত করতে তাঁকে দেখা গেছে। হুজুর ওয়াজেদীর নামে আল্লামা শাহ সুফী ছালেহ জহুর (রহ:) ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থানীয় ওয়াজেদীয়া এলাকায় মসজিদে, মক্তবে, খানেকায় তাজকিয়ায়ে জিকর মাহফিল, নাতে মোস্তফা (স.) মাহফিল নিয়মিতভাবে অব্যাহত আছে। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইসলামী চিন্তাবিদ আলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াছিন মাহমুদ সিদ্দিকী সাহেব (দা: বা:)‘র সর্বদা ফাউন্ডেশনের কর্মসূচী, কর্মযজ্ঞ তদারকী ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। হুজুর ওয়াজেদী তাঁর রেখে যাওয়া নসিহতে বলেছেন, আমার প্রিয় সন্তানদেরকে আমি সমাজসেবা, গরীব-অসহায় মানুষের খেদমাত করার জন্য রেখে গেলাম। যে সকল ধর্মপ্রাণ মুসল্লী আল্লাহর ওলীদের সান্নিধ্যে যাবেন আসবেন, তাঁরা সার্বিকভাবে সাফল্যমন্ডিত হবেন। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আল্লাহ হুজুর ওয়াজেদী (রহ:) এর ফয়েজ বারাকাত আমাদের উপর জারী রাখুন।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply