১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:৩৭/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ত্রাণ বিতরন সভায় প্রধানমন্ত্রী : আমরা ভিক্ষা করে কারো কাছ থেকে খাবার আনবোনা

     

আল-হেলাল (শাল্লা) সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি ভাটির জনপদের দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের পূণর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি এনজিও,বিত্তবান মানুষ ও রাজনৈতিক দলসমুহকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবাণ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,হাওর অঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্যই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসব বাঁধ নির্মাণে কোন ধরনের অবহেলা থাকলে তা ছাড় দেয়া হবেনা। হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলে মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসব বাঁধ নির্মাণে কোনো ধরনের অবহেলা থাকলে তা ছাড় দেয়া হবে না।
রোববার সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে শাল্লা উপজেলার শাহীদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে থাকে। হাওর এলাকা আমারও এলাকা, আমি বুঝি আপনাদের কষ্ট। এসব এলাকার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এসব এলাকায় বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। এর আগে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট চৈত্র মাসের আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওরাঞ্চল পরিদর্শন এবং কৃষকদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের জন্য সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হিলিকপ্টারটি শাল্লা উপজেলা সদরস্থ শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় হ্যালিপেড মাঠে অবতরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের ব্যবস্থা যেন নেয়া হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের হাওরগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ হাওরে যে পানি জমা হয়, এই পানিই সারা বছর নদীতে যায়। এই পানি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকার নদীগুলো যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্য নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। হাওর এলাকায় খাল কাটা হবে এবং এসব খাল যেন বেশি পানি ধারণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওর উন্নয়ন বোর্ড সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, হাওর, চর ও পাহাড়ি এলাকায় আবাসিক স্কুল করতে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কারণ এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। তাই স্কুলগুলো আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের আর কষ্ট করে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হবে না। তারা স্কুলেই থেকে যেতে পারবে। এজন্য হাওর এলাকায় আবাসিক স্কুল করে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা।
ভাটির জনপদের উন্নয়নে তার সরকারের নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,হাওর এলাকায় যাদের ঘরবাড়ী নেই তাদেরকে টেকসই বাড়ী বানিয়ে দেবো। জীববৈচিত্রের হাওর এলাকাকে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবো। কৃষকরা যাতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন সেজন্য বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ হাঁস প্রক্রিয়াজাত করণকেন্দ্র ও খাচার মধ্যে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দেবো। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পোনাও ছেড়ে দেবো হাওর ও জলাশয়ে। খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের খাদ্য যথেষ্ট আছে। খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে ও ১৫ টাকা দরে ওএমএস এর চাল দিচ্ছি। ভিজিএফ এর সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুন করবো। একটা মানুষও যাতে না খেয়ে মারা যায় সেজন্য দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবো। আমরা ভিক্ষা করে কারো কাছ থেকে খাবার আনবোনা। স্বাধীন বাংলাদেশকে জাতির জনক মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট করে গেছেন। তাই হাওরের মানুষ মনে করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে কোন মানুষ না খেয়ে মারা যাবেনা।
হাওরবাসীর খবর প্রতিটি মুহুর্তে তিনি নিচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,আজ আপনারা যেভাবে ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন আমিও তেমনি সবহারা নি:স্ব। শত্রুরা আমার বাবাকে আমার মাকে হত্যা করেছে। একই দিনে মেজো ফুফু সেজো ফুফু তাদের স্বামী ও সন্তানদেরকে খুন করেছে। আমার পরিবারের ২৮ জন মানুষ খুন হয়েছে। তাই আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। আমি ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। জাতির জনকের লক্ষ্যই ছিল যারা দরিদ্র অসহায় ও নি:স্ব তাদের পাশে দাড়ানো,তাদের মুখে হাসি ফুটানো। দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু বারবার কারাঘারে গেছেন। ২ বার তাকে ফাসি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে বাবা মা হারিয়েও আমি আপনাদের পাশে আছি। সরকার আপনাদের পাশে আছে। জাতির জনক জনগনের পাশে থাকার চিন্তা চেতনা নিয়েই দেশ স্বাধীন করেছেন। তার একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে। একটা মানুষও যেন গৃহহারা না হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দু:খী মানুষের সংগঠণ হিসেবে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাবে। কোনরকম অন্যায় দুর্নীতি অপপ্রচার বরদাশত করবোনা। আমি প্রতিনিয়ত হাওরবাসীর খবর নিচ্ছি। সকলই নেমে গেছে। মন্ত্রীরা ও দলীয় নেতৃবৃন্দরা সবই সক্রিয় আছে। আমরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছি। কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। দাম বাড়িয়ে মজুতদারী করবেন আমরা তা বরদাশত করবোনা। হাওরবাসীর জীবন জীবিকার জন্য এক ফসলকে বহুমুখী উৎপাদনে উন্নীত করার জন্য সরকার কাজ করে যাবে। বিনা পয়সায় ঘড় তৈরী করে দেবো। প্রতি জেলায় একটা মানুষও যাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত না হয় সেজন্য তাদেরকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি দিয়ে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলার সকল কর্মচারীদের এক দিনের বেতন দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করবো। সারা ভাটি অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ ৮ লাখ ৫০ হাজার কৃষক পরিবারকে পূণর্বাসনের জন্য ৩৮৫টা ত্রাণ বিতরন কেন্দ্রের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। ৪২২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হবে তখনি বরাদ্ধ বাড়ানো হবে। দলীয় নেতাকর্মীরা দেখবেন যাতে সরকারের বরাদ্ধগুলো সঠিকভাবে বন্টন হয়। দুর্যোগ লাঘবে বিনামূল্যে সার বীজ ও কৃষি উপকরণ পাবে হাওরবাসী। আপদকালীন সময়ে ঋন আদায় স্থগিত রাখা হবে। হাওর এলাকায় যত খাদ্য ও গবাদী পশুর প্রয়োজনীয় খাদ্যও সরকার দেবে। জেলার হাওর উন্নয়নের জন্য সদাশয় সরকারের চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বৎসরের বরাদ্ধকৃত ৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বৎসরের বরাদ্ধকৃত ৫৭ কোটি টাকা থেকে ২ বছরে বিল প্রদান ও উত্তোলন এবং আত্মসাৎকারী পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা,ঠিকাদার-ভাগীদার ও পিআইসির সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার পাশাপাশি দুদক ও দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করার গণদাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন,সুনামগঞ্জ ৫ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্,সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
উল্লেখ্য সুনামগঞ্জের পশ্চাৎপদ জনপদ শাল্লা উপজেলার জনসংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৪৩ জন। ৪টি ইউনিয়নে মোট ১১৬টি গ্রাম রয়েছে এ উপজেলায়। ১৭২১২ হেক্টর এক ফসলী জমি ও ৫৫০০ হেক্টর দুই ফসলী জমি রয়েছে এখানে। প্রতিবছর ৫৭,৬১৯ মেট্রিক টন চাল এখানে উদ্বৃত্ত থাকে। বাংলাদেশের হাওরবেষ্টিত এ উপজেলাটি ১৯১৯ সালে নৌÑপুলিশ থানা ১৯৪১ সালে প্রশাসনিক থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে কালনী নদীর প্রবল ¯্রােতের ভাঙ্গনে নৌ-থানাটির অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলুপ্ত হওয়ায় তখনকার বিজ্ঞজনেরা শাল্লা থানার মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও মৌজাকে বেছে নেন এবং এখানে থানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে শাল্লাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয় এরশাদ সরকারের প্রচেষ্টায়। কথিত আছে শাল্লার পূর্ব নাম ছিল শাহাগঞ্জ বাজার। শাহানূর নামে এক আউলিয়ার নামের উপর শাহাগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জনশ্রুতি আছে। শাহানুর নামের ঐ আউলিয়া আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করতেন এবং তার নামের প্রথম অক্ষর শা এবং জিকিরের ল্লা উভয় মিলে শাল্লার নামকরন হয়েছে। অপর এক জনশ্রুতিতে জানা যায়,উক্ত এলাকাটি এক সময় কালীদহ সাগরের অংশ বিশেষ থাকার কারণে এ অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে পলি ভরাটের ফলে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পাশাপাশি এখানে মৎস্য আহরনের সুযোগ থাকায় জেলেদের বসতি গড়ে উঠে। জেলেরা পানিতে জাল ভেসে থাকার জন্য সুলা ব্যবহার করতো। উক্ত সুলা শব্দ থেকে কালান্তরে শাল্লা নামকরণ করা হয়। মোঘল আমলে এটি বাণিয়াচঙ পরগনার অধীনস্থ ছিল। এ অঞ্চলে মানুষের বসবাস ৮শত বছর পূর্বে । জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে দুর্গম হাওর এলাকায় এ উপজেলাটির অবস্থান। বছরে প্রায় ৭মাস এ অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং অবশিষ্ট ৫ মাস শুকনো মৌসুম। এসময় বিস্তির্ণ হাওরাঞ্চলে দেখা যায় সবুজ ধানের সমারোহ। বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে পা ছাড়া যাওয়ার কোন উপায় নেই। জেলা শহর থেকে শাল্লা যেতে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।বর্ষায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি আর পানি,মাঝে মাঝে দেখা যায় হাওর কন্যা গ্রামগুলো পানিতে ভাসছে। ধান উৎপাদন আর মৎস্য আহরনই এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান উপজীব্য। এ অঞ্চলের কৃষি প্রধানত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি সদয় হলে মানুষ ভাল ফসল পায়। আর প্রকৃতি খারাপ হলে অনাবৃষ্টি,শিলাবৃষ্টি,কালবৈশাখী ঝড়,উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যায় চৈত্র বৈশাখ মাসে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কেড়ে নেয় মানুষের মুখের গ্রাস। চারিদিকে নেমে আসে হাহাকার। বর্ষায় ঝড়ো হাওয়া,হাওরের পানির দুর্বার ঢেউ ভেঙ্গে দেয় মানুষের ঘরবাড়ী,রাস্তাঘাট,গ্রাম-গঞ্জ। আর এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করে বেঁচে আছে এ উপজেলার মানুষ।
২০০১ইং সনের ২৪ জুন এই উপজেলায় এর আগেও এসেছিলেন তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধানের পা পড়লেও নানাবিধ কারণে এ উপজেলাটি উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েই গেছে। কথা ছিল শাল্লা থেকে আজমেরীগঞ্জের পাহাড়পুরের পাকা সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে সেটিও হয়নি। যদিও এলাকার সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির অনেক স্বপ্ন ছিল এই উপজেলাটিকে নিয়ে। স্বপ্নের বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেছেন তিনি। এলাকাটিকে মোটামোটি বিদ্যুতের আওতায় উন্নীত ও ডুবন্ত রাস্তা করা হয়েছে তারই প্রচেষ্টায়। তারপরও অনেক অসমাপ্ত কাজ তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। এর আগে এমনও বলা হতো শাল্লায় নেই আল্লাহ। রেলগাড়ী এটা খায় না পড়ে। চাল ডাল তেল লবন ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির সাথে উপজেলাবাসীর কোন যোগাযোগ ছিলনা। এরকম একটি চির অবহেলিত ভাটির জনপদে ৩০ এপ্রিল ২০১৭ইং দ্বিতীয়বারের মতো পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি ছোট্র উপজেলায় একজন প্রধানমন্ত্রীর দুইবারের সফর এটা যেকোন এলাকাবাসীর জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আসলে বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা প্রমাণ করতে চান দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যেকোন ক্ষুদ্র এলাকা ও প্রান্তিক জনপদকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কাউকেই বঞ্চিত রাখা যাবেনা। মূলত এনীতিই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নীতি। সরকারের প্রতি আনুগত্য থাকলে প্রশাসনও সে পথ অনুসরণ করবে। আর এই পথচলার মধ্যে দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। তাছাড়া রাজধানীতে বসে নয় হাওরের উন্নয়ন করতে হলে যেতে হবে হাওরবাসীর কাছে। শুধু বক্তৃতায় নয় কথা ও কাজে প্রমাণ করতে হবে উন্নয়ন।
ছায়া,ভান্ডা, বড়বন, ভেড়ামোহনাসহ চেপটি হাওর,ধারাইন নদী ও কুশিয়ারা নদী বেস্টিত শাল্লা উপজেলার বাহারা, হাবিবপুর, আটগাঁও ও শাল্লা ইউনিয়নে ২৭ হাজার পরিবার রয়েছে। ফসলহানির পর থেকে শাল্লাবাসীর ঘরে ঘরে চরম অভাব ও দারিদ্রতা বিরাজ করেছে। জনপদের ঘরে ঘরে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রানের জন্য শাল্লা উপজেলা সদরে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভীড় করেন। চরম অভাব ও অনটনের মধ্যে চরম বিপাকে শাল্লাবাসী। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে যেন প্রান ফিরে পেয়েছেন তারা। আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শাল্লাবাসীর মৌলিক দাবিগুলো পুরন করবেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply