১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:০২/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ১০:০২ অপরাহ্ণ

‘নয়ন সম্মুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝে নিয়েছো যে ঠাঁই’

     

লক্ষণ কান্তি দাশ
চট্টল বীর খ্যাত আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমার মনের অব্যক্ত কিছু কথা, অনুভূতি এবং চাচার প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনে আমার এই লেখা। কোন দিন লেখালেখি করিনি। তবুও সাহস করে কিছু লিখতে বসলাম। এই লিখাটি পড়ে কোন রকম ভাষাগত কিংবা অন্য কোন ভুল ত্রুটি থাকলে সম্মানিত পাঠকগণ ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
বিগত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিঃ রোজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক-জনতা, মেহনতি দিনমজুর, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী যাদের সুখ- দুঃখের শেষ অবলম্বন, লক্ষ কোটি ভক্তের প্রিয় মানুষটি আজ অনেক দূর। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই এ কথা ভাবতেই কষ্ট হয়। আপনার আর্শিবাদ আর অনুপ্রেরণায় জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছি।
যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে ততদিন তিনি এই চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের কাছে অমর হয়ে থাকবেন। সময়ে -অসময়ে, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে যে কেউ তাঁরই দ্বারস্থ হয়েছেন, উপকার করতে পেরেছেন কিংবা পারেন নাই এটা বড় কথা নয়। অন্ততপক্ষে তাঁর আথিতেয়তা থেকে কেউ বাদ পড়ে নাই। তাঁর আথিতেয়তার এমনও দিন গেছে খাওয়ার পরও খেতে হয়েছে। তিনি মানুষকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন। যেভাবে তিনি চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবেসেছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন ঠিক একইভাবে চট্টগ্রামের মানুষও তাঁকে ভালোবাসার সম্মান দেখাতে কুন্ঠবোধ করেনি। জানাজায় মানুষের ভীড় আছড়ে পড়েছিল অন্য ভীড়ের উপর। জনগণের অফুরন্ত ভালবাসার ভেলায় ভাসতে ভাসতে সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলে চশমা হিলের চশমা বাজারের পারিবারিক গোরস্থানে । শুধু মানুষ নয় প্রকৃতিও কেঁদেছে তাঁর মহাপ্রয়াণে। তিনি ছিলেন সীমার মাঝে অসীম। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার তথা বাংলাদেশের রাজনীতির এক তারকা পুরুষ, নন্দিত রাজকুমার, সেই কিশোর বয়সে ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করে আমৃত্যু ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে। যার বুক জুড়ে ছিল বঙ্গবন্ধু আর এ দেশের মানচিত্র। আর হৃদয় জুড়ে ছিল আওয়ামী লীগ এবং জনগণ। আর কখনো তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত হবে না দুঃখিনী বাংলা মায়ের কথা। আর কোন দিন তাঁকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হবে না রাজপথে।
গ্রাম থেকে যখন প্রথম চট্টগ্রাম শহরে আসি তখন জীবন সংগ্রামে টিকে থাকাটা আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। চাচার স্নেহ, ভালবাসায় আজ আমি একটি নির্দিষ্ট স্থান করে নিই। দুর্গাপূজায় ও চৈত্র সংক্রান্তি তে আমাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন সাধ্যমত নতুন কাপড় চোপড়ও কিনে দিয়েছেন। খাবার টেবিলে নিজের ছেলের সাথে বসিয়ে খাইয়েছেন। এইসব কথাগুলো যখন মনে পড়ে তখন খুবই কষ্ট লাগে।
চাচা আমাকে পিতার সমতুল্য ভালবাসা দিয়েছেন। তাঁর ভালবাসটি ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ১৯৯৬ সালে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে কর্পোরেশনে ষ্টেনো পদে পরীক্ষা দিলাম তাঁরই সহযোগিতায় আমার চাকরি হয়। বর্তমানে আমি জেলা জজ আদালতে কর্মরত। আমার জীবনে একটা অবস্থান করে দিলেন। আমার মা কে নিয়ে বিয়ের সময় দাওয়াত দিতে গেলে আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। সবার মনের কথা জানতেন, বুঝতেন এবং সাধ্যমত উপকারও করতেন।
চট্টগ্রামের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভাইদের জন্যও তাঁর আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। বিশেষ করে দূর্গাপূজা, জম্মাষ্টমী ও শিব চর্তুদশী উপলক্ষে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি মেয়র থাকাকালে মঠ, মন্দির, গীর্জায় ও অনেক অভূতপূর্ব পরিবর্তন করেছেন। তাঁর সাথে এই সম্প্রদায়ের মানুষের ছিল গভীর সম্পর্ক। তাঁর স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি গোলকধাম (কষ্ণ) মন্দির ও একটি বৃদ্ধ নিবাস করার। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি স্বার্থের কারণে তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। আমি আশা রাখব, তাঁর সেই স্বপ্নটা যেন তাঁরই যোগ্যতম উত্তরসূরী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) ভাই সেটা করবে। আপনি যেভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এবং মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঠিক আপনার আদরের সন্তান নওফেল ভাইও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চট্টগ্রাম জেলা সহ জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী বাকলিয়া-৯ নং আসনে এমপি পদে মনোনীত প্রার্থী। আপনি বেঁচে থাকলে আপনার সন্তানের সাফল্য দেখে সবচেয়ে খুশি হতেন। বিকল্পহীন মৃত্যু তা হতে দেয়নি। তবুও আপনি আপনার পুত্রের প্রেরণায় উৎস হিসেবে অন্তরে বা চেতনায় আছেন। অনুভব বা প্রেরণায় আপনি যুগের পর যুগ বা শতাব্দির পর শতাব্দী বেঁচে থাকবেন। আমি দোয়া করি আপনার প্রজন্ম আপনারই মত যুগ যুগান্তর ধরে আশাহীন মানুষের মাঝে আশা, শক্তিহীন মানুষের মাঝে শক্তি, ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে অন্ন ও নিরাশ্রয়ের আশ্রয় এর একমাত্র ঠিকানা হোক।

নশ্বর পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে বিলীন মহীরুহ
মৃত্যুর অমোঘ নিয়তি ডিঙাতে পারে না কেউ। একদিন ফুরায় জীবনের সব লেনদেন। ইতিহাসের নিষ্ঠুর আঙ্গিনায় পুরনো হয় ক্যালেন্ডারের পাতা। জাগতিক নিয়ম মেনে মানুষকে বিদায় বলতে হয় বর্ণিল পৃথিবীকে। এক সময় যে পৃথিবীকে দু’হাত ভরে দেয়ার চেষ্টায় দিন কেটেছে তাঁর, যে পৃথিবীর ধূলো-বালি জলের সঙ্গে মিশে একাকাকর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সেই পৃথিবীই পর হয়ে যায় এক মুহুর্তে। কিন্তু পৃথিবীকে এতোটা স্বার্থপর ভাবার কোন কারণ নেই। পৃথিবী ঠিকই আপন মহিমায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে সন্তানের কর্ম আর জীবনের মহত্বের মাপকাঠিতে। অজস্র মহৎ কাজের সোনালী ছটায় অম্লান হয়ে একদিন পার্থিব পাঠ শেষ হলো বীর চট্টলার সিংহ পুরুষ, চট্টগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, ৩ (তিন) বারের সফল মেয়র, আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর মহাপ্রয়ানে। মানুষের কল্যাণে আজম্ম করে যাওয়া মহান মানুষটি চলে গেলেন ঠিকই, রেখে গেছেন প্রাণপ্রিয় সহধর্মিনী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সভাপতি আমার শ্রদ্ধেয়া চাচীমা হাসিনা মহিউদ্দিন, ২ (দুই) ছেলে ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ও জনাব বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, ৩ (তিন) কন্যা, একমাত্র জামাতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সেলিম চৌধুরী সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী। তাঁরাও সাধ্যমত আপনার মত মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ আপনার সাফল্যের জোছনা ছড়ানো রূপালি কথকতায় বছরের পর বছর মুগ্ধ হবে মানুষ। যতদিন চট্টগ্রাম, ততদিন এক ধ্রুব সত্যের জ্বলজ্বলে নাম প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব, এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই মহান মানুষটিকে। পরম করুণাময় তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply