১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৫৯/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ২:৫৯ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার-৩ কক্সবাজার-রামু আসনে এমপি কমলের পক্ষে কলাগাছ!

     

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার-রামু) আসনে বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না দেয়ার গুঞ্জনে কক্সবাজার শহর সহ বিভিন্ন স্থানে কলাগাছ রোপন করছে কমল সমর্থকরা। রোববার বিকাল থেকে রামু, কক্সবাজার সদর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে মানুষের হাতে হাতে কলা গাছ দেখা গেছে। রোববার কমলের পক্ষে কলাগাছ রোপন ছাড়াও কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতানেত্রী। শ্লোগানে তাদের দাবী ‘এই আসনে কোন ধার করা প্রার্থী চাই না, এখানে অনেক যোগ্য আওয়ামী লীগ নেতা আছে’।
এই আসনের বর্তমান সাংসদ গত শনিবার তার ফেসবুক ওয়ালে একটি আবেগ ভরা ‘দুর্ভাগ্য আমার’ স্ট্যাটাস দেন। এনিয়ে সর্বত্র তোলপাড়ের পাশাপাশি তার কর্মী সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের আশা ছিল এবারও এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল নৌকার টিকেট পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশা নিরাশার চলে দোল খাচ্ছে সবাই।
এমপি কমল তার স্ট্যাটাসে বলেন, আবারও মনোনয়ন দৌড়ে মনে হয় পিছিয়ে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে জীবনের প্রথম বারের মত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। অল্প বয়স, পরিচিতির স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মনোনয়ন বিবেচনায় অগ্রাধিকার ছিল-এই আসনটি বিএনপি-জামাতের, যাকে দিক না কেন হারবে।
তার স্ট্যাটাসে তিনি আরো বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য জনাব মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে তিনি ২য় বারের মত পরাজিত হয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন। আর সাইমুম সরওয়ার কমলকে দিলে পরাজিত হলেও ভবিষ্যতের জন্য তৈরী হওয়ার সুযোগ পাবেন। সে চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলেন।
৯ দিন পর কয়েকজন বিশিষ্ট দলীয় নেতাদের তদবিরে জননেত্রী আবার জনাব মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেন। উনার হাতে ১১দিনের মত নৌকা ছিল। ইত্যবসরে নৌকার উপর নৌকা আসাতে মাঠ পর্যায়ে প্রকাশ্যে বিভক্তি হল। শ্রদ্ধেয় মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর ঋণ খেলাপীতা ধরা পড়লো। আমাকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হলো।
আমি তখন আকর্ষনহীন ডামী প্রার্থী হয়ে গেলাম। যা হওয়ার তা হলো। অতীতের ৪০ হাজার ভোটের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮৭ হাজার পেলেও প্রথম বারের মত হেরে গেলাম। আমার ভাগ্য খারাপ!
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জরিপে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও জনাবা কানিজ ফাতেমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। সপ্তাহখানিক গণসংযোগ করে প্রার্থী বাছাই পর্বে তিনি আবার ঋণ খেলাপী ও বিল খেলাপী হয়ে গেলেন। অবশেষে আমাকে আবার ২নং প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হলো। নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে-জাতিসংঘে-কোরিয়া পার্লামেন্টে ব্যক্তিগত পারদর্শিতা ও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন এবং জনগনের পাশে দাড়ালেও আমার কিছু কাছের-দূরের মানুষেরা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিল না।
আমার পিতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে মাঝে মধ্যে এখনো স্বপ্নে দেখি। একদিন স্বপ্নে তিনি বলছেন“তুমি যত কাজ করো তত সুনাম তারা হতে দেয় না।” আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ।
এই স্ট্যাটাসের পর তার কর্মী ও সমর্থকরা আরো নিরাশ হয়ে পড়েন।
কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী বলেন, বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বিগত ৫ বছরে শত শত মানুষের ঘর বেঁধে দিয়েছে। ৮ হাজারের চেয়ে বেশী মানুষকে চাকুরী দিয়েছেন। মসজিদ, মন্দির, রাস্তা ও সেতু উন্নয়নে কাজ করেছেন। বন্যার সময় গত ১০ বছর ধরে মানুষকে সেবা দিয়েছেন। কিছু চিহ্নিত চক্র এমপি কমলের মানবতা মেনে নিতে না পারায় তার বার বার বিরোধীতা করে আসছে।
এদিকে, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের মনোনয়ন নিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ, সদও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যেও দ্বিধা বিভক্তি রয়েছে। এছাড়াও এমপি কমলের পরিবারেও রয়েছে বিরোধ।
সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গত ১মাস আমি স্বস্থিতে নেই। আমরা ৭ ভাই বোনের মধ্যে ১ ভাই ১ বোন ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালে যেমন করে আমার বিরোধীতা করছিল এবারও তার চেয়ে শতগুন বেশি করে মান, সম্মান ইজ্জত ভুলে গিয়ে আমাকে মরন কামড় দিল। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগের স্তুপ জমা করে। অথচ জনমত জরিপে তাদের কোন পয়েন্ট ছিল না। সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তাদের নাম নাই। এ আমার বড় দুর্ভাগ্য!
অবশেষে নানা নাটকীয়তার পর মহাজোটের ভোট সঙ্গী জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে কক্সবাজার সদর-রামু আসনে মহাজোটের প্রার্থী করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ৯ আসনে (কোতোয়ালী) আসনে নৌকার মাঝি করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে কক্সবাজার সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে নওফেলের কপাল খুললো। আর কপাল পুড়লো বর্তমান কক্সবাজার সদর-রামু আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাইমুম সরওয়ার কমলের।
শনিবার রাতে জাপা-আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যকার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া চূড়ান্ত হওয়া চট্টগ্রামের আরো দুটি আসন নিয়েও চলছে দেন দরবার।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply