১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:৩০/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

ঠাণ্ডা মিয়ার গরম কথা (২০৩) ড. কামাল হোসেন সমীপে

     

মাননীয়,

     গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সমীপে,

শ্রদ্ধেয়

কামাল ভাইজানরে,

গরম গরম কথার শুরুতে আমার লাখ কোটি সালাম জানিবেন। আশা করি আল্লাহ মালিকের অপার মহিমায় ভালো থাকিয়া ভিশন ও মিশন কায়েমের লক্ষ্যে নানান ফর্মূলা তৈরী ও বাস্তবায়ন করিয়া মহা- সুখেই আছেন। আমিও গ্রাম বাংলার এক মফস্বল শহরে থাকিয়া সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংকট এইসব ভাবিয়া ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্ছার মতো খাইয়া না খাইয়া বাঁচিয়া আছি। গেল বারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমীপে লিখিবার পর এইবার আপনার সমীপে লিখিব বলিয়াছিলাম বলিয়াই লিখিতেছি বলিয়া রাগ করিবেন না বরং শত ব্যস্ততার পরও গরম কথাটুকু পড়িয়া দেখিবেন ও যাহা প্রয়োজন তাহা করিবেন এবং ভুল হইলে নিজ গুনে মাফও করিয়া দিবেন।

ভাইজানরে,

আপনি হলেন, একজন দুনিয়াখ্যাত ভিজ্ঞ আইনজীবি।বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্হ সহচর ও বঙ্গবন্ধুর সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।হালে চলিত মাসে দেশ ও দেশের বাহিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচিত  ও সমালোচিতদের আপনি প্রথম কাতারের একজন।আজীবন নৌকার জন্য কাণ্ডারী ছিলেন । হক – ভাষানী -বঙ্গবন্ধুর নৌকার জন্য জীবনভর লড়াই সংগ্রাম করা এক মহান ব্যাক্তি আপনি। নিজেও আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতীক লইয়া রাষ্ট্রপতি  প্রার্থী ছিলেন।যদিও ওইসময় বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রার্থী মরহুম আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।তখনো আপনি আওয়ামী লীগের হইয়া কাজ করিয়াছিলেন। এখন অবশ্য সাত্তার সাহেব বাঁচিয়া নাই, নাই দুই দলেরই নীতি আদর্শও। ব্যাপক ফারাকও তৈরী হইয়াছে দুই বৃহৎ দলে । সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান  তৃণমূলে কাজ না করিয়াও শুধুমাত্র হাসিনা ও খালেদার ইচ্ছাই দুইজনই দুই দলের বড় মূল হোতা।তবে এই ক্ষেত্রে তারেক রহমানের চেয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা রহিয়াছে বেশী।তবু কেমন জানি মনে হয় এইসব কিসের আলামত? যাক, সেইসব কথা।

ভাইজানরে,

আপনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা রাষ্ট্রীয় কোন পদ-পদবি পাওয়ার ইচ্ছা আপনার নেই।কিন্তু আপনার বিপক্ষের লোকজন বলিতেছে নির্বাচন করিলে আপনি একজন ইউপি সদস্যের মতো ভোটও পাইবেন না।অবশ্য জোটের পক্ষের বক্তব্য তাহারই বিপরীত। একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আপনি কাজ করছেন । সাত দফা দাবিতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।” অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন আমরা কী জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছি? জবাবে বলতে চাই, আমাদের জোটে জামায়াত নেই। তারেক রহমানের সঙ্গেও আমরা কোন ঐক্য করিনি। ঐক্য হয়েছে বিএনপির সঙ্গে, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে নয়।এইসব আপনারই কথা।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের দাবি সংবিধানসম্মত নয়, সংবিধানের বাইরের কোনো দাবি মানা হবে না। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কামাল হোসেন বলেন, তার (ওবায়দুল কাদেরের) বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। ‘ঐক্যফ্রন্ট হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’- সরকারি  দলের নেতাদের এই বক্তব্যের জবাবে আপনি বলেছেন, রাজনীতিতে ‘চক্রান্ত’ ‘ষড়যন্ত্র’ এসব ভাষা কম ব্যবহার হওয়া ভালো।

ভাইজানরে,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুচিবোধ বজায় রাখিয়া আপনাকে লইয়া কথাবার্তা বলা শুরু করিয়া দিয়াছেন।তিনি বলিলেন,‘কামাল হোসেন সাহেবকে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেন না, এত নীতি কথা বলেন, উনি তো সংবিধানের প্রণেতা। সংবিধানের যিনি প্রণেতা, বাহাত্তরের সংবিধানটা তো তিনি তৈরি করেছিলেন, তাই না? বাহাত্তরের সংবিধানের কোনো কোনো অনুচ্ছেদে তিনি এখন আপত্তি করেন কী কারণে? এটা কি তার গণতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা, তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কার কী ধরনের ভূমিকা, কী ধরনের বাচনভঙ্গি, এমনকি মেয়েদের প্রতি যে কী ধরনের কটূক্তি করতে পারে, সে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে। এই যে ‘এ গাছের ছাল, ওই গাছের বাকল’ সবমিলে একটা তৈরি হয়েছে, তো, যাক তারা ভালো কাজ করুক, সেটাই চাই। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করে না। বরং একটা হয়েছে, এটাই ভালো। এখানে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, এখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদতদাতা, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, এমনকি যারা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, তারা মিলেই কিন্তু এক জায়গায় হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে দেখে, সেটাই বড় কথা।আপনি ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন কাদের সাথে, বাংলাদেশে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করার ফলে যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার নেতৃত্বে হচ্ছে বিএনপি দল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বের হয়েছে বিদেশ থেকে।তাহাদের সাথে আপনার ঐক্য! তিনি বলিলেন‘এ গাছের ছাল, ওই গাছের বাকল মিলে জাতীয় ঐক্য’ ।

ভাইজানরে,

ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ও মওদুদ আহমেদরা সুচতুরভাবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করিয়া দিয়াছেন বলিয়া আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দলের অন্যতম মুখপাত্র  ড. হাছান মাহমুদ এমপি মাঠে ময়দানে বলিতেছেন। ‘অশুভ শক্তি বিএনপি, জামায়াত ও ড. কামাল গংদের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র চলিতেছে বলিয়া তাহার অভিযোগ রহিয়াছে।ড. হাছান মাহমুদ বলিলেন বিএনপির রাজনীতি এখন জিয়া পরিবারের হাতে নাই।এটা এখন আপনারই হাতে।খালেদা জিয়াকে মাইনাস করিতে পারা এটাই আপনার সফলতা।জাতীয় ঐক্য মেয়াদ উত্তীর্ণ রাজনীতিবিদদের একটি ঐক্য মন্তব্য করে সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলিলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ রাজনীতিবিদদের একটি ঐক্য হচ্ছে জাতীয় ঐক্য।

খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে দিয়েছে এবং  বিএনপির রাজনীতি এখন মির্জা ফখরুল, ড. কামাল হোসেনদের হাতে চলে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আর মির্জা ফখরুল সাহেবরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুচতুরভাবে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে দিয়েছে। যেই ঐক্যের নেতা হচ্ছে ড. কামাল হোসেন। তারা নাকি সারাদেশব্যাপী সমাবেশ করবে। সুতরাং সমাবেশের নামে এবং সমাবেশের আড়ালে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয় তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এর দাঁতভাঙা জবাব দিবে।
বিএনপি এখন কাগজে বাঘ আর ড. কামাল হোসেনও বর্ষাকালের কোলাব্যাঙ মন্তব্য করে হাসান মাহমুদ বলিলেন, ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া নেতৃত্বে ছিল। “যখন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জোস ছিল তখন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। এখন খালেদা জিয়া জেলে, তারেক রহমান পলাতক আর তাদের নেতাকর্মীরা গর্তের ভেতরে। আর ড. কামাল হোসেনের আওয়াজ আছে কিন্তু শক্তি, সামর্থ্য নাই। কোলাব্যাঙ যেমন আকারে অত্যন্ত ছোট কিন্তু আওয়াজ অনেক বড়। ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এরাও হচ্ছে বর্ষাকালের কোলাব্যাঙ তাদের আওয়াজ বড় কিন্তু কোনো কিছু করার শক্তি, সামর্থ্য তারা রাখে না।”

ভাইজানরে,

আর যাই হোক, আপনার আশ্রয় পাইয়া বিএনপি এখন নির্বাচনমুখী হইয়াছে।এইটা কাজে লাগাইবেন।সুষ্ঠু ভোটে যাহারাই জিতিয়া আসুক তাহা হইবে দেশ চালানোর যোগ্য নেতৃত্ব।সেই লক্ষ্যেই কাজ করুন।ভয়ভীতি ছাড়া নির্বাচন উৎসবমূখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলিতেছে দেশবাসী। শেখ হাসিনার তোয়াজকারীরা অতি উৎসাহী সেইসব কুবুদ্ধি দিয়া থাকেন তাহা শেখ হাসিনা নিজে সেইসব বুঝেন বলিয়াই তিনি শক্ত হাতে দেশ চালাইতেছেন। নিজ বুদ্ধিতে কাজ চালাইয়া যান। আজ আর না।আপনার মঙ্গল ও সুস্বাস্হ্য কামনায় ।

                                                                                                                                       ইতি

                                                                                                                              আপনারই বিশ্বস্হ

                                                                                                                                গ্রন্হনা ম. আ. হ

তারিখ ২৩ -১০-২0১৮

আগামী সংখ্যায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন সমীপে ঠান্ডা মিয়ার গরম কথা (২০৪) সম্প্রচার করা হইবে।গত সংখ্যায় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা সমীপে  ঠান্ডা মিয়ার গরম কথা (২০৩) সম্প্রচার করা হইয়াছে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply