২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১১:৪৭/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

জােড়াতালি দিয়েই চলছে সোনাহাট রেল সেতুতে যান চলাচল

     

 

সাইফুর রহমান শামীম
কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থল বন্দরে যাতায়তের জন্য একমাত্র পথ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সোনাহাট রেল সেতুটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুর ষ্টিলের পাটাতন মরিচা ধরে ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় যানবাহন আটকা পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক বিভাগ বিভিন্ন সময় সেতুর পুরাতন পাটাতন জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচল উপযোগী করে তুললেও বন্দরের ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকায় যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর উপর বৃটিশ আমলে নির্মান করা হয় সোনাহাট রেল সেতু। ১৮৭৯ সালে তৎকালীন নর্দান বেঙ্গল রেলওয়ে ও আসাম রেলওয়ের যোগাযোগের জন্য এ সেতুটি তৈরী করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেতুটি মেরামত করে সড়ক সেতু হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সোনাহাট স্থল বন্দর চালু হলে শুরু হয় এ সেতুর উপর দিয়ে পাথর ও কয়লা বোঝাই ভারী যান চলাচল। এতে করে সেতুটি ঝুকিপুর্ন হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে গত ৯ জুন সোনাহাট বন্দরটি পুর্নাঙ্গ স্থল বন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু সড়ক পথে সারা দেশের সাথে যোগাযোগের জন্য দুধকুমার নদের উপর বিকল্প সড়ক সেতু নির্মাণ না করেই ঝুকিপুর্ন রেল সেতুর উপর দিয়ে চালানো হচ্ছে বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সোনাহাট ঝুকিপুর্ণ রেল সেতুর উপর দিয়ে পন্য আনা নেয়া করা ট্রাক ড্রাইভার আমান আলী জানান, সেতুটি ঝুকিপুর্ন জেনেও জীবনের ঝুকি নিয়ে মাল বোঝাই গাড়ি নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যতই সাবধানে গাড়ি চালাইনা কেন যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সোনাহাট রেল সেতু সংলগ্ন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জানান, সেতুটি একে বারের ঝুকিপুর্ণ। এক মাথায় গাড়ি উঠলে অন্য মাথা কেপে উঠে। আর প্রায় সময় ব্রীজের পাটাতন ভেঙ্গে ফুটো দিয়ে গাড়ির চাকা আটকে যায়। তখন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পাইকের ছড়া এলাকার অটো চালক মকুবল জানান, এই সেতুর একপ্রান্তে গাড়ি উঠলে অন্যদিকে অপেক্ষা করতে হয় কতক্ষনে সে গাড়ী গুলো পাড় হয়। তারপর অপর মাথা থেকে গাড়ি ছাড়া হয়। এছাড়াও অটো নিয়ে সেতু পাড় হতেও ভয় লাগে কখন দুর্ঘটনা ঘটে। এখনে নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগে আছি।
সোনাহাট স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ সভাপতি সরকার রকীব আহমেদ, প্রায় ৪ বছর আগে সোনাহাট স্থলবন্দরটি চালু হয়। এই স্থল বন্দরে অন্য কোন সমস্যা নেই। শুধু একটি সমস্যা হলো এই স্থলবন্দরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত যে রেল সেতুটি আছে সেটিই। এই সেতুটির উপর দিয়ে আমাদের গাড়ী পাড়াপাড় করতে হয়। এখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে ৩ টনের বেশি লোড গাড়ী সেতুর উপর দিয়ে পাড়াপাড় করা যাবে না। আবার ট্রাকের মালিক ও ড্রাইভাররা বলছেন ৫টন বা ৭টনের কম লোড নিলে তাদের পোষায় না। সেক্ষেত্রে আমি সরকারের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি। এই রেল সেতুর পাশে একটি সড়ক সেতু যাতে দ্রুত নির্মাণ করা হয়। তাহলে এই স্থল বন্দরের প্রধান বাঁধা দুর হয়ে যাবে। উন্নয়ন ঘটবে এই বন্দরের।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশরী আমির হোসেন জানান, দুধকুমরের উপর প্রায় সাড়ে ৪মিটার লম্বা রেল সেতুটি উপর দিয়ে সোনাহাট স্থল বন্দরের ভারী যান-বাহন যাতায়াত করছে। এই যান বাহনগুলো যাতে তাদের ওজন কমিয়ে চলাচল করতে পারে সেই ধরনের নির্দেশনা দেয়া আছে। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে আমরা সভা করে এটা নিশ্চিত করেছি। এই রেল সেতুর পাশে একটি সড়ক সেতু নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন এই রেল সেতুর পাশে সড়ক সেতু নির্মাণের। ইতিমধ্যে ২শ ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় পাশের অপেক্ষা আছে। এটি পাশ হলে রেল সেতুর পাশে একটি ৬শ ৪৫ মিটার সড়ক সেতু নির্মাণ করা হবে।
দেশের সম্ভাবনাময় সোনাহাট স্থল বন্দরের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা ঝুকিপুর্ন এ রেল সেতুটির পাশে দ্রুততম সময়ে একটি সড়ক সেতু নির্মান করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply