২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ২:২৯/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:২৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে মারা যায় একটি শিশু

     

বিশ্বে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে ১৫ বছরের কম বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কম এমন দেশের শিশুদের তুলনায় যেসব দেশে শিশুমৃত্যুর হার সবেচেয়ে বেশি সেসব দেশের শিশুদের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকি ৬০ গুণ বেশি।
ঢাকা, নিউইয়র্ক, জেনেভা, ওয়াশিংটন ডিসি একযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপ যৌথভাবে করা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত শিশু মৃত্যুর নতুন হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ২০১৭ সালে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাত্ প্রতি ৫ সেকেন্ডে মারা গেছে ১ জন শিশু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব মৃত্যু হয়েছে প্রতিরোধযোগ্য কারণে। এই শিশুদের একটি বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে তাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে, যা সংখ্যায় ৫৪ লাখ। মৃত্যুবরণকারী এই শিশুদের মধ্যে নবজাতকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।
সাম্প্র্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল প্রতি এক হাজারে ৩২ জন। ১৯৯০ সালে মৃত্যুর এ সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ। এসব শিশুর অর্ধেকই জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়। নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে জাতীয় নবজাতক ক্যাম্পেইন অন্যতম। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি নবজাতকের জন্য ব্যয়-সাশ্রয়ী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ও বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে। ২০১৮ -এর সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরকার জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি শুরু করে যা জরুরি কার্যক্রমগুলোকে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সম্প্রসারণ করে। একই সময়ে আরেকটু বেশি বয়সে অর্থাত্ ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে কমে ১০ লাখের নিচে নেমে এসেছে।
৫ বছরের কম বয়সী বেশির ভাগ শিশুর মৃত্যু হয় জন্মকালীন জটিলতা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, নবজাতকের সংক্রমণজনিত সমস্যা ও ম্যালেরিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য অথবা নিরাময়যোগ্য কারণে। তুলনামূলক ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে আঘাত, বিশেষ করে পানিতে ডুবে যাওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে।
এই বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পার্থক্যও বিদ্যমান- ইউরোপের তুলনায় সাব-সাহারান অঞ্চলে একই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ গুণ বেশি। ২০১৭ সালে ২৫ লাখ শিশু তাদের জীবনের প্রথম মাসে মৃত্যুবরণ করে। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর তুলনায় সাব-সাহারান আফ্রিকা অথবা এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জীবনের প্রথম মাসেই মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল ৯ গুণ বেশি। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্য শিশুদের তুলনায় নবজাতকদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি ১৯৯০ সাল থেকে বেশ ধীরগতির। এক্ষেত্রে এমনকি দেশের ভেতরেও বৈষম্য রয়েছে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার গড়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এছাড়া মাধ্যমিক বা আরও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করা মায়ের সন্তানের তুলনায় অশিক্ষিত মায়ের সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।
ইউনিসেফের তথ্য, গবেষণা ও নীতিমালা বিষয়ক পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি বলেন, জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মৃত্যু হবে। শিশুদের জীবন রক্ষায় ১৯৯০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন হয়েছে, কিন্তু তারপরও লাখ লাখ শিশু এখনও মৃত্যুবরণ করছে কেবল তারা কারা এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করছে— এ কারণে। ওষুধ, পরিষ্কার পানি, বিদ্যুত্ ও টিকার মতো সহজ সমাধান নিশ্চিত করতে পারলে আমরা প্রতিটি শিশুর এ মৃত্যু রুখে দিতে পারি।
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply