১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:৫৯/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৯:৫৯ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর ঈদ কেমন ছিলো? -আজহার মাহমুদ

     

বঙ্গবন্ধু তিনি যেমন মহান, তেমনি দয়ালু। বাংলার মানুষের জন্য এবং এই সোনার বাংলার জন্য তার ত্যগ ছিলো অবিস্মরনীয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ মানুষের মত ছিল না। তাই অন্য সবার মতো তিনি ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। কারণ জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কারাগারে অতিবাহিত করেছেন। তাঁর জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন কেটেছে কারাগারে। ফলে বঙ্গবন্ধুর অনেক ঈদ কেটেছে জেলের ভেতর। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করার সুযোগ তিনি কমই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে জেলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থেতিনি লিখেছেন তার সেই কারাগারের ঈদ নিয়ে। তিনি কারাগারে বসে বসে ভাবতেন ‘পূর্ব বাংলার লোক সেইদিনই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারবে, যেদিন তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে, এবং দেশের সত্যিকার নাগরিক হতে পারবে।’ কারণ তিনি ঠিকই জানতেন, পরাধীন জাতি কখনও ঈদের আনন্দ করতে পারে না। উক্ত গ্রন্থে ঈদুল আযহার কথাও আছে।সেদিন ছিল ২২ মার্চ, বুধবার। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আজ কোরবানির ঈদ। গত ঈদেও জেলে ছিলাম। এবারও জেলে। বন্দি জীবনে ঈদ উদযাপন করা একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলা চলে।বারবার আপনজন বন্ধু-বান্ধব, ছেলেমেয়ে, পিতামাতার কথা মনে পড়ে।…আমি তো একলা থাকি। আমার সাথে কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে থাকতে দেয় না। একাকী কি ঈদ উদযাপন করা যায়?’ যদিও এমন বেদনার মধ্য দিয়েও বঙ্গবন্ধুকে ঈদের দিন পালন করতে হয়েছে। ১৯৬৭ সালের দু বছর পর ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর ঈদ পালন করতে তাঁর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন। সেসময় তাঁর মা সায়েরা খাতুন অসুস্থ ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন কবি ও লেখক নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত তাঁর অসুস্থ মায়ের সঙ্গে ঈদ পালন করার জন্য স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যান। তেত্রিশ মাস একনাগাড়ে কারাবন্দী থাকার কারণে বিগত ছয়-ছয়টি ঈদ উৎসবের আনন্দ থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বঞ্চিত থেকেছে। অনেকদিন পর বঙ্গবন্ধু পরিবারে ফিরে এসেছে ঈদের আনন্দ। ঐ পরিবারের ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের মানুষের মনে। রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বেশিরভাগ সময় কেটেছে জনতার সাথে। সেজন্য পরিবারকে তিনি ভালোভাবে সময় দিতে পারেননি।তাই যেবার তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করতেন সেবার তার পরিবারে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত। স্বাধীন বাংলাদেশে ঈদ-উল আজহা উদযাপন নিঃসন্দেহে ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশে তখন স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে। বাঙালিরা ভেঙে ফেলেছে শত বছরের বন্দীর শেকল। যেহেতু সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে, দেশ গড়ার কাজ চলছে তাই পুরোদমে।তাই ১৯৭২ সালের ঈদ ভিন্ন মাত্রা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হাজির হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে বাণী দিয়েছিলেন তাতে লিখেছেন, ঈদুল আজহা আমাদের আত্মত্যাগের আদর্শ শিক্ষা দেয়। বাংলাদেশের সাহসী মানুষ দেশকে স্বাধীন করার জন্য সম্পদ ও রক্ত দিয়ে চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি চরম আত্মত্যাগের মনোভাব নিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করার আহ্বান জানান। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ঈদ। সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিবেশীদের সাথে ঈদ-আনন্দ ভাগ করেনিতেই বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর পিতার মত সাধারণভাবে ঈদ উদযাপন করতে পছন্দ করেন। জননেত্রীর ঈদের সময় কাটে তাঁর পরিবার-পরিজন ও বাংলার জনগণের সাথে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী হয়েও ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেন বাংলাদেশের জনগণ ও দলীয় কর্মীদের মাঝে। পিতার আদর্শই গ্রহণ করে দেশ পরিচালনা করছেন তিনি। কদিন আগেই আমরা ঈদুল আজহা পালন করলাম। সেই আনন্দকে সামনে রেখে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ বঙ্গবন্ধু কেবল জনগণকে আত্মত্যাগ করতে বলেননি, তিনি নিজেও সারাজীবন আত্মত্যাগ করে গেছেন। সেই শৈশব থেকে আমৃত্যু সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকেবিলিয়ে দিয়ে গেছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply