১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:০৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৪:০৯ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর ডাকেও  গণভবনে যেতে পারছেন না মুরাদনগরের  তৃণমূল নেতারা

     

 

পাঁচবারের গোল্লা মারা প্রার্থীর আবারো মনোনয়ন কারসাজি

মো. শরিফুল আলম চৌধুরী, মুরাদনগর (কুমিল্লা)  থেকে: কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার পাঁচবার দলের মনোনয়ন পেয়ে একবার প্রত্যাহারসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারবার হেরেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে অনুগতদের নিয়ে পূর্বেকার কমিটিকে না জানিয়ে মুরাদনগরের ২২ ইউনিয়নেই গোপনে ‘পকেট কমিটি’ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় রেজুলেশন প্যাডে হাজিরা স্বাক্ষর নিয়ে তিনি মনোনয়নের পক্ষে ব্যবহার করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৯১ সালে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর), ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনার আংশিক), ২০০১ সালে কুমিল্লা-২ এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে কুমিল্লা-৩ আসনে প্রার্থী হন। গত ২০১৪ সালে কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহারসহ সব নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানান, গত ১৮ মার্চ জাহাঙ্গীর অনুগতদেও নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভা হয়। ওই সভায় দলের রেজুলেশন প্যাডে উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটিতে ভূয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে হাজিরা স্বাক্ষর নেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতের ‘হরতাল ও নৈরাজ্যেকে’ প্রতিহত এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নের ব্যাপারসহ কোন ইউনিয়নে কোনো নতুন কমিটি করা নিয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

নেতাদের অভিযোগ, সভার পরে কোনো এক সময় প্রায় ৮০ জন নেতার স্বাক্ষরিত ওই রেজুলেশনে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়নের সুপারিশের কথা লেখা হয়। সম্প্রতি ওই ভূয়া অজানা ইউনিয়ন কমিটিসহ রেজুলেশনটি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে তৃণমূলের নেতারা ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন।

উপজেলার ধামঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেম চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর ডাকে গণভবনে যাওয়ার কার্ড না পাওয়ায় ক্ষোভের সহিত বলেন, ‘আমাদেরকে না জানিয়ে ওই ভূয়া ইউনিয়ন কমিটি কবে হয়েছে কে করেছে তার কিছুই জানিনা, তবে যেহেতু নতুন করে মুরাদনগরের কোন ইউনিয়নে কমিটি বিলুপ্ত কিংবা নতুন কমিটি গঠন হয়নি তাই আমি আজও সভাপতি পদে বহাল আছি। এবং রেজুলেশনে বর্ধিত সভার হাজিরা স্বাক্ষরও করিনাই। কারো মনোনয়নের সুপারিশে স্বাক্ষর করাতো কোন প্রশ্নই আসেনা।’

পূর্বধইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম মুরাদনগরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এখন দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা শুরু করেছেন।’

আজ শনিবার সকালে প্রধানিমন্ত্রীর ডাকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে গণভবনে যাওয়ার কার্ড না পেয়ে হতাশ বাবুটিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক মুন্সি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম ফের মনোনয়নের আশায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকদেও সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।’ দারোরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহাজাহান চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে আবারও মনোনয়ন দিলে দলের চরম ভরাডুবি ঘটবে।’ আন্দিকুট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া রেজুলেশন নিয়ে প্রতারণারসহ কাউকে না জানিয়ে অতি গোপনে তার অনুগতদের দিয়ে ইউনিয়নে পকেট কমিটি করার জন্য জাহাঙ্গীর আলমের বিচার দাবি করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী দত্ত বলেন, ‘২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীর আলমের অপকর্ম মুরাদনগরসহ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তাঁর কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ভিপি জাকির হোসেন বলেন, ‘উপস্থিত নেতারা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্বাচনে মনোনয়নের জন্যই রেজুলেশনসহ কমিটির প্যাডে স্বাক্ষর করেন। বিরোধীরা এখন মিথ্যা কথা বলছেন।’

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ও ইউনিয়নের সব বর্ধিত সভার কার্যপ্রণালি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দিতে হয়। সে অনুযায়ী তা কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে।’ এ ক্ষেত্রে নিজের কারসাজিতে প্রতি ইউনিয়নে ভূয়া কমিটি সৃজন করে তৃণমূলের প্রকৃত নেতাকর্মীদেরকে গণভবনে যাওয়ার পাস কার্ড না দেয়ার অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, দলীয় প্রধান ও দলের গঠনতন্ত্র উপক্ষো করে যারা রাতের আধারে ভূয়া ইউনিয়ন কমিটি সৃজন করে প্রকৃত তৃণমূল নেতাকর্মীদেও সাথে প্রতারনা করছে বুঝতে হবে দলে তাদেও আর কোন ভিত্তি নেই। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বলবো তারা যেনো শৃঙ্খলা মেনে বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করায়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply