অন্যের খবর পৌঁছে দেয়া পত্রিকা হকার শহিদের খবর কেউ রাখেনি
মোঃ আউয়াল হোসেন পাটওয়ারী
পত্রিকা হকার শহিদ। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা বিক্রি করতেন উপজেলা শহরে। মেঘ-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে ভোর বেলা বের হতেন পাঠকদের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দিতে। অন্যের খবর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার নেশাও ছিলো অপ্রতিরোদ্ধ। শরীরের ক্লান্তি, অসুস্থ্য থাকলেও দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা পাঠকদের হাতে তুলে দেয়াটাই তার কাছে ছিলো অনেক দায়িত্ব। রামগঞ্জ উপজেলার পত্রিকার প্রবীন হকার শহিদ উল্যাহ আজ মৃত্যু পথযাত্রী।
আর্থিক সংকটে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। দুই বছরের অধিক সময় আগে জানতে পারেন শরীরে যক্ষা রোগ। যক্ষা মুক্ত হওয়ার পর পেটে টিউমার ও লিভারক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার গত কয়েকদিন পূর্বে পাগলা কুকুড়ের কামড়ে আহত হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকা বিক্রি। অর্ধহারে-অনাহারে বসতঘরে উঠানে চেয়ারে বসে সময় কাটাচ্ছে।
সুত্রে জানায়, রামগঞ্জ পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির শহিদ উল্যাহ ১৯৯১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে রামগঞ্জ এনায়েত উল্যার মালিকানাধীন নিউজ কর্নার পত্রিকার এজেন্সির মাধ্যমে পত্রিকার হকার জীবন শুরু করে। পরে পত্রিকার কমিশন দিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের শেষ দিকে সহিদ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রামগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। দীর্ঘ কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পরও রোগ শনাক্ত না হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে জানতে পারেন শরীরে যক্ষা রোগ । ব্র্যাকের দেওয়া ঔষধে যক্ষা রোগের চিকিৎসা চলা অবস্থায় পেটে টিউমার ও লিভারে ক্ষত দেখা দেয়।
পরিবার ও সন্তানদের জন্য গচ্ছিত সকল সম্পদ দিয়ে নিজের চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু অসুস্থ্য শরীর নিয়ে সহিদ গত ২৭ এপ্রিল পত্রিকা বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে পাগলা কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। পরে দ্রুত হাসপাতালে গেলে ডাক্তার কুকুরে কামড়ের ইনজেকশন দেয় এবং অন্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। এতে শহিদ আরো অসুস্থ্য হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী।
হকার শহিদকে কোন হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগীতা করতে চাইলে মোঃ শহিদ উল্যা, হিসাব নং- এসবি-৯২৬৯, রুপালী ব্যাংক, রামগঞ্জ শাখা,লক্ষ্মীপুর।
বসতঘরের সামনে চেয়ারে বসা সহিদ ভাঙ্গা-ভাঙ্গা কন্ঠে হকার শহিদ বলেন, আমার যেকোন সময় মৃত্যু হবে। স্ত্রী ও ৩ সন্তানের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। পত্রিকার হকার বলে কেই সহযোগীতার হাত প্রসারিত করে না। পত্রিকার হকারের ২৮ বছর জীবনে কতো মানুষ টাকা মেরে খেয়েছে। পত্রিকা ক্রয় করেও মাসের পর মাস বকেয়া টাকাও পরিশোধ করেনি। যার কারনে এজেন্টের নিকট ঋণগ্রস্থও রয়েছি।