২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:১৬/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৯:১৬ অপরাহ্ণ

কোটিপতি জাহাঙ্গীর লাখপতি হাসান দুইজনই প্রার্থী

     

 গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি 
আসন্ন ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বৈধ ৯ মেয়র প্রার্থী রয়েছে।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সব থেকে বেশি সম্পদশালী। সম্পদের বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিএনপি প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার (হাসান সরকার)। এরা দু’জনই ব্যবসায়ী।

এছাড়াও এই সিটিতে শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের নাম রয়েছে প্রার্থীদের নামের তালিকায়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

হলফনামার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা প্রচার ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের তথ্য জেনে ভোট দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, কেউ হলফনামায় তথ্য গোপন করলে এবং তা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৫৩৬ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি। অপরদিকে দেনা রয়েছে ৮ কোটি টাকা। রয়েছে দুটি অস্ত্র, গাড়িসহ আসবাবপত্র।
নির্বাচনী প্রচার ও অন্য কার্যক্রমে তিনি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে কর্মীদের পেছনে ব্যয় করবেন ১০ লাখ টাকা। আইন অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ব্যয় ৩০ লাখ টাকা ও প্রার্থীর ব্যক্তিগত ব্যয় দেড় লাখ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল কোন ব্যক্তির আয় দেখানো হয়নি হলফনামায়।

আরো দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিদ্যালয় এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অতীতে দ্রুতবিচার আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়েছিল তার বিরুদ্ধে; যার মধ্যে একটিতে খালাস ও অপরটি থেকে অব্যহতি পেয়েছেন।

হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলম বার্ষিক আয়ের মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ ধারায় অর্জিত দেখিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ধারায় অপ্রদর্শিত টাকা সাদা করার বিধান রয়েছে। এছাড়া কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দেড় লাখ টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া পান ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলম তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। তিনি অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিট এবং জেডআলম এপারেলস লিমিটেড নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যদিও অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিটে তার শেয়ার রয়েছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও জেডআলম এপারেলস এ শেয়ার মাত্র ২০ হাজার টাকা।

তার সম্পদের মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকার। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের দুটি গাড়ি, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র রয়েছে।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫৩৬ শতাংশ জমি। এর মধ্যে কৃষি জমি ১ হাজার ৪৯৫.১৫ শতাংশ, অকৃষি জমি ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং আবাসিক/বাণিজ্যিক জমি ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জমি বিক্রয়ের জন্য বায়না বাবদ ৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে তার।

এছাড়া নির্বাচনী পরিকল্পার বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারে ১ লাখ ১৪ হাজার পিস পোস্টার ছাপাবেন। ১০টি নির্বাচনী ও একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প স্থাপন, ১০ লাখ লিফলেট বিতরণ ও ৫৭টি পথসভা করবেন। এতে সর্বমোট ব্যয় হবে ৩০ লাখ টাকা।

বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া দু’জনই সম্পদশালী। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বিএনপি প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ অনেক কম।

হলফনামায় হাসান উদ্দিন সরকারের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ও তার উপর যারা নির্ভরশীল, তাদের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৪ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে দুজনের ৫৩ তোলা স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে।

এছাড়া হাসান সরকার তার নিজের নামে একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান এবং স্ত্রীর নামে এক নালা বন্দুক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হলফনামায়। স্থাবর সম্পদের মধ্যে হাসান সরকারের নামে ৫৯৮ শতাংশ ও তার স্ত্রীর নামে ৩০৫ শতাংশ জমি রয়েছে। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি ৪ তলা বাড়ি। হাসান সরকারের ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

হলফনামায় আরো দেখা গেছে, হাসান উদ্দিন সরকার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে একটি ও টঙ্গী থানায় ১৯৭৪ সনের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা চলমান রয়েছে। দুটি মামলার একটি বিচারাধীন ও আরেকটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ দুটি মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালে তার নামে তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটিতে বেকসুর খালাস ও একটি খারিজ হয়েছে।

হাসান সরকারের বার্ষিক আয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া কৃষি খাত থেকে ৬৩ হাজার, বাড়ি/দোকান/অন্যান্য ভাড়া ৫ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ও ব্যাংক সুদ বাবদ ১১ হাজার ৫২৬ টাকা আয় রয়েছে তার।

হাসান সরকারের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে তার নগদ টাকা সাড়ে ৩ লাখ ও ব্যাংকে জমা ৬০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০১ টাকা। রয়েছে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। এছাড়া তার ২১ তোলা স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ৫০০ দশমিক ৫৩১ শতাংশ কৃষি জমি, যার দাম দেখিয়েছেন ৯৪ হাজার ৪৬৪ টাকা। এছাড়া রয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতক জমিসহ ৫টি দোকান, ৯০ শতাংশ জমি ও স্থাপনা, টঙ্গীতে সেমিপাকা ৩২টি রুমের ঘর এবং একচালা টিনসেড। অপরদিকে হাসান উদ্দিন সরকারের স্ত্রীর সম্পদের মধ্যে নগদ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৮ হাজার ৫৪২ টাকা রয়েছে। এছাড়া তার (স্ত্রী) নামে ২৯০০ বর্গফুটের ৪তলা বাড়ি রয়েছে; যার দাম ৭৭ লাখ ৮৪ হাজার ১৮৮ টাকা। এছাড়া ৩২ তোলা স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও একনালা বন্দুক রয়েছে।

হাসান সরকার নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ২০ লাখ টাকা করবেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা তার স্ত্রীর কাছ থেকে নেবেন। নির্বাচনী প্রচারে তার পরিকল্পনায় রয়েছে- ৩ লাখ পোস্টার ছাপানো, দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প, একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প, ৫ লাখ করে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ, ঘরোয়া বৈঠক ও সভা, ৩৪২টি ডিজিটাল ব্যানার, ১৭১টি পথসভা এবং টেলিভিশন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার।

রাশেদুল হাসান রানা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’র এ প্রার্থীর আয় ও সম্পদ দুটোই কম। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। তবে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৫ বিঘা জমি রয়েছে।

ফজলুর রহমান ইসলামী ঐক্যজোটের এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরায়ে হাদিস। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা নেই এবং অতীতেও ছিল না। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। রয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি। তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকা এজেন্সির পরিচালক হিসেবে সম্মানী ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ওয়াজ-মাহফিল থেকে সম্মানী ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার, আসবাবপত্র, ২৭ শতাংশ অকৃষি জমি ও নির্মাণাধীন বাড়ি।

মোঃ নাসির উদ্দিন ইসলামী আন্দোলনের এ প্রার্থী তাকমিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৩৮ হাজার ২৮০ টাকা, ব্যাংকে জমা ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০ টাকা ও আসবাবপত্র। এছাড়া ১৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে।

মোঃ সানাউল্লাহ স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর কামিল পাশ। পেশায় শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারাধীন। অতীতের তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমান প্রায় ৯ লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ১ বিঘা, অকৃষি জমি ৪ বিঘা ও একটি বাড়ি।

কাজী মোঃ রুহুল আমিন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এ প্রার্থী স্নাতক পাস। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আগে তিনটি মামলায় আসামি থাকলে তা থেকে খালাস পেয়েছেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

ফরিদ আহমদ স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। পেশায় চাকরিজীবী। বার্ষিক আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, সোয়া ২ কাঠা কৃষি জমি ও একটি বাড়ি। তার কোনো দায়দেনা নেই।

এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন এর হলফনামার ফটোকপি অস্পষ্ট থাকায় তার দেয়া তথ্য প্রকাশ করা হলো না।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৪ এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ মে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply