তরুণদের ইন্টারনেটের অপব্যবহার নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন-আমি বলতে চাই, প্রতি বছর জনপ্রশাসনে আমরা মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার লোককে নিয়োগ দিতে পারি, এটা সংখ্যায় একেবারেই নগন্য। এর চেয়ে বেশি চাকরিপ্রার্থীকে কিন্তু আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই চাকরি দিতে পারি। তরুণদের বলব, সরকারি চাকরির দিকে এত না ঝুঁকে আইটি সেক্টরের দিকেও ঝুঁকতে পারো।”
বাংলাদেশ অ্যাসোসিসেয়শন অফ কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)- এর আয়োজনে বিপিও সামিটের তৃতীয় এই আসরে সহযোগিতা দিচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “প্রতি বছর আমরা এখন ৩০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগামী ২০২১ সালে আমরা এক লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এই তরুণরা জনশক্তিতে পরিণত হবে। বাক্য ও বেসিস এই তরুণদের মধ্যে থেকে কর্মী বাছাই করে নিতে পারে।”দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবাও নিশ্চিত করব। যে কেউ যেকোনো স্থানে বসে আইটি সেক্টর থেকে উপার্জন করতে পারবেন।”
কিছুদিন আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার উদ্বোধন করেন জয়। তার আশা, এ বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা (ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি) পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
দ্রুত গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করায় বিপিও খাত থেকে বাক্য প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জয়।
তিনি বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে এক লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে বিপিওতে। এই খাতে দশ বছর আগে যেখানে আমরা মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করতাম, সেখানে এখন আমরা ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতে শুরু করেছি।”
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই সরকার প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণের কথা ভাবছে বলে জানান তিনি।
“সোশাল মিডিয়ায় তরুণদের আসক্তি ক্রমেই বিপদের হয়ে উঠছে। বিশাল শক্তির আধার এই তরুণরা, সমাজের প্রতি তাদের অনেক দায়িত্বও রয়েছে। তাদের ইন্টারনেট আসক্তি দেখে এখন আমাকে বলতে হয়, ফেইসবুক এখন একটি ফেইকবুক।”ইন্টারনেটে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য ও মন্তব্য প্রচারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানান জয়।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বসে গোটা ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যদি এ মুহূর্তে সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দেই, তো সবাই আমাদের তীব্র সমালোচনা করবেন। আর এটা ঠিকও হবে না। একটা ওয়েবসাইট বন্ধ করব, আরো দশটা ওয়েবসাইট দশ মিনিটে তৈরি হয়ে যাবে। একটা ফেইসবুক পেইজ বন্ধ করে দিলে আরো দশটা ফেইসবুক পেইজ তৈরি হয়ে যাবে।
“ইন্টারনেটে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য যা সমাজে সংঘাত ডেকে আনে, তাকে কোনোভাবেই মুক্তবাক বলা যাবে না। এটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যাবে না।”
ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ডিজিটাল অ্যাক্টের খসড়া তৈরি করে ফেলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো একটি গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, মিথ্যা অপপ্রচারকে আমরা কোনোভাবেই গ্রাহ্য করব না।
গোটা বিশ্বের মতো আমরাও সাম্প্রদায়িক সংঘাতপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান করছি। ডিজিটাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে কেউ যেন সংঘাত ছড়াতে না পারে সেজন্য আমরা আরো কড়া অবস্থানে যাচ্ছি।”
তিনি তরুণদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক থাকারও অনুরোধ করেন।
মন্ত্রী ও প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী ও সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।সম্মেলনে ৪০ জন স্থানীয় বক্তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ২০ জন আন্তর্জাতিক বক্তা; সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে ১০টি সেমিনার।