মৌলভীবাজার ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের বর্ধিত সভা
বর্তমান বাজারদেরে সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। মহান মে দিবস পালনের প্রেক্ষিতে ১৩ এপ্রিল’১৮ শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের কোর্টরোডস্থ কার্যালয়ে জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের বর্ধিত সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির প্রবীণ প্রবাসীনেতা আফজাল চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৪৫৩ এর সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা হরিনারায়ন হাজরা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ-এর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘ রেজিঃ নং চট্টঃ২৮৬৪ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিউর রহমান, স’মিল শ্রমিক সংঘ সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ ছালিক মিয়া ও কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির নেতা রমজান আলী, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী, চা-শ্রমিকনেতা, বিপ্লব মাদ্রাজী পাশী, শামুয়া উরাং, নারায়ন গোড়াইত, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন শেরপুর আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ ইকবাল হোসেন, তারেশ বিম্বাস সুমন, রিকশা শ্রমিকনেতা কিসমত মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, মোঃ জসিম উদ্দিন প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন মহাজোট সরকার ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’-এর জাতিসংঘের স্বীকৃতির বিষয়কে সামনে নিজেদের সাফল্য বলে ব্যাপক ডামাঢোল চালায়। কিন্তু দেশের আপামর শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনতার জীবনে এই তথাকথিক উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। বরং উন্নয়নশীল দেশভূক্ত হওয়ার কারণে বৈদশিক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায়র তার বোঝা টানতে হবে মেহনতি জনতাকে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী সংসদে অবগত করেছেন উন্নয়নশীল দেশভূক্ত হওয়ার কারণে জাতিসংঘসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থায় বাংলাদেশের প্রদত্ত চাঁদার হার বাড়বে। বিগত অর্থবছরের মাথাপিছু ঋণ ৪০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার টাকা হওয়ার কথা বললেও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় বর্তমানে মাথাপিছু ঋণ ৪৯ হাজার টাকায় দাড়িয়েছে। এভাবে দেশকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেললেও সরকার এই সত্যকে আড়াল করে তথাকথিত উন্নয়নের সাফাই গেয়ে চলছে। এবারের মহান মে দিবস আমরা এমন এক সময় পালন করতে যাচ্ছি যখন আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাজার ও প্রভাব বলয় পূণঃবন্টন নিয়ে বৈশিক অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপে বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। এর বিপরীতে শ্রম ও পূঁিজর দ্বন্দ্ব এবং নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ধনী আরো ধনী এবং গরীব আরো গরীব হওয়াসহ বিশ্বের দেশে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, করের বোঝা বৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বেঁেচ থাকা দায় হয়ে পড়ায় শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের আন্দোলন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বিপ্লব তথা বিশ্ব বিপ্লবের সম্ভাবনা তরান্বিত করছে।
সভায় মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, লালপতাকার র্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে পালন করার সিদ্ধান্তে পাশাপাশি মাসব্যাপী মে দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে শ্রমিক সভা ও সমাবেশ করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভা থেকে বর্তমান বাজারদেরে সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, মহান মে দিবসে সবেতনে স্বর্বাত্মক ছুটি, মাসিক বেতনের সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান, হোটেল, স’মিলসহ বিভিন্ন সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন ও সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি কার্যকর, চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা নির্ধারণ, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।