২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:২৫/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

বাড়িতে ফিরেছে তোফা-তহুরা অসুস্থ্য দু’বোন !

     

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
বাড়িতে ফিরেছে দেশব্যাপী আলোচিত কোমরে জোড়া লাগানো জমজ দু’বোন তোফা-তহুরা। ঢাকায় টানা সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামের নানার বাড়ীতে ফিরেছে তারা। কিন্তু বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে দু’বোন প্রতিনিয়ত অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। প্রায় সময়ে গরমে কান্না করছে তারা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তোফা-তহুরাকে দেখতে এসে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগকে তোফা-তহুরার বাড়িতে দ্রুত বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বললেও সাড়ে পাঁচ মাসেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ কাজের অগ্রগতি করেছে মাত্র টেন্ডার পর্যন্ত। তোফা-তহুরা দীর্ঘদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষে ছিল। যার কারনে তারা গরম সহ্য করতে পারে না। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে তাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ওই সময় ইউএনও গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে তাদের বাড়ীতে ৫০ ওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ লাগিয়ে দেয়। বর্তমানে সেটিতে বেশিক্ষণ চার্জ থাকেনা। তাই প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করে দুবোন।
বাড়ীতে ফিরলেও নিয়মিত তোফা-তহুরার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনূর ইসলাম। তাদের দুজনকে ভালো রাখতে সবসময় মুঠোফোনে মা শাহিদা বেগমকে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
মা শাহিদা বেগম বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন তোফা-তহুরার যেন কোন অযত্ন না হয়। সবসময় যেন ভালো থাকে, সেভাবে রাখতে হবে। কিন্তু বাড়ীতে ফেরার পর ওরা দুবোন গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছে। বাড়ীতে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের কোন লোকও আর আসেনা । গরম থেকে রেহাই পেতে সব সময় দুবোনকে কোলে নিয়ে বাহিরে ঘোড়া ঘুড়ি করতে হয়।
সুন্দরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, তোফা-তহুরার বাড়ীতে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ডিজাইন ও টেন্ডার করা হয়েছে। এরপর ওয়ার্কঅর্ডার, কনস্ট্রাকশন, লাইন টানার কাজ করা হবে। তারপরই ওই বাড়ীতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে। কাজ সম্পন্ন করতে তিন মাসেরও বেশি সময় লাগবে।
তোফা-তহুরার চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনূর ইসলাম জানান তোফা-তহুরা এখন ভালো আছে। তহুরার প্র¯্রাবের ইনফেকশন ছিল। তাকে চিকিৎসা দেওয়া আছে। এই মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ছাড়া তাদের দুজনকে ডেভেলপমেন্টাল থেরাপির জন্য সাভার সিআরপিতে (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে) পাঠানো হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন তাদের ওজন সাত কেজি করে রয়েছে। ওজন ১০ কেজি হওয়ার পরে তাদের আবারো অপারেশন করা হবে। এখন থেকে প্রতিমাসে চেকআপের জন্য তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার আসতে হবে। এর আগেই যদি অসুস্থ্য হয়, তখন আগে আসবে।
দেশব্যাপী আলোচিত এই জমজ শিশু তোফা-তহুরার এমন অপারেশন দেশে এইবারই প্রথম। তাই যে কোন উপায়ে তাদের দুইজনকে সুস্থ্য রাখা চিকিৎসকদের জন্যও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামে নানার বাড়িতে তোফা ও তহুরার জন্ম হয়। মিড়িয়ায় বিষয়টি আলোচিত হলে প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদেরকে ৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর তাদের প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়।
২০১৭ সালের ১ আগষ্ট তাদেরকে আলাদা করার জন্য করা হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। পরে সুস্থ হলে সে বছরেরই ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফেরে তোফা-তহুরা। আবারও তহুরা অসুস্থ্য হলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর তহুরাকে ঢাকায় নেওয়া হলে সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ীতে ফেরে জমজ দুবোন তোফা-তহুরা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply