২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৩৬/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া এখন কুড়িগ্রামের চরেও

     

 

নুরবক্ত আলী, উলিপুর
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের বদৌলতে পাল্টে গেছে গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা। তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া এখন কুড়িগ্রামের বিভিন্ন দুর্গম চরেও। সুবিধা বঞ্চিত মানুষ স্বল্প খরচে অনেক উন্নত সেবা এক স্থানেই পাচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে।
জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌছে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয় থেকে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসুচীর ইউএনডিপি) প্রশাসক মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরী ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করেন। যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত। প্রতিটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে কম্পিউটার, মডেম, প্রিন্টার, ওয়েবক্যাম, ডিজিটাল ক্যামেরা, প্রজেক্টর ও ফটোস্ট্যাটসহ প্রয়োজনীয় ডিভাইস দেয়া হয়। এসব কেন্দ্র পরিচালনার জন্য একজন করে প্রশিক্ষিত পুরুষ ও নারী উদ্যোক্তা নিয়োগ দেয়া হয়। এ উদ্যোক্তরা স্বল্প খরচে সকল ধরনের ই-মেইল আদান-প্রদান ও খোলা, ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ডাউনলোড, অনলাইনে জমির পর্চার গ্রহনের আবেদন, জীবন বীমার সুবিধা, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল জানা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকুরীর তথ্য ও আবেদন, মোবাইল ব্যাংকিং, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, দেশ-বিদেশে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলা, কম্পিউটার কম্পোজ ও স্কেনিং, ছবি তোলা, বিবাহ স্মরণীকা, নির্বাচনী পোষ্টার, ভিজিটিং কার্ড তৈরী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নাদি তৈরি’র সেবা দিয়ে আসছে। বলা যেতে পারে এক স্থানেই সকল সেবা পাওয়া যায়।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের সুমন মিয়া (২৫), রাসেল আহম্মেদ (২৩) জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কারণে অতি সহজে বিভিন্ন চাকুরির খবরাখবর, পরিক্ষার ফলাফল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারছি। ওই ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল ওহাব জানান, এখান থেকেই তারা জমির পর্চা উত্তোলনসহ কৃষি বিষয়ক তথ্যাদি পাচ্ছেন।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম (২৮) বলেন, ইউডিসির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সরকারী তথ্যভিত্তিক সেবা পেতে অর্থ ব্যয় কমে গেছে। স্বল্প সময়ে তথ্যভিত্তিক সব ধরণের সরকারী ও বেসরকারী সেবাসহ পাচ্ছেন তারা এক স্থান থেকেই।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা জনাব আলী (৪৫) ও খলিলুর রহমান (৩৮) বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সাহায্যে তারা কৃষি সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় তথ্যদি পেয়ে আসছেন। যেকোন কৃষি বিষয়ক পরামর্শের জন্য তাদেরকে আর উপজেলা সদর কৃষি অফিস যেতে হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোঘলবাসা, হলোখানা, পাঁচগাছি, নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর, কচাকাটা, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ, উমরমজিদসহ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ একই কথা জানিয়েছেন।
উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আনিছুর রহমান (৩০) বলেন, তথ্য সেবা কেন্দ্র আমার বেকারত্ব ঘুচিয়েছে, তেমনি এখানে কাজ করতে পেরে আজ মনে হচ্ছে আমি দেশের জনগনের সামান্য হলেও উপকার করে আসছি। এ কেন্দ্রের সাহায্যে গ্রামের মানুষ এখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি , বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ,চাকুরীর আবেদন করতে পারছে। পরীক্ষার ফলাফল, কৃষি সমস্যা, ডাক্তারি পরামর্শের জন্য আর দুরে যেতে হচ্ছে না। এখন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে তা অতি সহজেই জানতে পারছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মানুষের অনেক সমস্যার সমাধান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে পেয়ে আসছে। স্বল্প খরচে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ছাড়াও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড সর্ম্পকে জানছে।
ধামশ্রেনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাখিবুল হাসান সরদার বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে চ্যালেঞ্জ তা বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার । সরকারের এই চ্যালেঞ্জ আমরা অনেকটাই পূরন করতে পেরেছি এবং পারবো বলে আশাবাদি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার সকল ইউনিয়নগুলোতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালু আছে। দিনদিন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো হতে জনগন আরোও বেশী সেবা পাচ্ছে এবং ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহসহ অন্যান্য সামাজিক বিরোধী কাজগুলো সম্পর্কে প্রশাসনকে সহযোগীতা করে আসছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply