২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:৪১/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৮:৪১ অপরাহ্ণ

দাউদকান্দির হুগুলিয়ায় শফিকুলের দাফন সম্পন্ন, পরিবারে শোকের মাতম

     

নিজস্ব প্রতিনিধি
দাউদকান্দির হুগুলিয়ায় নৈশপ্রহরী শফিকুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে আজ সন্ধ্যা সাতটায়। অপর দিকে আজ ১৩ মার্চ সোমবার মরহুমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের বুকফাটা কান্নায় যেন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের মধ্যেও হাহাকার বিরাজ করছে শফিকুলের নির্মম ও অমানসিক ওই হত্যাকা-ের ঘটনায়।
জানা যায়, উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের পশ্চিশ হুগুলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৪৫) প্রায় ৫ মাস পূর্বে নৈশপ্রহরীর কাজ নেয় স্থানীয় গৌরীপুর বাজারের (মোবাইল মার্কেট নামে পরিচিত) নিউ মার্কেটে। শফিকুল ইসলাম প্রতিদিন রাত ৮টা হতে সকাল ৮ পর্যন্ত- এ ১২ ঘন্টা সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানান মার্কেটের দোকানদারগন। প্রতিদিনের মত ১১ মার্চ শনিবার রাতেও তিনি মার্কেটে নিজ দায়িত্ব পালন করতে আসেন। কিন্তু ওই রাতেই কিছু অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত নির্মমভাবে দাহ্য পদার্থ’র সংমিশ্রনে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তাকে।
এ খবর পেয়ে রোববার সকাল ৯টায় স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং বীভৎস পোড়া লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতন্ত্রের জন্য কুমিল্লা পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় শফিকুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি হুগুলিয়ায় নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। পরে তাকে সন্ধ্যার পর জানাজা শেষে স্থানীয় ওয়াক্ফকৃত মুয়াম্মরি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে নিহতের স্ত্রী জোৎস্না বেগম। এই অজ্ঞাত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ওই হত্যাকা-ের ব্যাপারে থানায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মূল অপরাধীদের ধরতে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়িই অপরাধীরা ধরা পড়বে’।
এদিকে নিহতের স্ত্রী মোসাঃ জোৎস্না বেগম বলেন,‘আমার স্বামী অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, তার কোন শত্রু থাকার কথা নয়। আমরা গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। ১ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে আমাদের অভাবের সংসার। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছিলাম ১ বছর আগে, যৌতুক দিতে না পারায় জামাই ছেড়ে দিয়েছে। আর ছেলেকে টাকার জন্য পড়াশোনা করাতে পারি নাই। এখন পেটেভাতে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করছে আমার ছেলে। ৬ শতাংশ জায়গা আর দোচালার একটি ঘর ব্যতীত আমাদের আর কিছুই নাই। উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে একমাত্র আমার স্বামী-ই ছিল। এখন আমি কি করবো? আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
নিহতের কন্যা সাথী আক্তার (১৭) ও শরিফুল (১৩) বলেন, ‘আমাদের বাবা কোন দিন কারো সাথে ঝগড়াবিবাদ করে নাই। আমাদের জানা মতে, টাকাপয়সার লেনদেনও কারো সঙ্গে ছিল না তার। আমাদের বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই। এমন বিচার চাই, যেন আর কেউ পিতা হারা না হয় সমাজে’।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ইঞ্জি. মোঃ সালাহ উদ্দিন, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ রমজান হোসেন, আব্দুল মতিন, শামীম আহমেদ প্রমুখ বলেন,‘ শফিকুলের মত নম্র -ভদ্র কোন মানুষই এ এলাকায় ছিল না। তাকে কি কারনে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তা আমাদের বুঝে আসে না। এই অসহায় পরিবারটি এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই হত্যা অন্য কোন ঘটনাকে প্রভাবিত করতেই ঘটানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। এবং সরকারের কাছে আবেদন করছি, যাতে করে এই পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকার একটি পথ বের করে দেন’।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply