২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৪১/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১২:৪১ অপরাহ্ণ

ধর্মের আনুষ্ঠিকতা নয়,ধর্ম পালন চাই

     

মাহমুদুল হক আনসারী
ধর্ম মানুষকে শালিন করে, সংহত করে, মার্জিত করে। ধর্মের সৃষ্টি মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। ধর্মের সৃষ্টিকর্তা একজন। রাস্তার নাম ভিন্ন ভিন্ন আছে। নানা পন্থা আর ভিন্ন আঙ্গিতে একেক গোত্র একেকভাবে সৃষ্টিকর্তাকে স্বরণ করছে, অনুসরণ করছে, ইবাদাত আরাধনা করছে। কেউ জোর করে ধর্ম পালন করেনা। কাউকে জোর করে পালন করানোও সম্ভবনা। ধর্মপালন নিজের মন ও ইচ্ছার উপর নির্ভর করে থাকে। কোনো ধর্ম সাংঘর্ষিক কোনো বক্তব্য দেয়না। ধর্ম হচ্ছে একটি পথ বা রাস্তার নাম। যে পথ বা রাস্তা দিয়ে পালনকারী সৃষ্টিকর্তাকে জয় করতে পারবেন। ধর্ম ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে শৃংখলায় রাখতে শিক্ষা দেয়। ধর্মের আনুগত্য অনুশীলন মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে উপকার বয়ে আনতে সক্ষম হয়। প্রকৃত ধর্ম পালন ও অনুসরণে সামাজিক বিশৃংখলা অনাচার পাপাচার প্রতিরোধ করে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান কর্মকান্ড কখনো খারাপ কিছু শিখায়না বলেনা। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্ম মানবজাতির জন্য এক প্রকার আশির্বাদ। ধর্মীয় আচার পর্বণে মানব সমাজ প্রশান্তি পায়। সামাজিক অশান্তি আর সন্ত্রাস জঙ্গীবাদের জন্য ধর্মকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। ধর্মের আবরণে যারা জঙ্গী সন্ত্রাসী গুপ্ত হত্যা করে তারা কোনো ধর্মের অনুসারী না। গুপ্তহত্যা, জঙ্গীপনা, সন্ত্রাসী কোনো হামলার কথা কোনো ধর্মে কোথাও বলা হয়নি। সন্ত্রাসী যে ধর্মেরই হউক না কেনো তাকে সমর্থন করা যাবেনা। ধর্ম মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রকে শান্তি শৃংখলা প্রদানের উদ্দেশ্যই সৃষ্টি হয়েছে। সমাজ ও মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য ধর্মের আগমন হয় নাই। তাই যারা ধর্মের আবরণ ব্যবহার করে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস হত্যা গুম হানাহানী করছে এবং আরো করার জন্য নানা কৌশল করছে তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা বড় কথা নয়, বরং ধর্মের প্রকৃত পালন অনুসরণ বড় কথা। ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা, পোষাক পরিধেয় ব্যবহার করলে লোকে বলবে সে এ ধর্ম ও ধর্মের অনুসারী। কিন্তু এ পোষাক আর চরিত্র যখন মানুষ ও সমাজ বিরোধী হয়, তখন ধর্ম ও ধার্মিককে কী বলবেন; একজন অধার্মিক যখন চুরী করে তখন তাকে চুরি বন্ধ করার জন্য ধার্মিক হতে পরামর্শ দেয়। আর যখন ধার্মিক মানুষ ধর্ম পালন করে চুরি করতে অভ্যস্ত হয় তখন তাকে কোন ধর্মের বানী শিক্ষা দিবেন সেটাও একটি বিষয়। ধর্মপালন ও অপরা পর অনুষ্ঠান সমূহ ঠিক মতো পালন করলেই সে একজন ভালো মানুষ হবেন সেটা এ সমাজে বলা এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ যাদের নিকট দেশের মানুষের দায়িত্বভার, ব্যবসা বাণিজ্য চাকুরী নকরী, মানুষ ও সমাজের সেবার দায়িত্ব রয়েছে, তারাতো বেশীর ভাগ কোনো না কোনো ধর্মীয় আবরণে আবদ্ধ আছে। তারাতো নিজ নিজ ধর্ম পালন ও আনুষ্ঠানিকতা করতে দেখা যায়। ধর্মের কাজ কী শুধু মানুষকে ধর্মিয় আনুষ্টানিকতা শিক্ষা দেয়া। বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহে নানা গোত্রের ধর্মের অনুশীলন চর্চা হয় ও হচ্ছে। আবার সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ, খুনাখুনী গুপ্ত হত্যা এসব ও হচ্ছে। বাংলাদেশে নানা ধর্ম গোত্রের মানুষের বড় বড় ধর্মীয় সম্মেলন সভা অনুষ্ঠান হচ্ছে। এখানে লাখ লাখ ধর্মপরায়ন মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। যারা এসব অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেয় তারা এতো বেশী কম শিক্ষিত না। একেবারে কম শিক্ষা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী মানুষরাও এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তিনদিন, দুইদিন একদিন ব্যাপী নানা সময় ও কর্মসূচী দিয়ে আদর্শ মানুষ তৈরী ও গঠনের জন্য এসব সম্মেলন অনুষ্ঠান করা হয় বলে উদ্যোক্তাদের বক্তব্য। আসলে আয়োজকদের বাস্তবে কী উদ্দেশ্য সেটা খোঁজার আমার উদ্দেশ্য নয়। সমাজ রাষ্ট্র ও পৃথিবীতে আজকের সময় পর্য্ন্ত যেভাবে নানাধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান চলছে তাতে করে প্রকৃতভাবে ধর্ম ও মানুষের কোনো কল্যাণ কেউ দেখলেও আমি দেখছিনা। এসব অনুষ্ঠান মাহফিল ও সম্মেলন যেখানে শ্রুতাদের সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়ে আসার কথা ছিলো সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠানগুলো আগত মানুষদের সমাজ হতে বিচ্ছিন্ন করতে দেখা যায়। তারা নিজেরা নিজেরা চলে ও বলে। অন্যের ভালো আর মন্দের দিকে খুব একটা থাকায়না। ধর্ম কর্ম নিজে যা বুঝছে সেটা দিয়ে মানুষ ও সমাজকে বিচার করতে দেখা যায়। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যারা অংশ গ্রহণ করে তাদের মনোভাব দেখা যায়, তারাই প্রকৃত ধর্মপরায়ণ মানুষ। তারা যা করে করছে সেটায় শুদ্ধ ও ন্যায়। অন্যরা যা করে তা ভূল ও অধর্ম। এ ধরনের চিন্তা আর চেতনায় এদেশের ধর্মীয় গোষ্ঠী বেড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এসব গোত্রের মাঝে একে অপরের প্রতি সহনশীল মনোভাবের অভাব। অন্যের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালনও অধর্ম বলে মনে করে তারা। অথচ মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি। মানুষ বা মানবতার জন্য পৃথিবী সৃষ্টি। এখানে ধর্মের কথা বলা হয়নি। ধর্ম মানুষের কল্যাণে। মানুষ ধর্মকে পরিচালিত করবে। ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান মানুষকে মানবিক গুনাগুন শিখাবে। এখন সমাজে তা হচ্ছেনা। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে হানাহানী অপপ্রচার পরনিন্দা লেগে আছে। একগোত্র অপরগোত্রকে সহ্য করতে পারেনা। একগোত্র অপর গোত্রকে স্বীকারও করতে চায়না। নিজের গোত্রের মাধ্যমে যে শিক্ষা ও আদর্শ পায় সেটা দিয়ে অন্যদের চেনার ও বুঝার চিন্তা করে। তার গোত্রের বাইরে সে যেতে চায়না। তাই সব ধর্ম এখন বহুগোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। ভালো ও মন্দ সব কিছুর হিসেব নিকেষ পাঠকগণ করবেন। ধর্মের আদর্শ যেখানে সাম্যমৈত্রী সৌহার্দ্যমূলক হওয়ার কথা ছিলো সেটা কী এখন সমাজে আছে? ধর্মের বাণী যেখানে ঐক্যবদ্ধ করে জাতিকে রাখার কথা ছিলো সেটা কী এখন এ উপমহাদেশে দেখতে পাচ্ছি? পরিবারে পরিবারে ভেদাভেদ, সমাজে সমাজে হানাহানি, এখন কী বন্ধ হয়েছে না বৃদ্ধি পেয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর ব্যাপক ও কেউ হয়তো বলতে চাইবেননা। কিন্তু এর কোনো উত্তর সমাজ দিতে পারবেনা। সমাজ ও মানুষ এখন অন্ধকার একটি রাস্তায় যাত্রা করছে। এ যাত্রায় নির্ঘাত বিপদ ও সংঘাত ছাড়া কিছুই দেখছিনা। এ রাস্তা হতে রক্ষা পাওয়ার মতো কোনো নিষ্টাবান পথ প্রদর্শক ও দেখছিনা। ধর্মের নামে অধর্ম, ন্যায়ের নামে অন্যায় ইবাদতের নামে লোক দেখানো কৃত্রিম অনুষ্ঠান এখন সমাজ দেখতে পাচ্ছে। তাদের দৌরাত্ব বেড়ে চলছে। তারাই মানুষ ওরাই সমাজের মালিক তারাই নেতা। তারাই সর্দার। তারাই সমাজের বিগবস। প্রশাসন, ধর্ম, রাষ্ট্র সব তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারা যেভাবে চাইবে সমাজ দেশ ধর্ম সেভাবেই চলবে। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক তারা। ধর্মের পরিচালক গাইডার তারা। দুর্নীতি ঘুষ, সুদ, কালোটাকার মালিক ও তারা। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আর ঘোষের বীজ বপন করে রেখেছে তারা। তারাই সমাজের সর্দার মতব্বর আর ধর্মের অনুসারী। তাদের বাইরে যা্ওয়ার কোনে সুযোগ ও পথ তারা রাখেনি। ধর্মের নামে রাজনীতির নামে গড়ে উঠা এসব ধর্মীয় তথাকথিত কালচার কখনো সমাজ ও মানুষকে উন্নত চরিত্র শিখাতে পারবেনা। উন্নত কোনো মানুষে গড়ে উঠতে দেবেনা। দরকার আমাদের আনুষ্ঠানিকতা নয়, প্রকৃতভাবে ধর্মের অনুসরণ অনুকরণ থাকা চাই সমাজের সর্বস্তরে। দুর্নীতি ঘুষ, লুটপাট থেকে রক্ষা করে মানবতার পক্ষে চিন্তা ও চেতনা তৈরী হউক ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে।
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply