২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ৬:০৮/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

সুফিসাধক শাহজাহান শাহ আলোর পথযাত্রী

     

 বরুণ কুমার আচার্য বলাই

আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামে কখন থেকে মানব বসতি তা নির্ণয় করা ইতিহাসবিদের ও ঐতিহাসিকদের কাজ। তাঁরা ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন। আমরা সাধারণত মরমী সাহিত্য ও মাইজভাণ্ডারী তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছি। মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকা ও তত্ত্ব নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ। আজকের আলোচ্য বিষয়টির উপর হযরত গাউসুল আজম আহমদ উল্লাহ (ক.)-র সাথে সংশ্লিষ্ট। চট্টগ্রামের মহান অলিয়ে কামেল যুগশ্রেষ্ঠ কামেল পুরুষ হযরত শাহজাহান শাহ (র.)। চট্টগ্রামের প্রাচীন সময় থেকে ইসলাম ধর্মের কথা বলা হয়। বলা হয় সাহাবা যুগে এখানে পবিত্র ইসলাম ধর্মের বাণী এসেছে। স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (স.) এর সাহাবী হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.)-সহ আরো ৭ সদস্যের একটি আরব দলীয় লোক নদীপথে পবিত্র ইসলাম ধর্মের বাণী নিয়ে এখানে এসেছেন। যুগ যুগ ধরে এখানে সেই নবী করিম (স.) এর পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোকিত করতে কাজ করে চলেছেন মহান মানবতাবাদী আল্লাহর অলিগণ। চট্টগ্রামে জগৎবিখ্যাত এমন একজন আল্লাহর অলির মাজার শরীফ আছে, যা অনেক বছরের প্রাচীন। তিনি হলেন হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)। উত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী থানার কাটিরহাট সংলগ্ন তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ আছে। ঐ মাজার দর্শনে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ ও পর্যটকগণ আসেন। মাজার শরীফটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্থাপনায় উন্নতি হতে চলছে। এই পবিত্র দরবারের শানমহল নিয়ে পুরো চট্টগ্রামবাসী গর্বিত। চট্টগ্রামকে বলা হয় বার আউলিয়ার শহর। এখানে কোনো একসময় বার জন মহান অলি এসে ইসলাম ধর্ম চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেই বার জন মহান অলি-কামেলদের মাঝে শেখ সৈয়দ হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) অন্যতম। ২০১৮ সালে এই মহান অলির ৫১২তম পবিত্র ওরশ শরীফ পালিত হবে। প্রতিবছর ব্যাপক আয়োজনে হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) এর ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। আকর্ষনীয় ও জ্ঞান পরিপূর্ণতা প্রকাশে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মহান আলোকিত জ্ঞানী ও পণ্ডিত সমাজের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। দেশ বিদেশের আগ্রহী ধর্ম দর্শনের সমাজ প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) এর ৫১১তম ওরশ শরীফে হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) কমিউনিটি সেন্টারে একটি ঐতিহাসিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেমিনার স্মারক প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক খ্যাতিমান ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. এএসএম বোরহান উদ্দিন। প্রবন্ধের বিষয় নির্বাচন করা হয় “হযরত শাহাজাহান শাহ (রহ.) : আত্মোৎকর্ষ সাধন ও মানব হিতৈষণার এক আলোকবর্তিকা”। অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই মনীষী ও সাধক পুরুষের জীবনকাল ও কর্মকে। প্রবন্ধকারের বিষয়ভিত্তিক লেখাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। এটি ধর্ম চেতনা ও প্রজন্মকে আলোর মুখ দেখাবে। দিশাহারা জাতিকে ধর্মীয় চেতনায় শুদ্ধ পথের সন্ধান দিবে এই প্রবন্ধ। শ্রদ্ধেয় প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. এএসএম বোরহান উদ্দিন মহাশয়কে ধন্যবাদ জানাই যুগোপযোগী লেখা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে এক শুদ্ধপথের দিশারী মহান আল্লাহর অলি হযরত শাহাজাহান শাহ (রহ.)-র জীবনী উপহার দেবার জন্য। এই প্রবন্ধে লেখক বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে সুফিয়ায়ে কেরামের আগমন নির্গমন ঘটে। এ ক্রমধারায় আলোকোজ্জ্বল সংযোজন হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)। সূর্যের আলোয় গহীন অন্ধকার যেভাবে মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় তেমনি এ মহান অলিয়ে কামেলের পদচারণায় সাম্য, মানবতা, শিক্ষা, প্রেম-মমতার এক øিগ্ধ কিরণে সমকালীন সমাজ মানসও জীবন হয়ে উঠেছে উদ্ভাসিত।”
সুফিবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় ঐ প্রবন্ধের লেখক আরো বলেছেন, “বাংলাদেশে সুফিবাদের সূচনাকাল একাদশ শতকে। ইসলাম অধ্যুষিত পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া এবং উত্তর ভারত থেকে মধ্যযুগীয় বাংলায় শত শত সুফি-দরবেশ বাংলাদেশে আগমন করেন। কালক্রমে সমগ্র বাংলাদেশে এমনকি গ্রামীণ জনপদেও সুফিবাদের বিস্তৃতি ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় যে কজন ক্ষণজন্মা আউলিয়ায়ে কেরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধর্ম প্রচার ও জনকল্যাণে ব্রতী হন তাঁরা “বারো আউলিয়া” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। যাঁদের মধ্যে হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) অন্যতম।”
মানুষের মুখে মুখে চট্টগ্রামের অনেক মহান সাধক পুরুষ ও জ্ঞানতাপসের কথা বলা হয়। ইতিহাস ও ধর্মপ্রচারে সবার আগে হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) এর নাম আসে।
সুফিরা কেবল তাদের আত্মোৎকর্ষ লাভের জন্যই নিজেকে নিয়োজিত করেন না, তাঁরা ইসলামের জন্যই এবং মানবসেবার জন্য হিতৈষণারমূলক কাজেও নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন। মানব সেবাকে তাঁরা স্রষ্টার প্রতি গভীর প্রেম ও নিষ্ঠারূপে বিবেচনা করে থাকেন। আল্লামা জালালউদ্দিন রুমী (রহ.) এর ভাষায় ‘মানুষের চিত্ত জয় করাই মহত্তম তীর্থযাত্রা’। মহান সাধক হযরত সৈয়দ শাহজাহান শাহ (রহ.) এমন এক সুফিসাধক আধ্যাত্ম্য ব্যক্তিত্ব যাঁর জীবন ও কর্ম মানবতার জন্য উৎসর্গীত। মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে তাঁর মতো জ্ঞান সাধকদের জীবন ও কর্ম অনুধাবন করার সুযোগ দিন। তাঁর ৫১২তম মহান বার্ষিক ওরশ শরীফে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply