২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৬:০৯/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

নিমের বিস্ময়কর উপকারিতা

     

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ঔষুধি গাছ হিসেবে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে গত ৫ হাজার বছর ধরে। প্রকৃতি কী করে একই সঙ্গে সমস্যা এবং সমাধান ধারণ করে রেখেছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নিম।
নিমের আছে ১৩০টি ঔষুধি গুণ। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে নিম খুবই কার্যকর। আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। আসুন জেনে নেওয়া যাক নিমের বিস্ময়কর উপকারিতাগুলো।
খুশকি তাড়ায় : পরিমাণ মতো পানি ও নিম পাতা নিয়ে সেদ্ধ করুন। যতক্ষণ না পানিটা নীল হচ্ছে। এরপর তা ঠাণ্ডা করে রাখুন। গোসলের সময় চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পর এই পানি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন।
ক্ষত সারায় : নিম পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে আঘাতজনিত ক্ষত বা কীটপতঙ্গের কামড়ে সৃষ্ট ক্ষততে প্রতিদিন কয়েকবার করে লাগালে তা দ্রুত সেরে যায়।
চোখের সমস্যা দূর করে : কিছু নিম পাতা সেদ্ধ করার পর পানিটুকু ছেঁকে পুরোপুরি ঠাণ্ডা করে নিন। এর পর সেই পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন। এতে চোখের যেকোনো ধরনের প্রদাহ, ক্লান্তি বা লালচে ভাব দূর হবে।
ব্রণ তাড়ায় : কিছু নিম পাতা গুঁড়ো করে পেস্ট বানিয়ে ব্রণে লাগিয়ে দিন। যতদিন ব্রণ না শুকোচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এভাবে লাগিয়ে যান। মুখের যে কোনো ধরনের ফুসকুড়ি, ডার্ক স্পট এবং দীর্ঘমেয়াদি ঘা দূর করে নিম।
কানফোঁড়া সারায় : কিছুসংখ্যক নিমপাতা গুঁড়ো করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। যেকোনো ধরনের কানফোঁড়া সারাতে এই মিশ্রণের কয়েকফোঁটাই যথেষ্ট।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : কিছু নিমপাতা চুর্ণ করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বহুগুণ।
নিম ফুল : নিম গাছের বেশির ভাগ অংশই তেতো। কিন্তু এর ফুল তেতো নয় এবং অসাধারণ ঔষুধি গুণসম্পন্ন। রহস্যময় জেসমিনের মিষ্টি গন্ধ ছড়ায় নিমের ফুল। বিকালে এবং সন্ধ্যায় নিম ফুল ফোটে। বর্ষাকালে নিম গাছের নিচে নিম ফুল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, ঢেকুর এবং অন্ত্রের কৃমিনাশক হিসেবে নিমের ফুল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া চোখ ও ত্বকের রোগ এবং মাথাব্যথায়ও নিমের ফুল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শীতলীকরণ গুণের জন্য নিমের ফুল অ্যারোমা থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম ফুলের অ্যালকোহলময় নির্যাস একটি কার্যকর কন্ট্রাসেপ্টিভ বা গর্ভনিরোধক।
নিমের ডাল ও বাকল : নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার চল বহু পুরোনো। এটি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করে, মুখের লালায় ক্ষারের মাত্রা ঠিক রাখে, ব্যাকটেরিয়াদের দূরে রাখে, দাঁতের মাড়ির ফোলারোগ কমায় এবং দাঁতও সাদা করে। এ ছাড়া দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমে পাথরও হতে দেয় না।
নিম তেল : নিমের বীজ থেকে নির্যাস বের করে বানানো হয় নিমের তেল। নিমের তেল কসমেটিকস এবং অন্যান্য সৌন্দর্য প্রসাধনীতেও ব্যবহার করা হয়। সাবান, চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ প্রভৃতিতে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের তেল ত্বকের রোগ সারাতেও বেশ কার্যকর। এ ছাড়া গায়ে মেখে ঘুমালে মশায় কামড়ায় না। নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দেহেও মালিশ করলেও নানা উপকার হয়। বাচ্চাদেরকে নিমের তেল খাওয়ালে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিমের তেলের তিনটি বিস্ময়কর উপকারিতা:
কালো আঁচিল দূর করে : ২-৩ ফোঁটা নিমের তেল পানিতে মিশিয়ে কালো আঁচিলে নিয়মিতভাবে লাগালে তা চিরতরে দূর হয়ে যায় এবং আর কখনো ফিরে আসে না।
বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে : ফেসপ্যাকের সঙ্গে নিমের তেল মিশিয়ে লাগালে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ত্বকে বলিরেখা পড়া, যেকোনো ধরনের প্রদাহ এবং খোস-পাঁচড়া দূর করে নিমের তেল।
চুলের যত্নে নিম : প্রতিদিন কিছুটা পরিমাণ নিমের তেল নিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে হালকা করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া বন্ধ হয়েছে এবং খুশকিও দূর হয়ে গেছে। চুলের গোড়াও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এতে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply