২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:১২/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৫:১২ অপরাহ্ণ

তেজগাঁওয়ে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা

     

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আরজত পাড়ায় মিলু মিলরেট গোমেজ (৬৫) নামে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর এক বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এ হত্যার ঘটনা ঘটলেও চার ঘণ্টা পর খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
নিহতের স্বামী হিউবার্ড অনিল গোমেজ (৭৮) আমেরিকান দূতাবাসের স্টোর শাখার সাবেক স্টোর ম্যানেজার।  খ্রিষ্টান গলির ৩৮, আরজত পাড়ার তিন তলা বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। তিন তলা এই বাড়ির মালিক অনিল গোমেজ। ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে- সে বিষয়ে ঘটনার এক মাত্র প্রত্যক্ষদর্শী অনিল গোমেজ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। আট কাঠা জমির ওপর নির্মাণ করা এই বাড়িটি দখলের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে কিনা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। নিহতের চার ছেলের মধ্যে ৩ জন কানাডা ও ১ জন আমেরিকা প্রবাসী। ওই ফ্ল্যাটে তারা স্বামী-স্ত্রী থাকতেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী সকাল ৭ টায় ঘটনা ঘটলেও আমরা খবর পেয়েছি আনুমানিক ১১ টার দিকে। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ওই বাড়ির ছুটা বুয়া খুরশী বেগম কাজ করার জন্য ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপেন। দীর্ঘ সময় ধরে কলিং বেল বাজলেও ফ্ল্যাটের দরজা খোলেনি। অনেক ডাকাডাকির পর পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সুভাস চন্দ্র সাহা এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। এক পর্যায়ে অনিল গোমেজ দরজা খুলে দেয়ার পর ড্রইং রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এরপর সকাল ১১টার দিকে এক ব্যক্তি পুলিশের হ্যালো ৯৯৯-এ নম্বরে ফোন করে হত্যার ঘটনাটি জানায়। পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় যে ড্রইং রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত লাশ। নিহতের গলায় কাটা চিহ্ন ছাড়াও বুকে ছুরিকাঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। লাশের পাশ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের মঠবাড়িয়ার উলুখোলা গ্রামে।
খবর পেয়ে তার গ্রামের বাড়ি থেকে ভাই ও বোনের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যরাই সেখানে ছুটে আসেন। নিহতের ছোট বোন রিটা পেরেরা শেলী বলেন, ৭ বোন ও ৫ ভাইয়ের মধ্যে মিলু ছিল চতুর্থ। মিলুর চার ছেলের মধ্যে স্ট্যানলি গোমেজ, রবার্ট ক্লাইভ গোমেজ ও লিংকন গোমেজ কানাডা প্রবাসী। তারা সবাই বিয়ে করে সেখানে স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়েছে। ছোট ছেলে মোজেস গোমেজ বছর দুয়েক আগে আমেরিকা প্রবাসী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিলু গাজীপুরের উলুখোলার পাউরান এলাকায় গিয়েছিলেন তাদের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি দেখতে। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে মিলু তার মোবাইল ফোনে কল করেছিল। ওই সময় তিনি চার্চে ছিলেন। তখন তার নাতি ফোন ধরেছিল। মিলু বলেছিল- যে দুপুরে সে গাজীপুরের বাসায় আসবে। তার আগেই সে খুন হয়ে গেলো।
মিলুর ছোট ভাই হেনরি গোমেজ বলেন, মিলু ও তার স্বামী ৯ মাস কানাডা থাকার পর গত অক্টোবরে দেশে ফিরেন। কানাডায় তাদের তিন ছেলে বার বার অনুরোধ করেছে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য। আগামী বছরের মধ্যে তাদের সব সম্পদ বিক্রি করে করে কানাডায় যাওয়ার কথা।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, তিন তলার ওই ফ্ল্যাটে নিহতের পরিবারের নিকট আত্মীয়দের ভিড়। চার কক্ষের ফ্ল্যাটটিতে তাদের সংসার। ড্রইং রুমের সোফা বসে ছিলেন অনিল গোমেজ। বয়সের বারে একেবারে নূজ্জ্য হয়ে পড়েছেন। ডান চোখের নিচে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, ‘আমি সোফার এক দিকে বসেছিলাম। একজন এসে আমার মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়। পরে ছুরি দিয়ে মেঝেতে তাকে (মিলু) জবাই করা হয়। কলিং বেল চাপলে তিনি দরজা খুলে দেন।’ আবার এ ব্যাপারে আরেক প্রশ্ন করা হলে তিনি অন্য ধরনের উত্তর দেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অনিলের শরীরের রক্তের দাগ রয়েছে। ঘাতকরা যদি তার সামনে স্ত্রীকে হত্যা করে, তাহলে কেনইবা অনিলকে ছেড়ে দিল। আবার হত্যার ঘটনা ঘটার পরও অনিল কেনইবা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেছিল-তা নিয়েও রহস্য রয়েছে। এছাড়া বাহির থেকে কেউ ঢুকে হত্যা করেছে কিনা তা নিয়েও স্পষ্ট কোন তথ্য অনিল দিতে পারেনি। এ কারণে বয়স বিবেচনায় অনিলকে নিরাপদ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অনিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply