২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ১:২১/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১:২১ পূর্বাহ্ণ

নৌ-মন্ত্রীকে অবাঞ্চিত করার সিন্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী

     

বন্দরে লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবীতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ হিসাবে নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরে ১২০ মিনিট অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছি আমরা চট্টগ্রামবাসী সংগঠন। আজ বিকেল ৩ ঘটিকায় সংগঠনের আহবায়ক হাসান মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচী থেকে বন্দর নগরীর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বসবাসরতদের নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ে গঠিত “আমরা চট্টগ্রামবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক অধ্যাপক গোফরান উদ্দিন টিটুর পরিচালনায় দীর্ঘ এ অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, ইংরেজরা চট্টগ্রাম বন্দরকে কয়েকদফা ব্যবহার ও লুটপাট করার পর পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানকে শাসনের নামে মূলত চট্টগ্রাম বন্দরকে লুটপাট করেছিলো। চট্টগ্রাম বন্দরের পয়সায় তারা করাচিতে আধুনিক বন্দর নির্মান করেছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানীদের সীমাহীন বৈষম্যের নানা প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। সারাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে তার কন্যা শেখ হাসিনার কল্যানে। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে নিখুঁত কোটা পদ্ধতিও প্রকাশ করেছে সরকার। এতে করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে সমান মূল্যায়ন করার প্রতিশ্র“তিও বিদ্যমান। চট্টগ্রামের উন্নয়নেও সরকার দারুনভাবে প্রতিশ্র“তিশীল। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ হয়েছে বিগত ৯ বছরে। এরপরেও চট্টগ্রামবাসীর মনে আক্ষেপ ও দুর্দশার পরিত্রান হয়নি।একশ্রেনীর সরকারী আমলা ও অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারনে চট্টগ্রামবাসীকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যায়নি। নানা ভাবে চাকরির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামবাসীকে করা হয়েছে বৈষম্যের শিকার। প্রতিবাদের মুখেও চট্টগ্রামবাসী কোন পরিত্রান পায়নি। যার সর্বশেষ উদাহরণ চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ পক্রিয়া।
এসময় বক্তারা বলেন, ২৮ জন লস্কর আবশ্যক জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কোন রকম পুন:বিজ্ঞপ্তি ব্যাতীত নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৮৫ জন। আমাদের দাবীর মুখেও নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ হয়নি। উল্টো নৌ পরিবহন মন্ত্রী এই নিয়োগে অনিয়মের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজে কখনো চট্টগ্রাম ৪৫ জন কখনো ২৯ জন কখনো আবার ২৭ জন নিয়োগের তথ্য দিয়েছেন।আবার চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান তথ্য দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার।কিন্তু গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পেয়েছি জেলা কোটার সরকারী গেজেটে ১ শতাংশের কম উল্লেখ থাকলেও মাদারীপুর জেলা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮ জন। যা নৌ পরিবহন মন্ত্রী নিজেও নানা গণমাধ্যমে বলেছেন। গনমাধ্যমে এসেছে এক শতাংশের কম জেলা কোটা বরাদ্দ থাকলেও বন্দর চেয়ারম্যানের নিজ জেলা টাঙ্গাইল থেকে নিয়োগ পেয়েছে ৬ জন।নোয়াখালী থেকে নিয়োগ পেয়েছে ৭ জন। সরকারী গেজেটে ৩০ শতাংশ হারে মুক্তিযুদ্ধা কোটা নির্ধারন থাকলেও লস্কর নিয়োগে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এ কোটায় চাকুরি দেয়া হচ্ছে ১৩ জনকে।বাকী ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে অজ্ঞাত প্রার্থীদের। কিন্তু চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যা রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাপনাকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখানোর মতো অপরাধ।এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কমিটিতে থাকা এক সদস্যের ব্যক্তিগত ২ জন পিয়ন ও ড্রাইভারের সন্তান চাকুরি পেয়েছে নিয়োগ কমিটির স্বজন প্রীতি ও ঘুষের বিনিময়ে। কিন্তু পৌষ্য কোটায় যাদের চাকরির অগ্রাধিকার থাকার কথা তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়নি। চট্টগ্রামবাসীর ভিটা মাটির উপর বছরের পর বছর চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ হয়েছে, আয়তনেও বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ভূমিহীন এলাকাবাসীকে দেয়া সরকারী প্রতিশ্র“তি মোতাবেক একজনেরও চাকরি হয়নি।তাই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন এসেছে ৮৫ জন লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। আমাদের কাছেও শতশত আবেদনকারী অভিযোগ করেছে টাকার বিনিময় নিয়োগের কথা জানিয়ে। যা আমাদের শৃঙ্কলসমাজে শোষন বৈষম্যের উদাহরণ বটে।
বক্তারা এসময় আরো বলেন, বন্দরে ৮৫ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করুন। যদি বাতিল না করে নিয়োগ সম্পূর্ন করা হয় তবে গন আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। গণআন্দোলনের ফলে জনরোষ সৃষ্টি হলে তার দায় নিতে হবে বন্দর চেয়ারম্যান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে।এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল না হলে নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে চট্টগ্রামের গণদুশমন হিসাবে ঘোষনা করে আগামীতে চট্টগ্রামের মাটিতে প্রতিরোধ ও অবাঞ্চিত ঘোষণা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানান আমরা চট্টগ্রামবাসীর অবস্থান কর্মসূচীতে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপ্যাল হাসিনা জাকারিয়া, রাজনীতিবিদ খোরশেদ আলম সুজন, শ্রমিক সংগঠক নেতা মাহাবুবুল হক এটলী, নারী নেত্রী মমতাজ খান, সাবেক ছাত্রনেতা ও আইনজীবী সীমান্ত তালুকদার, নারী সংগঠক হুরে আরা বিউটি, ব্যবসায়ী সংগঠনের সাহাবুদ্দিন আহমেদ, চিকিৎসক নেতা ডাঃ নাসির উদ্দিন মাহমুদ, ডাঃ আ ম ম মিনহাজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ আনসারুল হক, চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি মোজাহেরুল ইসলাম, চকবাজার থানা নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন, প্রানী চিকিৎসক পায়েল দও, ৩৭ নং নাগরিক কমিটির নেত্রী পারভিন সুলতানা, যুবনেতা আকরামুল হক, হেলাল উদ্দিন, জাহেদুল ইসলাম সিবিএ নেতা আব্দুল নূর, পেশাজীবী সংগঠক গাজী জসিম উদ্দিন, সামাজিক সংগঠক রাকিবুল ইসলাম সেলিম। ভিটামাটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিষদের জাহেদ হোসেন সহ প্রমুখ

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply