১৭ এপ্রিল ২০২৪ / ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৩:১৫/ বুধবার
এপ্রিল ১৭, ২০২৪ ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ

নাটের গুরু নুরুল মোমেন : সুনামগঞ্জে রাজাকার-অমুক্তিযোদ্ধা মিলেমিশে চলছে যাচাই-বাচাই : আজো তদন্ত হয়নি কেবি রশীদের দায়েরকৃত অভিযোগ

     

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
কোথাও যুদ্ধ করতে সুনামগঞ্জ জেলার কোন মুক্তিযোদ্বারা দেখেছেন বলে স্বীকার না করলেও নুরুল মোমেন দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডার। জেলা সংসদের সংগৃহিত অর্থের নেই হিসাব-নিকাশ। নুরুল মোমেনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রীর নিকট ৪/৮/২০১৫ইং তারিখে সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ করেন,একই সংসদের সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী কে.বি. রশিদ। কিন্তু রহস্যজনক কারনে অনিয়মের অভিযোগের কোন তদন্ত আজও হয়নি। তৎকালীন বি এনপি,সরকারের সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা সংসদে আসীন হয়ে,অদ্যাবধি স্বপদে আছেন তিনি। গত ২১-শে ফেব্রুয়ারী শহীদ ব্যাধীতে শ্রদ্বা জানাতে এসে জরাজীর্ন পানিবন্দী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দেখে সর্বস্তরের জনগন হতবাক হয়ে যান,কারা এই শহীদ মিনারের দায়িত্বে ? থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে,চলমান যাচাই বাছাই কার্যক্রমে। জামুকা”র চোখে ধূলো দিয়ে তিনি সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় মনোনয়ন দিয়েছেন পছন্দের সদস্য। যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে নুরুল মোমেন মনোনীত সদস্য ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কমান্ডার একজন সক্রিয় রাজাকার। সাক্ষ্য প্রমান ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রতিবেদন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে এ ব্যাপারে। দিরাই, তাহিরপুর,সুনামগঞ্জ সহ অনেক উপজেলার কমিটিতে রয়েছেন বিতর্কিত সদস্য। তথাকথিত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য বিশেষ করে উপজেলা কমান্ডারের সাথে সম্পৃক্ত ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যক্তিগত পছন্দের লোকেরাই অনলাইন আবেদন করেছেন। কিন্তু অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যারা অনলাইন আবেদন সম্পর্কে আদৌ ওয়াকিবহাল নন। যাচাই-বাছাই চলছে জেনে অনেকে স্বস্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব আবেদন আমলে নিচ্ছেননা। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এখনও রয়েছেন তালিকাবঞ্চিত ও উপেক্ষিত। একটা বৃহত্তর অংশকে বঞ্চিত রেখে সকল বিতর্কিত সদস্যদের দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কতটা সঠিক হবে,এ প্রশ্ন সকল সচেতন মহলসহ প্রকৃত মুক্তিযোদ্বাদের ।
অভিযোগ উঠেছে,জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটির তদন্ত হওয়াতো দূরের কথা মন্ত্রণালয়ের আদেশ সংক্রান্ত অভিযোগ ফাইলটি রহস্যজনকভাবে গায়েব করা হয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ হাজী নূরুল মোমেনের প্রতিদ্বন্দ্বি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী কেবি রশীদ তার জীবদ্ধশায় টেকেরঘাট সাবসেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট আলী আমজাদ ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাশিমকে নিয়ে সুনামগঞ্জের শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে আগত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের কাছে একটি লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। স্মারকলিপির অনুলিপি জেলা প্রশাসক,জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়েও প্রদান করা হয়। অভিযোগে প্রকাশ,হাজী নুরুল মোমেন সুনামগঞ্জ জেলার কোন মুক্তিযোদ্ধা নন। ২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীকে পুলিশ দিয়ে সরিয়ে বিএনপির কবির খানের হাতে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী রেদোয়ান ও কবির খান বিনা নির্বাচনে দেশের ৬৪ জেলায় বিএনপি সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জেলা ইউনিট কমান্ড গঠন করেন। এসময় সুনামগঞ্জ জেলা কমান্ড কার্যালয় থেকে ৯৬ সালের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি মনোনিত কমান্ডার হাজী কেবি রশীদকে জেলা প্রশাসক জাফর সিদ্দিক এর নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় সরিয়ে দিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টা করা হয়। জগন্নাথপুরের সাজ্জাদ হোসেনকে আহবায়ক,হাজী নুরুল মোমেন,আমির হোসেন,হুমায়ূন কবির,জয়নাল আবেদীন নওশাদ ও যোদ্ধাহত আব্দুল হাশিমকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ইউনিট কমান্ড কমিটি গঠনপূর্বক অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান কবির খান। জেলা প্রশাসন বিএনপি ও কবির খানের মনোনিত প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন ও নুরুল মোমেনদের হাতে জেলা ইউনিট কমান্ডের দায়িত্ব সমজিয়ে দেন। এ কমিটির অধীনস্থ সদর উপজেলা কমান্ড এর আহবায়ক হিসেবে বিএনপির মনোনিত আব্দুল মজিদকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এসময় জেলা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে হাজী নুরুল মোমেন জেলা কমান্ড কার্যালয়ে থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি যথাস্থান থেকে নামিয়ে ও সরিয়ে বাথরুমের মধ্যে রেখে দেন। পরে এ ব্যাপারে হাজী নুরুল মোমেনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদসহ অনেক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি গঠনের জন্য সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী জগন্নাথপুর নিবাসী এম.এ মালেক খান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ড কার্যালয়ে বসে কমিটি গঠন করলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম আহবায়ক পদে অধিষ্টিত হন হাজী নুরুল মোমেন। হাজী কেবি রশীদ কমান্ডার থাকাকালে জেলা কমান্ড কার্যালয় সংলগ্ন কতেক জায়গার দখল নিতে আসে সুনামগঞ্জ পৌরসভা। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র নুরুল ইসলাম বজলুর সাথে আলোচনাক্রমে কেবি রশীদ বিরোধীয় জায়গা সংসদের ভোগদখলে রাখেন। কিন্তু হাজী নুরুল মোমেন ২০১০ সালে কমান্ডার নির্বাচিত হয়ে এ জায়গা পৌরসভার কাছে গোপন বাণিজ্যের ভিত্তিতে হস্তান্তর করে দেন। সাবেক জেলা প্রশাসক ফয়জুর রহমানসহ ২ জন জেলা প্রশাসক জেলা কমান্ড কার্যালয়ে রাতের বেলা মদ জুয়াসহ অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে একাধিকবার তাকে কারণ দর্শানো নোটিসসহ তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে পত্র প্রেরণ করেন। হাজী নুরুল মোমেন জেলা কমান্ড কার্যালয়ের জায়গা বিক্রি করে ৯ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। পরে বিক্রিত জায়গায় দালান-ঘর তৈরী করার সময় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভূমি ও পুলিশ প্রশাসন দালানের কাজ বন্ধ রাখে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চাকুরীপ্রাপ্ত ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকুরী বাতিলের জন্য গডফাদার এক এমপির দালালী করে ভূয়া অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এ পদে এখন পর্যন্ত লোক নিয়োগ হওয়াতো দূরের কথা চাকুরি হারানো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এখন পর্যন্ত বাতিলকৃত চাকুরী ফিরে পায়নি। বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা হাজী নুরুল মোমেন স্বাধীনতার অনেক পর ভিখারীর বেশে সুনামগঞ্জে এসে একটি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারে বিবাহ করে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করে বর্তমানে বিলাস বহুল কোটি টাকার বাড়ী নির্মাণ করেছেন। অস্থানীয় লোকদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে তিনি আজীবনের জন্য কমান্ডার নির্বাচিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাম্প্রতিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভূক্তি ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাতিল করানোর জন্য সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটিতে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার ১১ উপজেলায় যাচাই-বাছাই কমিটিতে তার প্রতিভূ ও পছন্দের লোকদেরকে প্রতিনিধিত্ব দিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত কম পছন্দের লোক হওয়ায় জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ানকে জগন্নাথপুর উপজেলায়,আব্দুল হাশিমকে তাহিরপুর উপজেলা কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। যারা অত্যধিক পছন্দের তাদেরকে দোয়ারাবাজার,দিরাইসহ বড় বড় উপজেলায় প্রতিনিধিত্ব দিয়েছেন। যাতে করে তার পছন্দের প্রতিনিধিরা যাচাই-বাছাই করে মোটা অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করতে পারে। জীবিত কেবি রশীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আক্রোশ থাকার কারণে মৃত্যুর পর তিনি তার শোকসভায় যোগদান করেননি। শুধু তাই নয় কেবি রশীদের মৃত্যুর পর জেলা কমিটির রেজ্যুলেশন করে মৃত কেবি রশীদকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজানোর জন্য প্রস্তাব প্রেরন করেছেন। প্রতিভূ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে বর্তমানে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে মৃত মুক্তিযোদ্ধা কেবি রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন।

শুধু জেলা সদরেই নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যক্তিগত মনগড়ামতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন হাজী নুরুল মোমেন। তার মনোনিত প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান সাধারন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখে জামালগঞ্জের কমিটি থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের ছমেদনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম বলেন,সদর উপজেলা কমান্ডার আব্দুল মজিদকে মুক্তিযুদ্ধ করতে দেখিনি বা শুনিনি। একজন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনেই ভাতা উত্তোলন করার সময় আমার পকেট থেকে সোনালী ব্যাংকে উপস্থিত থেকে জোরপূর্বক টাকা কেড়ে নেন তিনি। সদর উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই বাধ্য হয়ে তাকে ভাতার অর্ধেক টাকা পার্সেন্টিজ দেন। টাকা না দিলে তিনি ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকী দেন। কান্দি ছমেদ নগরের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বলেন,আমার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য কমান্ডার মজিদ মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবী করেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে মজিদ সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাক্ষী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। জেলা কমান্ডার হওয়ার পরও অধীনস্থ মজিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে মিলেমিশে যাচাই-বাছাই করে যাচ্ছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য রাজাকার আপ্তাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পত্রিকায় বিষয়টি স্বীকার করার পরও নুরুল মোমেন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নানিয়ে উপরুন্ত তাকে দিয়েই যাচাই-বাছাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সদস্য মুজাহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী। এছাড়াও শত শত ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সনদ প্রদান করেছেন তিনি। জ্ঞাত হওয়ার পরও এ ব্যাপারে নুরুল মোমেনের কোন ভূমিকা নেই।
দিরাই উপজেলা কমিটির সদস্য বিধুভূষন রায় তার গ্রামের ৫ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অন্যদিকে প্রতিপক্ষরা বলছেন বিধুবাবু নিজেই অমুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া সুনামগঞ্জে ইতিপূর্বে আগত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের কাছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সভায় যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য জেলা কমান্ডের প্রতিনিধি বিনোদ রঞ্জন তালুকদারকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিহিত করেছেন এডভোকেট আলী আমজাদ। উক্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য উপজেলা কমান্ডার আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো,এমনকি মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া উত্তরাধিকার সনদ প্রদানসহ ঘুষ দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটিতেও কমান্ডার আতাউর রহমানকে সদস্য রাখা হয়। অথচ আতাউর রহমান ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন স্থানীয় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আতাউর রহমান ১১/১২ বছরের কিশোর ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বীরসিংহ গ্রামের আলাউদ্দিন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্তক্রমে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন কমান্ডার সফর আলী। তিনি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরীর অন্যতম কারিঘর বলে জানান সাবেক কমান্ডার আব্দুছ সোবহানসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির দুজন সদস্যের আস্কারা পেয়ে রাজাকার মীর্জা আব্দুল মতিন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছে।
প্রশ্নবিদ্ধ এ সকল সদস্যগন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার নুরুল মোমেনের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় যাচাই-বাছাই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত থেকে ভেজাল যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন বা খসড়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নে সক্রিয় রয়েছেন বলে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন। অবিলম্বে তথাকথিত বিতর্কিত কমিটি বাতিল পূর্বক নতুন কমিটি জনসম্মুখে প্রচারের মাধ্যমে পুনরায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করার জন্য দাবী জানিয়েছেন সাধারন মুক্তিযোদ্ধারা।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে হাজী নুরুল মোমেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমি ভূয়া নই বরং একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমি ভাল মানুষ বিধায় এই জেলার মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে ২ বার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। বিএনপির আমলে জেলা ইউনিট কমান্ডের দায়িত্বে থাকা ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন,শুধু আমি একা নই সেসময় আবু সুফিয়ান,জয়নাল আবেদীন নওশাদ,আব্দুল হাশিমসহ আরো অনেকেই ছিলেন। তিনি তার সততা ও দক্ষতার ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ছালিক আহমদ,আতম সালেহ ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান এর নাম উল্লেখ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, বর্তমান জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেনের বিরুদ্ধে গত ৪/৮/২০১৫ইং তারিখে সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী কেবি রশিদের দায়েরকৃত অভিযোগ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আদেশ সংবলিত কোন স্মারকলিপি আমি এখনও পাইনি। যদি পাই তাহলে পাওয়া মাত্র তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবো।
সুনামগঞ্জের জেষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আলী আমজাদ বলেন,নাটের গুরু নুরুল মোমেন-রাজাকার ও বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে প্রতিটি উপজেলায় তার ছত্রছায়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালে যারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে তাদেরকেও সম্পৃক্ত করেছে কমিটিতে। জামাতের সমর্থক হওয়ায় বিএনপি সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা সে যেনতেনভাবে যাচাই-বাছাই করছে। এতে সরকারের মূল উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply