২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:২৫/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যালয় অভিভাবক মন্ত্রণালয়

     

 

মাহমুুদুল হক আনসারী

বিদ্যলয় অভিভাবক মন্ত্রণালয় মিলেই শিক্ষা কার্যক্রম চলে। কর্তৃপক্ষ বলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়েছি। যারা স্কুল, কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। তাদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কমতি নেই। যারা স্কুল কলেজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে তারা নিঃসন্দেহে মহৎ ও শিক্ষানুরাগী। সমাজে তাঁরা আলোকিত মানুষ। সমাজ ও অভিভাবক তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। রাষ্ট্র তাদেরকে নানা সুবিধা আর সময় অসময়ে প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগীতা দিচ্ছে। শিক্ষা একটা বড় সেক্টর। গুরুত্বপূর্ণ এ সেক্টর জাতির কল্যাণে ও উপকারে ভূমিকা রাখছে। পশুসুলভ আচরণ থেকে শিক্ষার্জনের মাধ্যমে মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরী করে এ সেক্টর। শিক্ষাবিস্তার আদর্শ শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে শিক্ষানুরাগী বিদ্যালয় প্রধানদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যারা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে তাঁরা সমাজের ভালোমানুষ না হলে এ সেক্টরে কাজ করা  সম্ভবনা। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই এ সেক্টরের কার্যক্রম উদ্দেশ্য বলে জনগণ মনে করে। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন বাস্তবায়নে স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের কোনো শেষ নেই। স্কুল করার ক্ষেত্রে যা যা দরকার সেটা হচ্ছে এলাকা, স্থান, যাতায়াত, পরিবহণ, সুবিধা অসুবিধার কথা চিন্তা করতে হবে। শিক্ষক, স্কুল, কমিটি সিলেবাস নিয়ে পরিচ্ছন্ন ভাবনা ও বাস্তবায়ন থাকতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। রাস্তার উপর স্কুল প্রতিষ্ঠা করে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত ক্যাম্পাস যেনো নির্বিঘœ হয় সেটায় চিন্তা রাখতে হবে। রাস্তার উপর স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ক্যাম্পাস করা  সঠিক সিদ্ধান্ত না। পরিবেশ পরিস্থিতি সব দিক ভেবেচিন্তে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ। শিক্ষক কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়োগে তাদের চরিত্র প্রশিক্ষণ,ছাত্রছাত্রীদের প্রতি কমিটমেন্ট থাকতে হবে। আদর্শ ও নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন মেধাবী শিক্ষক নিয়েগে চেষ্টা থাকা চাই। ক্যাম্পাসকে রাজনীতি মুক্ত ক্রিড়া উপযোগী সংস্কৃতি সম্পন্ন দেখতে চাই।  ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাস যাতায়াত যেনো শতভাগ নিরাপদ ও আশংকামুক্ত হয়। আনন্দঘন পরিবেশে যেনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিক্ষক অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সমঞ্চয় ও সহযোগীতা থাকতে হবে। সিলেবাস প্রণয়ন ও নির্বাচন বাস্তবায়নে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সামর্থনুপাতে দিতে হবে। শিক্ষা কারিকুলামের বইয়ের বাইরে অতিরিক্ত পাঠ্যবই দিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝা ও চাপ বাড়ানো অনোচিত। অতিরিক্ত পাঠ্য বইয়ের বোঝায় শিক্ষার্থী যেমন লোড নিতে পারছেনা একইভাবে অভিভাবক ও ছেলে সন্তানদের নিয়ে মারাত্মক টেনশন ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সিলেবাস মতো যে সকল বই পাঠ্য করা হয়, সেখানে অনেক সময় শিক্ষার্থী সঠিকভাবে ক্লাসে সব পাঠ বুঝে উঠতে পারেনা। ফলে কোচিং এর সহযোগীতা নিতে হয়। বিদ্যালয় ও কোচিং দুটোই একই নিয়মে চলছে। শিক্ষার্থীকে ক্লাসের সাথে কোচিং এর সহযোগীতা নিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশ ও পরিচ্ছন্ন মানসম্পন্ন  পাঠ কার্য়ক্রম হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। অতিরিক্ত চাপে শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সঠিকভাবে মেধার বিকাশ হচ্ছেনা। ব্যাগ, বই, খাতা,কলম যেনো একটা বাজারের বস্তা। আজকের যারা স্কুলের পরিচালক প্রতিষ্ঠাতা হয়েছেন, তাঁরা কী এতগুলো বই খাতা পড়ে ও বহণ করে নামী দামী শিক্ষানুরাগী হয়েছেন? সে সময় আজকের সময় শিক্ষায় কী উন্নতি অগ্রগতি হয়েছে সেটায় যদি ভাবেন তাহলে শূণ্য ছাড়া কিছুই দেখছিনা। যাদের লেখা বই কবিতা, প্রবন্ধ বিদ্যালয় সমূহে পড়ানো হয় তাঁরা কী এতোগুলো বই সিলেবাসে পড়েছিলো, নিশ্চয় সকলে না বলবে। তাহলে আজকে এতো  অধিক পরিমাণ বই দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোমর সোজা করতে দিচ্ছেনা কেনো। এতোগুলো বই পড়েও শিক্ষার্থী সঠিকভাবে জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশ করছে কিনা সেটাও সমাজকে ভাবতে হবে। বই খাতা কলম, ক্লাস আর কোচিং এ শিক্ষার্থীদের মেধা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে শিক্ষা গবেষকগণ মনে করছে। এতোগুলো বই বহণ করে আর লাখ লাখ টাকা বেতন ও কোচিং পড়ে বাস্তবে শিক্ষার্থীর কী পরিমাণ উন্নতি আর অগ্রগতি হচ্ছে সেটা এখন হিসেব নিকেষ কষতে হবে। যত্রতত্র নানা নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। পান দোকানের মতো কেজি স্কুল, এসব স্কুলের নাম যেনো আমেরিকা লন্ডন থেকে আমদানী হয়েছে। প্রাইমারী লেভেল স্কুলকে কলেজ বলা হচ্ছে। নানা অনিয়মে ভরপুর এসব নানা নামের বিদ্যালয় কেজি স্কুলগুলোর নিয়ন্ত্রণ দরকার। নাম ও সিলেবাসে তাঁদের তালিকা যেনো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে হার মানায়। ওইসব স্কুলের বই পড়তে ও পড়াতে যে ধরনের শিক্ষক প্রয়োজন ঠিক সে পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ হয় কিনা তাও যাচাই বাছাই দরকার। আবার স্কুল ক্লাসের পর কোচিং অবশ্যই পড়তে হবে। না হয়  ক্লাসে গিয়ে সে পড়া দিতে পারেনা। বোর্ড বইয়ের চাইতে অন্য বই সংখ্যা বেশী। এসব অনৈতিক নীতিমালা সিলেবাস অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। অনুমোদনবিহীন স্কুল, বিদ্যালয় বন্ধ করতে হবে। স্কুল প্রতিষ্ঠা পরিচালনায় নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। বেতন ভর্তি ফি, বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত রাখতে হবে। ইচ্ছা মাফিক বেতন ফি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষায় উন্নয়ন থাকতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজ। অর্থ আর লোভে না পড়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীর তৈরী যেনো তাদের উদ্দেশ্য হয়। বই বেতন কোচিং ফি সব কিছুতেই শৃংখলা থাকতে হবে। অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমস্ত আইন বিধান মেনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সিলেবাস শিক্ষার্থীদের সহনীয়ভাবে করতে হবে। ক্লাস নির্ভর লেখাপড়ার মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক গুণাবলী শিক্ষায় গঠন চায় অভিভাবক মন্ডলী। মদ, গাঁজা, জোয়া, অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সর্বদা শিক্ষার্থীদের সতর্ক করার ব্রিফিং থাকতে হবে। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। প্রতিটি বছর যেনো তাদের ক্লাসের সাথে সাথে মানবিক নৈতিক ডেভলাফ হয় সেটায় নজর দিতে হবে। লেখা পড়ার পাশাপাশি শারিরীক মানসিক মানবিক উন্নয়ন চায় অভিভাবক মহল। শিক্ষার পাশাপাশি নীতি ও নৈতিকতার ব্যাপক উন্নতি কামনা করে অভিভাবক ও জাতি। শিক্ষাকে শৃংখলায় আনতে শিক্ষক অভিভাবকের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। যেমন খুশী ইচ্ছেমতো নীতি প্রণয়ন করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাকে সার্বজনীন গরীব দুঃখী কৃষক বান্ধব করে গড়ে তোলায় হউক শিক্ষানুরাগীদের উদ্দেশ্য।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply