১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:০৯/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ১০:০৯ অপরাহ্ণ

লামায় স্বামীর সন্ধানে এক নারীর অনশন

     

মো.ফরিদ উদ্দিন, লামা
লামায় স্বামীর সন্ধান পাওয়ার দাবী নিয়ে এক নারী দিনভর অনশন ও অবস্থান করছেন স্বামীর পিত্রালয়ে। বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন একটি হিন্দু পরিবার ও প্রতিবেশিরা। লামা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড চাম্পাতলী গ্রামে স্বপন কুমার দাসের ঘরের বারান্দায় শনিবার সকাল ৯টা থেকে মনিকা নামের এক নারী স্বামীর ঠিকানা জানতে অবস্থান-অনশন করেছেন। এক চরম বিভ্রান্তিকর এ ঘটনায় বাড়ির মালিক স্বপন কুমার দাস অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এলাকায় নানা মুখি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা সাভারের বাসিন্দা মনিকা বিগত ক’বছর আগে বাবা মা’র সাথে কক্সবাজার বেড়াতে আসে। সেখানে পরিচয় হয় মিশু দাসের সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম, অতপর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা দু’জনে। মিশু দাস, পিতা স্বপন কুমার দাস, ১নং ওয়ার্ড, লামা পৌরসভা। স্বপন কুমার দাস লামা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা। বর্তমানে এলপিআর-এ আছেন।

মিশু ও মনিকার গত ১৪ মে/২০১৫ চট্টগ্রাম জজ কোর্টে নোটারী পাবলিক হলফনামা মুলে বিয়ে হয়। ৮ জুলাই/২০১৫ তারিখে রাঙ্গামাটি তবলছড়ি উপজেলায় নিকাহ রেজিষ্টার কার্যালয়ে এক লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে নিকাহনামা রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন হয়।
এ বিয়েতে বর-কণের দু’পরিবারই নারাজ ছিলেন। মিশুর বড় ভাই বিশ্বজিত নোটারী পাবলিক করার সময় উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বজিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি জিডি করে রেখেছিলেন বলে জানাযায়।
এদিকে মিশু দাস গত ৬ জুলাই/২০১৫ তারিখে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে নোটারী পাবলিক হলফনামা মুলে ধর্মান্তরিত হয়ে ‘মো: আরাফাত রহমান মিশু’ নাম করণ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।
তারা চট্টগ্রাম জোরারগঞ্জ-এ বাসা ভাড়া করে থাকতো। গত ৯ অক্টোবর সকাল ৭টায় মনিকার স্বামী মিশু অফিসিয়াল কাজে কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। ওইদিন মিশুর মোবাইল থেকে মনিকার ছোট ভাইয়ের মোবাইলে একটি ম্যাসেজ যায়; তাতে লেখা রয়েছে ‘তোমরা তোমাদের বোনকে নিয়ে যাও আমিও চলে গেলাম’।

মনিকা স্বামীর কোন খোঁজ না পেয়ে অবশেষে ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম জোরারগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে-নং ৪০৮। পরদিন বুধবার মিশুর বাবা মায়ের বাড়িতে লামায় এসে হাজির হন। মিশুর পরিবার মনিকাকে ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এদিন সন্ধায় মনিকা লামা থেকে চলে যায়। ১৪ অক্টোবর সে আবারো লামা এসে মিশুর বাবা মায়ের ঘরের বারান্দায় অবস্থান নেয়। তার বিশ্বাস মিশুর পরিবার মিশুর সন্ধান দিতে পারবে। যতক্ষণ মিশুর ঠিকানা বা সন্ধান দিবেনা, ততক্ষণ সে মিশুর বাবার ঘরের বারান্দায় বসে থাকবে বলে মরণপন প্রতিজ্ঞা করেছে মর্মে সাংবাদিকদের জানান। মনিকার বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে লামা চাম্পাতলী গ্রামে স্বপন কুমার দাসের প্রতিবেশিরাও দুর্চিন্তায় পড়েছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিল মো: ফরিদ মিয়ার মধ্যস্থতায় মনিকা অনশন ভাঙ্গেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ মিয়া জানান, প্রায় শতাধিক ভীতগ্রস্থ গ্রামবাসীর অনুরোধে মনিকাকে প্রাথমিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে পৌর বিচার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

এর আগে সকাল ৯টায় মনিকা লামায় আসলে স্থানীয় সাংবাদিক লামা প্রেসক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক মো: ফরিদ উদ্দিননের নিকট; মনিকার তাঁর দু:খের বর্নণা দিচ্ছিল। ওই সময় পৌর যুবলীগ সেক্রেটারী রাজিব রক্ষিত দাস মনিকাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চায়। তাৎক্ষণিক এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক জিটিভি প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিনের সাথে অকথ্য ভাষা ব্যাবহার করে। ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে মাপ চেয়ে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সমাধা করে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply