২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:১২/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৯:১২ অপরাহ্ণ

ভাবনার অন্তরালে আমার স্বাধীনতা

     

একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু করি, গ্রামের সহজ সরল এক গৃহবধু প্রতিবেশীর বখাটে ছেলের কাছে নিজের ইজ্জত হারিয়ে সুবিচারের প্রত্যাশায় গেলেন গ্রামের মাতব্বরের বাড়িতে বিচারের আশায়। মাতব্বর সদর দরজায় রুপবতী নারীর আগমনে পুলকিত হয়ে নিজেই এগিয়ে গিয়ে সানন্দে নিজ কক্ষে নিয়ে এসে ঘটনা শুনার বাহনায় ঝাপিয়ে পড়ে নিতর ক্লান্ত দেহটার ভোগ শেষে শাসিয়ে তাড়ায়। অতপর অসহায় নারী যান রাজার দরবারে। রাজার কামাতুর দৃষ্টি পড়ে যায় এক অসহায় গ্রাম্য নারীর শরীরে তাই কিছুই শোনার আগেই দ্বার রক্ষককে হুকুম দেন যেন আগত মহিলাটিকে খাস কামরায় এনে ভাল কাপড়ে আচ্ছাদিত করে তার কাছে পাঠায়। অতপর যা হবার তাই হয়। অসহায় নারী এইবার যায় রাষ্ট্রের প্রধান বিচারকের কাছে। বিচারকের পেয়াদা সব শুনে বিচারকের কাছে জানালে বিচারক খারাপ কাজ করা কোন নারীর সাথে সাক্ষাতে অপারগতার কথা জানিয়ে দেন। অবশেষে অসহায় নির্যাতিত নারীটি চলাচলের রাস্তায় গাছের ডালে নিজের লজ্জা ঢাকার শেষ সম্বল গায়ে পেছানো শাড়ীখানা গলাতে পেচিয়ে সমাজের বিবেকবানদের জন্য একটা চিরকুট লিখেন। যাতে লিখেন,“আমি আর বিচার চাই না, আমি আর ধর্ষিত হতে পারব না”।

অবিভক্ত ভারতবর্ষেও স্বাধীনতা এবং ৭১ সালে বাঙ্গালী জাতি পাকিস্তানী জান্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অনেকটা ঐ নির্যাতিত মহিলার সাথে তুলনা করা না যাওয়ার কোন কারণ আমি খুজে পাইনি। ভাষা, অর্থনৈতিক, শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতির চরম শোষণের শিকার বাঙ্গালী একদিন ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিল। যা নয় মাস যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম করেছিল। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ যে চেতনা নিয়ে, যে লক্ষ্য উদ্দেশ্যে নিয়ে হয়েছিল সেই উদ্দেশ্যেও হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যার মাধ্যমে। যার বিশ্লেষণ অনেকেই অনেকভাবে করলেও বঙ্গবন্ধুর ৭২ এর ১০ ই জানুয়ারি দেশে ফেরার আগে বৃটেনে এবং ভারত সফরের মাধ্যমে ভারতীয় সৈন্য ফেরত পাঠানো পরবর্তীতে যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং সকলকে অস্ত্র সমর্পনের নির্দেশ অনেকটা বড় কারণ বলেই আমার মনে হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষে থাকা একটা শ্রেণীই প্রথম বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল। তারাই বঙ্গবন্ধুর নিষ্পাপ ছেলেকে ব্যাংক ডাকাত হিসেবে আবিস্কৃত করানোর অপচেষ্ঠায় সফল হয়েছিল কিছু সেনা অফিসারকে উসকিয়ে দিয়ে। স্বাধীনতার চেতনা সেই দিনে ধ্বংস হয়েছিল যেদিন বঙ্গবন্ধুর বুকে বুলেটে ঝাঝড়া করেছিল। উপরের গল্প এবং এই বিশ্লেষণটার মাঝে তেমন বড় কোন মিল না থাকলেও একটা জায়গায় বড্ড মিল আর তা হল শোষকরা আজীবন মাথা উঁচু করেই চলে, ৭৫ এর ঘটনার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছিল তারা যুগের তালে খোলস পাল্টিয়ে বীরদর্পে সাইরেন বাজিয়ে চলছে আর তাদের প্ররোচনায় যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল তারা অনেক ষড়যন্ত্রকারীকে বিচারের মুখোমুখী করতে অপক্ষো করতে হল বহুবছর। এই নির্মম সত্যটা উপলব্ধী করার যথেষ্ট সময় আমাদের না থাকতে পারে। তবে এই বাস্তবতা, ঘটনার পরবর্তী নায়কেরা ক্ষমতার সিঁড়িতে এসে চেতনা, বিশ্বাসের দেয়ালের চিত্তে রং লাগিয়েছিল। মেরুদ-ের মাঝখানে হাতুড়ির আঘাতে ধ্বংস করতে পেরেছি সমাজ ব্যবস্থা, ছাত্র রাজনীতি এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ। যারই ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান কারণ ঐ ভঙ্গুর মেরুদ- ক্ষমতার সিঁড়ি হয়েছিল বহু আগেই। ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তার বিকাশ ঘটানোর মনমানসিকতার উপর এমন এক আস্তরণ তৈরি হয়েছে যা ভেদ করে আজকের তরুণ সমাজের উপলব্ধী করার সুযোগ নেই বললেই চলে। পুস্তক নির্ভর ইতিহাস শিখিয়ে তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম শিখাতে হলে নিজেদের বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অনেককিছুই পরিবর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্তন করতে হবে যা করা হয়ত ক্ষমতার সিঁড়ি ভাঙ্গার কারণ হতে পারে তাই চলছে চলুক না, মুখেই থাকুক স¦াধীনতা, দেশপ্রেম। এখন নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে একটা প্রজন্ম হয়ত আবার ঘুরে দাঁড়াবে, ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করবে তখন জবাব দেবার ভাষা হারাতে হবে যারা রং লাগানো দেয়ালকে আকড়িয়ে ক্ষমতাকে বাহন করেছে তাদের সকলের। এই সত্য কথাটা হয়ত বেমানান তাইতো অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুযোগে মুক্ত চিন্তার লেবাসধারীর উত্থান যেমন হয়েছে তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আসল চেতনায় যখন সকল চেতনার প্রতিফলন ঘটে তখন সামঞ্জস্যতা হারিয়ে ফেলে যা এই রং লাগানো দেয়ালকে আরও উজ্জ্বলতর করে। এই দেয়াল ভাঙ্গার দায়িত্ব হয়ত তাদেরকেই নিতে হবে যাদের রঙে মিশে আছে স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যবোধ। যাদের রঙে বহমান শোষিতের পক্ষে বজ্রকণ্ঠের সেই স্লোগান, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

জিল্লুর রহমান
সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় পেশাজীবী পরিষদ

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply