১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:১৪/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য রক্ষায় জনসচেতনতা প্রয়োজন

     

মাহমুদুল হক আনসারী
স্বাস্থ্যই সুখের মূল। শারীরিক সুস্থতায় মানুষ ও সমাজ শান্তি লাভ করে। স্বাস্থ্য হউক ব্যাক্তি সমাজ বা পরিবারের। স্বাস্থ্য ভালো, মন ভালো, শরীর ভালো তো অন্তর ভালো। সব খুশির মূলে আছে স্বাস্থ্যের সঠিক পরিচর্যা ও সুস্থতা। মানুষ ও সমাজের উন্নতি উৎকর্ষতার জন্য ভালো শারিরীক স্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। মানব ও সমাজ সুন্দর ভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকার প্রতি বাজেটে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রকল্প থাকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে দেখা হয়। দেখা যায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ বাজেট থাকলেও এখাতে দুর্নীতি অন্য সব খাতের চেয়েও বেশী লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে সরকারের বিনামূল্যে ওষুধ গরীব রোগীদের মিলে না। গরীব রোগীদের ওষুধ চলে যায় ওষুধের দোকানে। সরকারী ডাক্তারদের চেম্বার ক্লিনিক গুলোতে ধনী রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারী ওষুধপত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। বড় বড় ওষুধের মার্কেটে সরকারী ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। গরীবের খয়রাতি ওষুধ বাজার মার্কেটে সুলভে পাওয়া যায়। মার্কেট থেকে নিরাপদে এ ওষুধ চলে আসে শহর গ্রামের নানা নামে লাখ লাখ ফার্মেসীর দোকানে। এসব দোকানে সরকারের সব ধরনের সরকারী ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্র্যান্ডহীন, সার্টিফিকেটহীন অবৈধ ফার্মেসীর মালিক ও কবিরাজ ডাক্তারগণ রোগীদের চিকিৎসায় এ সরকারী ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগীদের নিকট বিতরণের জন্য অনেক আইটেমের ওষুধ থাকলেও এখানে পাওয়া যাবে, সামান্য ব্যাথা আর গ্যাষ্টিকের ওষুধ। অন্য চিকিৎসা আর ওষুধ নিতে হয় বাহির থেকে। সরাসরি বলে দেয়, ওষুধের সরবরাহ নেই। অথচ চোখের সামনেই গরীবদের ওষুধ বাজারে চলে যাচ্ছে। মার্কেটে সরকারী সব হাসপাতালের ওষুধ কম মূল্যে পাওয়া যায়। সরকারের স্বাস্থ্য খাতের নীতিমালাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সরকারের নীতিমালা থাকলেই সঠিকভাবে বাস্তবায়নের অভাবে জনগণ উপকার পাচ্ছেনা। সরকারী হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য শ্বরণাপন্ন হয়, কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ভালোভাবে কথা বলেনা। দেখেনা ১ মিনিটেই রোগীর প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ। রোগীর চিকিৎসার চেয়ে রোগীর নামের তালিকা আর রেজিঃ খাতা শেষ করতেই তাদের তৎপরতা বেশী চোখে পড়ে। চিকিৎসার সময়ে ডাক্তারদের চেম্বারের আশপাশে ঔষুধ কোম্পানীর এম আরদের ভিজিট রোগীদের জন্য আরেক ধরনের ভোগান্তি। এ ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এম আর ভিজিটারদের নানা প্রলোভনে স্বয়ং ডাক্তাররাও হিমশিম খাচ্ছে। নানা বৈধ অবৈধ কোম্পানীর ওষুধের বাজারজাত করতে এসব এম আর অস্থির হয়ে যায় ডাক্তার ভিজিট করতে। ডাক্তারকে দেখা যায় রোগী রেখে ওই ভিজিটারদের সাক্ষাৎ দিতে। রোগীদের চিকিৎসায় আন্তরিকতা আর ভালোবাসার দিকে ডাক্তার আর এম আরদের লক্ষ্য থাকেনা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রোগী দেখলে দালালরা রোগীদের ডাক্তারের চেম্বারের ঠিকানা হাতে ধরিয়ে দিয়ে। চেম্বারে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। গরীবকে মারার জন্য কতো ধরনের ফাঁদ ফেতে রেখেছে ডাক্তাররা তার কোনো কুলকিনারা পাওয়া মুশকিল। ল্যাবের নামে অহেতুক পরীক্ষা দিয়ে রোগীদের অর্থ আর ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়। রোগীর সেবার চেয়ে ভোগান্তিই বেশী সরকারী মেডিকেল সমূহে। ডাক্তারকে অনেক সময় দেখা যায়, গল্প আর গুজবে, চা নাস্তায় মশগুল সময় পার করছে। এদিকে রোগীদের জ্যাম আর অপেক্ষার লাইন দীর্ঘ। সেদিকে ডাক্তার আর কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। এককথায় সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা আর ওষুধে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়ম। এসব বিষয় রোগীদের মাথায় আসলেও সেখানে রোগীগণ অসহায়। তাদের কিছুই করার থাকেনা। দু একজন রোগী কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলেও ও সবের কোনো সু-সমাধান পাওয়া যায়না। বহুদূর দুরান্ত হতে গরীব অসহায় রোগীরা ভালো চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালের শরণাপন্ন হলেও বাস্তবে সেখানে ডাক্তারদের নানা নিয়ম অনিয়মের ভোগান্তির শিকার হয় তারা। রাষ্ট্রের উচিৎ স্বাস্থ্যখাতকে সঠিকভাবে সরকারী হাসপাতালে রেগীদের সেবা ওষুধ দিচ্ছে কিনা খবর ও জরিপ রাখা দরকার। সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল, এ ধরনের দুর্নীতি দেখতে চায়না জনগণ। দুর্নীতি সব সেক্টরে থাকলেও মূলতঃ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের দুর্নীতি সমাজের চোখে বেশী দেখা যায়। এ দুটি খাতের সাথে দেশের সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ জড়িত। এখানে দুর্নীতিও বেশী। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আরো জোরদার ভূমিকা রাখার দাবী রাখে ভোক্তাভোগী জনগণ। গরীবের চিকিৎসা আর ওষুধ যেন রোগীরা পায়। ওষুধ যেন কালোবাজারী আর মেডিকেলের বাইরে না যেতে পারে সেটাই পর্যবেক্ষণ দরকার। ডাক্তারদের চিকিৎসার সময় বাইরের চেম্বার বন্ধ রাখতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে। সরকারী মেডিকেলের ডিউটি রেখে প্রাইভেট চিকিৎসা দিতে অনেক ডাক্তারদের দেখা যায়। আবার তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারী চিকিৎসক সমিতির নেতা হন। সরকারের একটা অংশ বলেও তাদের দাবী। সরকারের ঘরের মালিক হয়ে তারা স্বাস্থ্য আইনকে বৃদ্ধাংগুলী দেখায়। সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য সব মানুষের ঘরে ঘরে চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচী আর বাস্তবায়ন ঐ সব কতিপয় ডাক্তারগণ ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো কঠোর হতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। দেশের সব ধরনের ফার্মেসীগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। জানা যায় বর্তমানে নগর ও জেলায় লাইসেন্সধারী ফার্মেসীর সংখ্যা প্রায় ১০০০০। লাইসেন্সবিহীন কমপক্ষে আরো পনের থেকে বিশ হাজার আছে। বৈধ অবৈধ মিলে চট্টগ্রাম জেলাতে ত্রিশ হাজারের অধিক ফার্মেসী আছে বলে জানা যায়। এসব ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের নামে ভেজাল ওষুধ বিক্রি হয়ে থাকে। এসব ওষুধ বিক্রিতারা কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানেনা। তাদের কাছে আইনের কোন লোকজনও যাতায়াত করেনা। ফলে তারা নির্বিঘেœ ওষুধ নামক জীবন মরণের সেবা নিয়ে খেলেই যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ ডাক্তার, কালোবাজারে ওষুধ বিক্রিকারক, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসায় জনসেবা নিশ্চিত ও সরকারী ওষুধ যেন গরীব রোগীরা পায় নিশ্চিত করতে হবে। শহর ও গ্রামের সবগুলো সরকারী হাসপাতালে সরকারী প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির হিসেব তৈরী করে শাস্তীর আওতায় আনতে হবে। সরকারের স্বাস্থ্য নীতি সঠিক ও যথাযতভাবে বাস্তবায়ন চায় ভোক্তভোগী জনগণ। সরকারের সঠিক ইচ্ছা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দুর্নীতিকে জিরো পর্যায়ে আনতে হবে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও প্রাপ্তীতে জনগণকে আরো সক্রিয় ও সচেতন হতে হবে। আসুন দুর্নীতিকে না বলি। সরকারী চিকিৎসায় গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply