সিরাজী এম আর মোস্তাক
৫মে, ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে গণহত্যার ঘটনা জানা আছে সবারই। এর নেতা ছিলেন আল্লামা শফী। লক্ষ্য ছিল ১৩-দফা দাবি। সেদিন তিনি ঢাকায় আসার ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ছিলেন চট্টগ্রামেই। এটি ধোঁকা বা প্রতারণা ছিল কিনা, স্পষ্ট নয়। ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখিত উহুদের যুদ্ধে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের ভুমিকার সাথে মিলে যায়। সেদিন সে রাসুলকে (সাঃ) ধোঁকা দিয়ে ৩০০ সঙ্গীসহ পিছু হটেছিল। সে আত্মরক্ষার জন্যই মুনাফেকি করেছিল। একইভাবে কওমী সনদের স্বীকৃতির জন্য ৪ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে শাপলাচত্বরের ঘাতকদের প্রতি শোকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা শফী ও তাঁর সঙ্গীগণ এটি আয়োজন করেন। এখন আল্লামা শফীর ৫মে, ২০১৩ এবং ৪ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখের কর্মকান্ড মুনাফেকি কিনা, বাংলাদেশের জনগণ তা নির্ণয় করবেন।
আল্লামা শফী ৫মে শাপলাচত্বরের আন্দোলনের আহবায়ক ছিলেন। তিনি কওমী সনদের স্বীকৃতির জন্য উক্ত আন্দোলনের ডাক দেননি। তাঁর ডাকে শত শত মানুষ ভোগ করলেন নির্মম পরিণতি। নির্মম অত্যাচারের শিকার হলেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও বিএনপি নেতা মরহুম এম কে আনোয়ারসহ বহু নেতৃবৃন্দ। তারা দীর্ঘকাল কারাভোগ করলেন। অসংখ্য সাংবাদিক লান্থিত হলেন। দুটি বহুল প্রচারিত টিভি (দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি) বন্ধ হল। অথচ আল্লামা শফী অক্ষত ছিলেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের প্রতি নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে সামান্য বিবৃতি প্রদান থেকেও বিরত থাকলেন। এখন সরকারের ১০ বছর শাসন শেষে পরবর্তী নির্বাচনের প্রাক্কালে কওমী সনদের স্বীকৃতির জন্য শাপলাচত্বরের শোকরানা মাহফিল করলেন। তিনি পার্থিব স্বার্থ লাভ করলেও তাঁর এ কর্মকান্ড, ১৩-দফা আন্দোলনের সম্পুর্ণ বিপরীত। শোকরানা মাহফিল চলাকালে শাপলাচত্বরে নির্মম শিকার বিদেহী আত্মার গগণবিদারি অস্ফুট চিৎকার ভেসে আসছিল। বিদেহী আত্মাগুলো আল্লামা শফী ও তাঁর সাঙ্গদের অশ্রুসজল অভিশাপ দিচ্ছিল। আল্লামা শফী ও তাঁর সঙ্গীদের কপট হৃদয় শহীদদের বুকফাঁটা আর্তনাদ শুনতে পায়নি। তারা বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের ন্যায় বাংলাদেশে শাপলাচত্বরের মুনাফিক হিসেবে চিরকাল ধিকৃত হবে।
পৃথিবীতে মুনাফিকদের আগমন চলতেই থাকবে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও মীরজাফরের নাম সবারই জানা। তারা আল্লামা শফীর চেয়ে কম ধার্মিক ছিলেন না। আব্দুল্লাহ বিন উবাই লম্বা জামা পরতেন। রাসুল (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করতেন। বিজ্ঞ সাহাবীদের সাথে উঠাবসা করতেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর বর্ণনা রয়েছে। যুগে যুগে তাঁর বংশধর চলতেই থাকবে। দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস বা কোরআনকে শয়তানের পংক্তি নামে বই লিখেছেন, কুখ্যাত আলেম সালমান রুশদী। তিনি পার্থিব স্বার্থের জন্য এ জঘন্য কর্মকান্ড করেছেন। মূলত যাদের মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, তারা মুনাফিকদের কর্মকান্ডে বিচলিত হননা। শাপলাচত্বরের মুনাফিকদের পার্থিব প্রভাবে বাংলাদেশের জনগণ মোটেও বিচলিত নন।