১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২৬/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৯:২৬ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গারা বার্মার নাগরিক, নির্যাতন বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা দরকার

     

মাহমুদুল হক আনসারী
রোহিঙ্গা মুসলমান বার্মার নাগরিক। শত বছর ধরে তারা সে দেশে স্থায়ীভাবে বাস করে আসছে। সেখানে তাদের বাড়ি ঘর রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্টান আছে, জমি আছে। পূর্ব পুরুষদের ব্যবসা বানিজ্য আছে। জন্মগত ভাবে তারা সেখানে বেড়ে উঠছে। রাখাইন রাজ্য, মংড় এর আশ পাশের শত শত গ্রাম বার্মার সেনাবাহীনি সাম্প্রতিক জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারী, শিশু, বৃদ্ধ নিরপরাধ হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করছে। আহত করছে, পঙ্গু করছে, বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে টেকনাফ সিমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষ মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছে। পাচ্ছেনা কোনো আহার, মাথা গুজাবার ঠাই। নারী শিশু বৃদ্ধ মানুষগুলো ভয়াবহ যন্ত্রনা আর কষ্টের মধ্যে জঙ্গল পাহাড়ে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের সম্ভ্রম ইজ্জত লুন্টন করছে, নারীদের ধর্ষন করছে। তাদের নির্মম অত্যাচার থেকে শিশুরাও রেহায় পাচ্ছেনা। জীবন ও ইজ্জত বাচাঁতে তাদের সব ধরনের অর্থ সম্পদ বাড়ীঘর ফেলে বাংলাদেশ সিমান্তে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে তাদের জীবন রক্ষার মতো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই। শুধু মাত্র জীবন ও ইজ্জত রক্ষার তাগিদেই তারা এখানে পালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়। এক সাগর রক্ত দিয়ে অর্জন করা স্বাধীনতাকে বার্মার সামরীক জান্তা বৃদ্ধাংগুলী দেখাবে সেটা দেশের ১৭ কোটি মানুষ সহ্য করবেনা। ইতিমধ্যে বার্মার সরকার বলেই ফেলেছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরকি। এমন ধরনের শিষ্টাচার বিরোধী বক্তব্য জাতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে। শতবছর থেকে জন্ম সূত্রে বসবাসকারী বার্মার মুসলমানদেরকে নাগরিক হিসেবে অস্বিকার করা জঘন্যতম মানবতা বিরোধী বক্তব্য ছাড়া কিছুই নয়। তাদের আচার আচরণে মনে হয় তারা যেন পৃথিবীর কোনো আইনকে মানতে নারাজ। মানবতা, মানবাধিকার, সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা কোনোটাই তাদের নেই। নোবেল বিজয়া অংসান সূচীকে কী যোগ্যতায় নোবেল দিয়েছিল সেটাও এখন সুস্থ মানুষের প্রশ্ন। একজন নোবেল বিজয়ী নেতার দেশে মানবতা এভাবে কাঁদবে সেটা কোনো অবস্থায় মেনে নিতে পারছিনা। বিশাল পৃথিবী সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির জন্য তৈরী করেছেন। দুনিয়ার শুরুতে মানুষের কোনো শৃংখলা ছিলনা। সভ্যতা তখন মানবতা বুঝতো না। নারী পুরুষ ভেদাভেদ ছিলনা। শিক্ষার কোনো আলো ছিলনা। মানুষ আর পশুর মধ্যে আচরণ ছিল একই ধরনের। পর্যায়ক্রমে মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য আর সভ্যতা তৈরী হতে লাগলো। শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, আধুনিকতায় মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টা করলো। শ্রেষ্ট জাতি মানুষ। পৃথিবী শাসন করছে মানুষ। দুনিয়া পরিচালনার জন্য মানুষকে মানবিক জ্ঞান দেয়া হয়েছে। মানুষ তাকে জানতে ও বুঝতে শিখেছে। জাহেলী যুগের ইতিহাস থেকে মানুষ সভ্য হয়েছে। আর ভাষা, সংস্কৃতি কথা সব এখন সভ্য সমাজে আছে। ধর্ম দিয়ে মানুষকে ভাগ করা যাবেনা। পৃথিবীতে আনেক ধর্ম আছে যার যেটা ভাল লাগে সে সেটা পলন করবেন। ধর্মের কারণে মানব হত্য কোনো ধর্মগ্রন্থেই নেই। তার পরেও গোঠা দুনিয়ায় বর্তমান সমায়ে ধর্ম ব্যবহার করে মানবতার মধ্যে বিভাজন চলছে। হিংসা বিদ্ধেষ, হানাহনী, মারামারী, ক্ষমতার দন্দ্ব সবই ধর্মের সাইনর্বোড সামনে রেখ করা হচ্ছে। ধর্ম মানুষকে মনুষত্ব্য শিখায়। শৃংখলা, সাম্যতা,মানবতা অন্যের প্রতি ভালোবাসা শিক্ষা দেয়। সুখে দুখে সব সৃৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও যত্নবান হওয়ার উপদেশ দেয়। সবগুলো ধর্মগ্রন্থে এ সব উপদেশ লিপিবদ্ধ আছে। ধর্মের গুরুজনরা সেভাবে তাদের ভক্ত অনুসারীদের শিক্ষা দিতে দেখা যায়। এখন কথা হলো বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী বার্মা সরকারের আচার ব্যবহার নিয়ে। আসলে তারা কোন ধর্মের অনুসারী। তারা যদি সত্যিই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয় তাহলে তারাতো তাদের ধর্ম মানেনা। ধর্ম মানেনা সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারাতো দুনিয়ার কোন মানবতাবাদী সংগঠনের আইনকেও মানছেনা। ২০১৬ সাল হতে অদ্যবধি বারবার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন নিপিড়ন জুলুম বৃদ্ধি রেখেছে। এখন সেটা আরো ব্যাপকতা পেয়েছে। তাদের আচরণে মানবতার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা ভালোবাসা, মানবাধিকার কোনটাই পাওয়া যাচ্ছেনা। তাহলে তারা কি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের সরকার আইন শৃংখলা বাহিনী সব-ই-কি পাহাড়ের পশুই রয়ে গেল। সে ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো এ বনের পশুর সর্দার সূচীকে কেন নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। নোবেল দাতারা সূচীর কী আদর্শ দেখে এ পুরস্কার দিয়েছিল সেটা এখন প্রশ্ন। যারা তাকে পুরস্কার দিয়েছিল তাদের সংগঠন কোথায়। তারা কেন আজকের রোহিঙ্গাদের মানবতার এ বিপর্যয়ে এগিয়ে আসছেনা। তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা রোহিঙ্গার নির্যাতিত মানুষগুলো দেখছেনা কেন? তাহলে বার্মার সূচীকে সে দেশের মুসলমান নিধনের জন্যই কী সে পুরস্কার দেয়া হয়েছিল? এসব প্রশ্ন এখন বিশ্বের বিবেকবান মানুষের। সময় এসেছে এখন বার্মার জালিম অত্যাচারী সরকারকে সায়েস্তা করার। স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র কলোষিত করতে দেয়া যায়না। তার দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশী বলে পুশ ব্যাক করার দুঃসাহস বাংলার স্বাধীন দেশ বিরোধী বক্তব্য থেকে বার্মাকে সরে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের ঠিক তাদের দেশেই বসবাস ও বেঁচে থাকার নাগরিক অধিকার দিতে হবে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ বার্মাকে কখনো ছাড় দেবেনা, প্রয়োজনে আরেকটা ৭১ হবে। সমোচিত জবাব দিয়ে বার্মার মুসলীম জনগণকে সাহায্য করতে এ দেশের ১৭ কোটি মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে। বার্মা যদি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ না করে বাংলাদেশের জনগণকেও তাকে সমোচিত জবাব দিতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলীম নাগরিকদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে স্বাধীন দেশে অন্যায়ভাবে পুশ ব্যাক করার অপতৎপরতা জাতি কখনো গ্রহণ করবেনা। বাংলাদেশের সরকারকে আঙ্গুল তুলে কঠোরভাবে তার প্রতিবাদ করতে হবে। দেশের জনগণ যে কোন কঠিন সময় সরকারের পাশে থাকবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্ব বিরোধী কোন ধরনের বিদেশী ষড়যন্ত্রের কাছে জাতি মাথা নত করবেনা। বাইরের দেশের নাগরিককে আমার মাতৃভূমির নাগরিক বলে পুশ ব্যাক ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে নিজ দেশের ১৭ কোটি মানুষের ভার সইতে যেখানে হিমসিম খেতে হচ্ছে সেখানে অন্য দেশের নাগরিকের অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে দেয়া যাবেনা। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকে যারা স্বাগত জানাচ্ছে সেটা আমি সমর্থন করছিনা। এটাও আরেকটা ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের ৮০ হাজার গ্রামকে সুশৃংখল ও শৃংখলময় রাখতে হবে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক শৃংখলা ধ্বংস হউক সেটা জাতি সহ্য করবেনা। বার্মার সরকারকে যা ইচ্ছা তা করতে দেয়া যাবেনা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার্মা ও জাতিসংঘের মাধ্যমে এর বিহীত ব্যবস্থা করতে হবে। বার্মাকে আর তার দেশের মুসলমান রোহিঙ্গাদের জান মাল নিয়ে খেলতে দেয়া যাবেনা। এখনিই সময় বার্মার সামরিক জান্তার অত্যাচার জুলুম দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরা। সরকারের উচিৎ রোহিঙ্গা জনগণের জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply