২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:১৮/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৩:১৮ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুল মাঠে পশুর হাট

     

 

হিমেল তালুকদার,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের খোঁচাবাড়িহাট সপ্তাহে দুই দিন বসে। এ দুই দিন হাটের পাশের দুটি বিদ্যালয়ের মাঠেও বসে গবাদিপশুর হাট। সেখানে বিকট শব্দে ভটভটি নিয়ে পশু নিয়ে আসা হাটুরেদের হইহুল্লোড়। এতে এ দুই দিন ওই দুই বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হয়। হাট ভেঙে শিক্ষার্থীদের ফিরতে হয় বাড়ি। পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। এ চিত্র ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ী এলাকায় ৫০ শতক জায়গার উপরে ১৯৪৯ সালে কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৯৬৩ সালে ১০০ শতক জায়গার উপরে দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। বিদ্যালয় দু’টিতে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠে সপ্তাহে দুই দিন পশুর হাট বসানো শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশের সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) ভবন। পাশেই দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই দুই বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে গবাদিপশুর হাট। একের পর এক ভটভটি ভর্তি পশু নিয়ে বিদ্যালয় মাঠে আসছে হাটুরেরা। পাশের শহীদ মিনারে বেজে চলছে ওষুধ বিক্রেতার মাইক। শ্রেনি কক্ষের আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পশুর মল ও খড়কুটার স্তুপ। তার মধ্যে চলছে পাঠদান।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানালেন, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার খোঁচাবাড়ি হাটবসে। হাটের কারণে ওই দুই দিন দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় বেলা ১২টার আগে ছুটি হয়ে যায়। কিন্তু কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে বাধ্য হয়ে পাঠ চালাতে হয়।

দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন বলে, মাঠের মধ্যে সারি সারি বাঁশের বেড়া দিয়ে গবাদি পশু বিক্রি করার কারণে মাঠে খেলাধুলা করা যায় না। চারদিকে গরুর মলের দুর্গন্ধে টেকা যায় না।

ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা বেগন বলেন, সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪টা পযর্ন্ত চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। মাঠে হাট বসার কারণে সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাঠদান করিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী কেয়া বেগম, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী কার্তিক রায় ও সুমাইয়া বলেন, হাটের গরুর মাঝ দিয়ে স্কুলে আসতে ভয় লাগে। গত মঙ্গলবার ওর এক বান্দবীকে গরু গুতো দিয়ে আহত করে বলে জানায় সুমাইয়া।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অনেক সময় পশু শ্রেণী কক্ষের বারান্দায় রাখা হয়। কিন্তু পশুর মল ও আবর্জনা পরিস্কার না করায় বিদ্যালয়ে ক্লাশ করতে কষ্ট হয়। পশুর হাটের কারণে শ্রেণি কক্ষের আশপাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকে। ফলে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়ায় বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা কোন খেলা ধুলা করতে পারেনা।

দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গনেশ বাবু বলেন, বিদ্যালযের মাঠে গরুর হাট বসার কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। মাঠটি অন্যত্র সরিয়ে নিলে শিশুরা নিরাপদে ও স্বাছন্দে পড়া লেখা করতে পারতো।

কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খানম বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য সুস্থ্য ও ঝঞ্জামুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট বাসায় শিশুদের মনে একটি ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। হাটের দিনে অনেক শিশু ভয়ে বিদ্যালয়ে আসেনা।

তবে খোচাবাড়ী গরু হাটের ইজারাদার গনেশ ঘোষ দাবি করেন, গরুর হাটের কারণে বিদ্যালয়ে পড়া লেখার কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা।

জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন (আলাল) বলেন, ‘দীর্ঘ দিন যাবত এখানে গরুর হাট বসছে। এ কারনে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখিন হয়। এছাড়াও এ পশুর হাট থেকে সরকার প্রচুর পরিমান রাজস্ব আদায় করে। প্রশাসন যদি অন্যত্র জায়গা ব্যবস্থা করে হাট সরিয়ে নিতে পারে তাহলে ভালই হয়।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল ইসলাম বলেন, হাটের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয় এমন বিষয়টি কখনও চিন্তা করিনি। তাছাড়া ওই এলাকার বা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কখনো জানাননি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply