২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ভোর ৫:৫০/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

যা আমরা কল্পনা করতে পারি না

     

আকাশ ইকবাল
শক্তির সমুদ্রে আমাদের বসবাস। লাইনটি চোখে পড়ার সাথে সাথে নিশ্চই আপনাদের চোখ কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে। দাঁড়ানোর কথা, আসলে তো আমার এক বিশাল শক্তির সমুদ্রে বাস করি। এই সমুদ্র আমাদের বাঁচায়, বাঁচতে শেখায়, বাঁচার জন্য কল্পনা করতে শেখায়। এই শক্তিগুলো চোখে দেখা যায় না। তবে সেগুলোর নানা কাজকর্মের ফলাফল আমরা ভোগ করি প্রতিনিয়তই। যা আমাদের আবির্ভাবের বহু আগে থেকে এই প্রকৃতিতে ছিল। আমরা জানি, পৃথিবীর শুরু থেকে যত প্রাণির আবির্ভাব হয়েছে সব ক্রমবিবর্তনের ফলে। বিবর্তননের মাধ্যমে যখন যে প্রাণির আবির্ভাব হয়েছে তখন সে প্রাণি তার নিজেরে প্রয়োজন মতো এই শক্তিগুলো ব্যবহার করে আসছে। আমরা তাপকে ব্যবহার করি, আলোকে ব্যবহার করি, শব্দকে ব্যবহার করি, রাসায়নিক শক্তিকে ব্যবহার করি, বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তিকে আমরা ব্যবহার করি। এই সব কিছুই এই শক্তির সমুদ্রে মানুষের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই উপস্থিত ছিল।
প্রকৃতিতে এই সমুদ্রের শক্তিগুলো আমাদের চারপাশে নানারূপে বিরাজ করে। যদিও তা আমরা অনেক আগেই জেনে ফেলেছি। আমরা সদা সর্বদা এক শক্তির সমুদ্রে বাস করি। আলো, তাপ, শব্দ, বিদ্যুৎচুম্বকীয় থেকে আমরা প্রতি মুহুর্তে কি বিপুল পরিমাণ সুবিধা ভোগ করছি তা আমরা কল্পনা করতেও কষ্ট হবে। একবার ঠান্ডা মাথায় কল্পনা করলে বুঝতে পারবেন তাপ, আলো ও শব্দ আমাদের নীতিমত পরম বন্ধু। আচ্ছা একবার ভেবে দেখেন তো, তাপ, আলো ও শব্দ এই শক্তিগুলো আমাদের শক্তির সমুদ্রে তথা প্রকৃতিতে না থাকতো তাহলে কি হতো?
আপনি কি কল্পনা করতে পারবেন শব্দহীন একটি পৃথিবীর? এমন একটি জায়গার? পারবেন না। আপনি যদি নির্জন পাহাড় বা বন কিংবা সমুদ্র বা মরুভূমির কথা কল্পনা করেন তাহলেও হবে না। কারণ শব্দের অবস্থান সেখানেও। হয়তো যান্ত্রিক শব্দ থাকে না, মানুষের চিৎকার থাকে না কিন্তু নিসর্গের নানা শব্দ থাকে। পাখির ডাকের শব্দ থাকে। আপনার কল্পনাতেও আসবে না এমন শব্দহীন জায়গা। কারণ শব্দ আমাদের অস্তিত্বেও সাথে জড়িয়ে আছে।
শব্দকে ব্যবহার করি আমরা অনেক ভাবেই। কিন্তু এই শব্দের উৎপত্তি আলো-তাপের মতো না। কেন নয়? কারণ শব্দের উৎপত্তি তো বস্তুর কম্পন থেকে। কিন্তু আলো বা তাপের উৎপত্তি বস্তুর কম্পন থেকে হয় না। অনেকটা পার্থক্য আছে। আলো বা তাপ প্রবাহের জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শব্দের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে। এক কথায়, শব্দ মাধ্যম ছাড়া চলতেই পারে না। এবার আপনি বিষয়টি বুঝে গেছেন। সাথে সাথে আপনার কল্পনা শক্তিতে চলে আসবে, ওহ সে জন্য মহাশূণ্যে শব্দের অস্তিত্ব নেই। হ্যাঁ। মহাশূণ্যে শব্দের অস্তিত্ব নেই। কারণ মহাশূণ্যে শব্দকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন মাধ্যমই নেই। এই তো কেবল শব্দের কথা গেল। এবার অন্য দুটোর কথায় আসা যাক। আবার কল্পনায় চলে যাই। আচ্ছা আপনি কি আলোহীন কল্পনা করতে পারবেন? আচ্ছা আলো যদি না থাকতো তাহলে কি হতো? উত্তরটা সহজে দিয়ে দিবেন, সেটা অন্ধকার। কিন্তু অতটুকুতেই কি কল্পনা শেষ হয়ে গেল? কল্পনাকে আরেকটু শাণিত করতে হবে তো। কি ভাবছেন? আলো যদি না থাকে তাহলে কি আর কিছু থাকে? যদি থাকে তাহলে তার দৃশ্যমাণ হয়ে ওঠার কোন সুযোগ আছে? আর আলো ছাড়া সভ্যতা? কী হাস্যকর লাগছে শুনতে তাই না?
শব্দহীনতা ও আলোহীনতার ব্যাপারটা যত সহজে বোঝা গেল, তাপের প্রবাহ না থাকলে কি হতো তা এতো সহজে কল্পনা করা যায়? আপনারা জানেন, মানব সভ্যতার উম্মেষকালে মানুষ প্রথম যে শক্তিটির ব্যবহার শিখেছিল সেটি তাপ। পাথর ঘষে আগুন জ্বালানোর অভিনব বুদ্ধিটা মানুষ যখন ব্যবহার করতে পেরেছিল, তখনই শুরু হয়েছিল মানব সভ্যতার অভিযাত্রা। সভ্যতার উম্মেষপর্বে যখন আমাদের আদিপুরুষেরা আগুনের আবিস্কার করেছিলেন, তখন সেটিকে ব্যবহার করেছিলেন প্রকৃতিতে পাওয়া খাদ্যবস্তুকে ঝলসে নিয়ে একটু মজা করে খাবার জন্য। সে জন্যই তাপের ব্যবহারের কথা উঠলেই আমাদের প্রথমে রান্নার কথা মনে পড়ে। হ্যাঁ, দৈনন্দিন জীবনে রান্না করা থেকে শুরু করে কাপড় শুকানোর উদাহরণ খুবই স্বাভাবিক। সত্যি বলতে কি, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তাপের এতো বহুল ব্যবহার প্রয়োজন পড়ে যা অন্য কোনো শক্তিতেই নেই। উদাহরণ হিসাবে ধরতে পারেন, পানিচক্রের ব্যাপারটা। সাগরের পানি থেকে মেঘ, আবার মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার ব্যাপারটাও তাপের কারণেই ঘটে। পানি উত্তপ্ত হয়ে, তাপ গ্রহণ করে, বাষ্পে পরিণত হয়ে আকাশে উঠে গিয়ে মেঘে পরিণত হয়। পরে সেই মেঘ যখন শীতল হয়, তাপ কমে যায়, তখন বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে ভূমিতে। আর সেই বৃষ্টির পানি ব্যবহার হয় কৃষি কাজে। আবার গাছের খাদ্য তৈরি করার ব্যাপারেও তাপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে তাপের ভুমিকা আরো অনেক কাজেই প্রয়োজন পড়ে। আমরা নিজেরাই তো কম ব্যবহার করি না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাপের প্রয়োজন পড়ে। তেমনি আমাদের ঘরের কাজ করতেও তাপের প্রয়োজন পড়ে। অধিক মাত্রায় তাপ দিলে লোহাকে ইচ্ছামতো বাঁকানো যায়। আর সেভাবেই কামাররা দা-ছুরি ইত্যাদি তৈরি করে। আমরা যে গাড়ি চালাই সেখানেই তাপের খেলা। গ্যাস বা তেল পুড়ে ইঞ্জিনের ভেতরে তাপ উৎপন্ন হয়। সেই তাপ পিস্টনকে চলমান রাখতে সাহায্য করে। যেটি আবার পর্যায়বৃত্ত গতি তৈরি করে। আর তার ফলেই চাকা ঘোরে। যত বেশি তাপ উৎপন্ন হয় তত বেশি চাকা ঘোরবে।
অন্যদিকে তাপ গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রও। থাক আজ এতটুকুতে। গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র নিয়ে দ্বিতীয় আরেকটা প্রবন্ধে আলোচনা করবো। সুতরাং তাপ, আলো ও শব্দহীন কিছুই আমরা কল্পনা করতে পারি না।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply