১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:০৮/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ৪:০৮ অপরাহ্ণ

সখের বাগান

     

আকাশ ইকবাল
বাগান কার না ভাল লাগে? বাগান করতে সখ হয় না কার? আর যদি হয় ফুল বাগান তাহলে তো কথাই নেই। একটি বাগান করতে অনেক শ্রম দিতে হয়, অর্থ ব্যয় করতে হয়, আবার অনেকের সময়ের জন্য বাগান করতে পারে না। কিন্তু আমি আপনি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই তার অজান্তে একটি বাগান করে। আর সেটা হলো আমাদের ব্রেইন। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য। প্রতিটি মানুষের ব্রেইন একটি বাগানের মতো। চাইলে মানুষ সেই বাগান তার মনের মতন তৈরি করতে পারে। সখের বাগানে যদি কোন গাছ মরে যায় বা আগাছা উঠে তাহলে অন্যান্য ভাল গাছগুলোও নষ্ট হয়। আবার রোগে আক্রান্ত গাছের প্রভাবে অন্যান্য ভাল গাছ রোগে আক্রান্ত হয়। আর তখন আমরা রোগে আক্রান্ত কিংবা আগাছা কেঁটেছেঁটে ফেলে দিই। অনেক সময় আমরা নিজেরা করি আবার অনেক সময় কাজের লোক বা মালি দিয়ে করিয়ে নিই। ব্রেইনেও ঠিক মালি বা কাজের লোকের মতো গ্লিয়াল কোষগুলো অপ্রয়োজনীয় অকেজো ¯œাায়ু-সংযোগগুলোকে কেঁটেছেঁটে ফেলে দেয়।
আমরা আমাদের সখের বাগান সাজাতে, জমি উর্বর করতে, গাছ সভল হওয়ার জন্য কিটনাশক ইত্যাদি দিয়ে থাকি। আমাদের ব্রেইন বাগানেও শক্তিশালী করতে নিয়মিত পানি ঢালা হয় অক্সিজেন দেওয়া হয়। আমরা অনেক সময় আমাদের সখের বাগানে অকেজো, অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন গাছ কেঁটে ফেলে দিই। ঠিক একই ভাবে আমাদের মস্তিস্কের মন বাগানেও মালি/ গ্লিয়াল কোষগুলো অকেজো, অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন ¯œায়ু-সংযোগগুলো কেঁটেছেঁটে ফেলে দেয়।
আসি এবার বিস্তারিত আলোচনা করি:
নিউরোসায়েন্সে একটা কথা আছে, ঘবঁৎড়হং ঃযধঃ ভরৎব ঃড়মবঃযবৎ রিৎব ঃড়মবঃযবৎ. অর্থ্যাৎ যে সব নিউরোণ বা ¯œায়ুকোষ এক সঙ্গে জ¦লে ওঠে , সেগুলো এক সঙ্গে জড়িয়ে যায়। সেই ¯œায়ুকোষগুলো মিলে একটি সার্কিট তৈরি করে। যতবার সেসব সার্কিট ব্যবহার করবেন ততবার সেগুলো উদ্দীপ্ত হবে ও তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে সেই কানেশন বা সার্কিট। যেসব নিউরোণ বেশি ব্যবহার হবে সেগুলো টিকে যাবে আর যেসব কম ব্যবহার করা হবে সেগুলো সেগুলো শুকিয়ে ঝরে যাবে। তবে এই শক্তিশালী কানেকশন পেতে পুরনো অকেজো ¯œায়ু কোষগুলো কেঁটেছেঁটে ফেলে দিতে হবে, যাতে নতুন জায়গা পাওয়া যায়। একে আমরা বলি, ঝুহধঢ়ঃরপ ঢ়ৎঁহরহম.
আমাদের ব্রেইন একটি বাগান। এই বাগানে ফুল, ফল ধরে না তবে গজিয়ে ওঠে ¯œায়ু-কোষ, ¯œায়ু সংযোগ। এই সংযোগের মাধ্যমে নিউরো ট্রান্সমিটারগুলো যেমন ডোমাপিন ( ডোমাপিন নামের এই ট্রান্সমিটার দুটো মনে মধ্যে ভালোবাসা নামক বিষয়টি তৈরি করে), চেরোটনিন প্রভৃতি চলাচল করে। মাইক্রো গ্লিয়াল কোষগুলো ব্রেইনে মালি হিসাবে বা কাজের লোক হিসাবে কাজ করে। এগুলো নির্দিষ্ট ¯œায়ুকোষে সিগনেল পাঠানোকে দ্রুততর করে। তবে অন্য গ্লিয়াল কোষগুলো পরিত্যক্ত আবর্জনা ফেলে দেয়ার কাজ করে। এগুলো আগাছা উফড়ে ফেলা, ক্ষতিকর বস্তু সরিয়ে ফেলা, মৃত ঝরে পড়া পাতা জড়ো করার কাজ করে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, এগুলো কিভাবে জানে কোন সংযোগগুলো কেঁটেছেঁটে বাদ দিতে হবে?
গবেষণায় দেখা গেছে, সব ¯œায়ু সংযোগ কম ব্যবহার হয় সেগুলো সেগুলো ঢ়ৎড়ঃরহব ঈ১দয় দ্বারা চিহ্নিত হয়। মাইক্রো গ্লিয়াল কোষগুলো যখন এই মার্কগুলো চিহ্নিত করতে পারে, তখন সে প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয় এবং সেগুলো ধ্বংস করে। ঠিক যেভাবে একটি বাগানে মালি আগাছা চিহ্নিত করে পরে সেগুলো উফড়ে ফেলে দেয়। ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে মস্তিস্কে জায়গা খালি হয়। আর সেই জায়গায় নতুন ও শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করতে পারে। একটি বাগানে মালি একটা নির্দিষ্ট সময় কাজ করতে যায়। ঠিক মস্তিস্কে আবর্জনাগুলোও একটা নির্দিষ্ট সময় পরিস্কার করা হয়।
এখন খুব স্বাভাবিক আপনাদের প্রশ্ন জাগবে ঠিক কোন সময়ে এই কাজ করা হয়?
ঘুমের সময়। ঘুমের সময় গ্লিয়াল মালি প্রোটিন সি১ কিউ দ্বারা চিহ্নিত করে মস্তিস্কে অপ্রয়োজনীয় পুরনো অকেজো ¯œায়ু সংযোগগুলো কেঁটেছেঁড়ে বাদ দিয়ে দেয়। ঘুমের সময় মস্তিস্কে মনবাগানে ঝরা পাতা, আবর্জনা সরিয়ে ফেলে। তখন ¯œাযু কোষ ৬০ শতাংস কুঁচকে যায়, যাতে জায়গা তৈরি হয়। তখন গ্লিয়াল মালি এসে পরিত্যক্ত অংশ বাদ দিয়ে বাগান পরিস্কার করে। সারা রাত ভালো ঘুম হওয়ার পর সকালে যখন আমরা উঠি তখন দ্রুত ও স্পষ্ট কিছু চিন্তা করতে পারি। আপনারা একটা বিষয় খেয়াল করেন, সেটা হচ্ছে রাতে ভালো ঘুম না হলে কিংবা কয়েক রাত জেগে থাকলে অনেক সময় আমাদে মস্তিস্কে কিছু কাজ করে না। কোন প্রজেক্ট হাতে নিলে বা পড়ার টেবিলে মন বসে না। এর কারণ হচ্ছে রাতে ঘুম না যাওয়ার কারণে গ্লিয়াল কোষগুলো অপ্রয়োজনীয় ¯œায় সংযোগগুলো পরিস্কার করতে পারে না। ঘুমের কারণে সারারাত মনবাগানে গ্লিয়াল কোষগুলো পরিস্কার করে ব্রেইনে যথেষ্ট জায়গা তৈরি করে। আর জায়গা তৈরি হলে আমরা যে কোন কিছুতে খুব সহজে মন দিতে পারি, পড়া শিখে মুখস্ত করতে পারি। দুপুরেও ১০-২০ মিনিট ঘুম দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া মস্তিস্ক হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কের মতো। যেখানে পথ পরিস্কার, এক পথের সঙ্গে অন্য পথের সংযোগ স্পষ্ট।
যে সংযোগগুলো কম ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মস্তিস্ক রি-সাইক্লিংয়ের জন্য মার্ক করা হয়। আর যেগুলো আপনি আমি নিয়মিত ব্যবহার করি সেগুলোতে পানি ঢালা হয়, অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাই সেগুলো শক্তিশালী হয়। এভাবে আপনার সখের বাগান সাজাতে পারেন। বাস্তব জীবনে সখের বাগান না করলে আপনার জীবনে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম কিন্তু ব্রেইন বাগানটিকে সুন্দর ভাবে সাজানোতে আপনার জীবনে জন্য অনেক ভালো হবে। সো সখের বাগান মনমতো সাজান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply