২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:১৫/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১২:১৫ অপরাহ্ণ

আলীকদম-লামায় অবাধে পাহাড় কাটার মহোৎসব

     

ফরিদ উদ্দিন,লামা 
বান্দরবানের আলীকদম-লামা উপজেলার সরকারী ও বেসরকারী মালিকানাধীন পাহাড় কেটে জমজমাট মাটি বানিজ্য চলছে। বিভিন্ন স্থানে পুকুর, জলাশয় এবং সরকারী বেসরকারী প্রকল্পের ও ব্যক্তি মালিকানাধীন, প্রবাসী ব্যক্তিদের আলিশান বাডি নিমার্নের কাজে এবং ইটের ভাটায় মাটি যোগানে ব্যবহার করা হচেছ এ সব পাহাডের মাটি।এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাহাড় কেটে উজাড় করছে পাহাড়ের মাটি ধংস করে চলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ সব মাটি সরবরাহ করা হচেছ প্রকল্প ভরাট করার কাজে।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়,পার্বত্য বান্দরবান জেলার আলীকদম ৪টি ইউনিয়ন ও লামা উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দিনরাত নির্বিচারে পাহাড় কেটে সরবরাহ করছে মাটি। আর এ সকল পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ডোজার মেশিন।পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটা নিষেধ থাকলেও লামায় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে পাহাড় কাটা চলছে দেদারছে।পৌরসভার মধুঝিরি ,চেয়ারম্যান পাড়া,নারকাটা ঝিরি, একতা মহিলা সমিতির সংলগ্ন আশপাশের পাহাড় সমুহ,মধুুঝিরি নয়াবাজার,লাইনঝিরি,লামা সদর,উপজেলার ইউনিয়নের গজালিয়ার ফারাঙ্গা, ফাইতং ইউনিয়নে ১৭টি ইটভাটার জন্য পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৪টি ইটভাটা,সরই ইউনিয়নে ২টি ইটভাটা,গজালিয়া ইউনিয়নে ১টি ই্ট ভাটা ,পৌরসভার ১টি ই্ট ভাটার জন্য পাহাড় কেটে ইট প্রস্তুুতের জন্য মাটি সংগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে আলীকদম উপজেলায় ৪টি ইটভাটায় বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের মাটি নরম হওয়ায় প্রতিযোগিতামুলকভাবে একটি প্রভাবশালী মহল দিন রাত পাহাড়ের মাটি কাটায় ব্যস্ত রয়েছে।এ সকল চক্রটি দীর্ঘদিন রামরাজ্য কায়েম করে আসছেন।এ সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ কোন ধরনের প্রতিবাদ করলে মামলা হামলার হুমর্কী দিয়ে দমন করা হয়ে থাকে।এ ব্যাপারে নাছির কোম্পানি সাথে মুঠো ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভাব হয়নি।এ ব্যাপরে আলীকদম উপজেলা নিবার্হী অফিসার নাছিরুজামান অবাধে পাহাড় কেটে মাটি মৌজুম কারা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি দেখা হবে ,পাহাড় কাটা অপরাধ যত শক্তিশালী ব্যক্তি হউক না কেন আইন আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলতি বর্ষার মৌসুমে কাটা শুরু করে বর্ষার শেষ পর্যন্ত এসব এলাকায় প্রতিযোগিতা মূলকভাবে পাহাড় কেটে মজুদ করে রাখা হয়। আর এ সকল মাটি ইট ভাটাসহ বিভিন্ন্ মালিকাধীন প্রতিষ্টানে বেচা-কিনা ধুম পড়ে যায়। পাহাড় কাটা চললেও নিরব রয়েছে প্রশাসন ও বন বিভাগ। গজালিয়া ফারাঙ্গা ব্রীজ এলাকা থেকে স্থানীয় অধিবাসী করিমুল হাসান জানান, গজালিয়ায় এক ব্যক্তি রাতে দিনে পাহাড় কেটে ফসলের জমি ভরাট করছে। রহস্যজনককারনে নিরব রয়েছে লামা প্রশাসন ও বনবিভাগ।পৌরসভার বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন জানায়,প্রশাসনের নাকের ডগায় দিয়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা প্রতিদিন মাহিন্দ্র ট্রাক্টর বোঝাই করে পাহাড়ের মাটি কেটে পুকুর ভরাট,সমতল জমি ভরাট করার জন্য মাটি নিয়ে যাচেছ।কেউ বাধা দিলে মামলা হামলার হুমর্কী দিয়ে চলে যায়।এদিকে ফাইতং ইউনিয়নে পাহাড়ের মাঝে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৭টি ইটভাটায় রাতে দিনে ডোজার দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ চলছে সমানতালে।
স্থানীয় প্রশাসন ঘুষ বানিজ্য করে নিরবতা পালন করছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ। ফাইতং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম ও লামা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের মিয়া বলেন,লামা উপজেলায় ইট ভাটার জন্য পাহাড় কাটা নিত্যদিনের মতো প্রতিনিয়ত চলছে । এতে করে প্রতিবছর পাহাড় ধসে জনসাধারনের জান মালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচেছ।এ নিয়ে কোন কথা বলে বহিরাগত প্রভাবশালী মহলের থেকে আসে হুমর্কী। স্থানীয় ও পরিবেশ বান্ধব সচেতন মহলের দাবী করেন,বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হস্তক্ষেপে দ্রুতগতিতে পাহাড় কাটা ও ইট ভাটার জন্য পাহাড়ের মাটি সংগ্রহ প্রতিহত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দিয়ে দমন করা হউক।
লামা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সাধারন সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা বারবার সরকারের সংশ্লিষ্টদের মনে করিয়ে দিলেও কেউ কর্ণপাত করছেন না। পাহাড়ের মাঝে পুরোপুরি অবৈধভাবে ফাইতং-এ ১৭টি ইটভাটায় পাহাড় কেটে ইট তৈরি জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। যা কোন ভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তার পরেও প্রশাসন কি কারণে সিলগালা করছেন না, আমাদের বিষয়টা খুবই ভাবাচ্ছে।
এদিকে একটি সুত্র জানায়,আলীকদম-লামা উপজেলার প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের কে ম্যানেস করেই চক্রটি পাহাডের মাটি কেটে নিয়ে যাচেছ বর্ষার শেষে ইট ভাটায় কাচা-মাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে এসকল ব্যাক্তিরা মাটি কেটে পরিবেশ ভারসাম্য বিনষ্ট করে আসছে।আর এ সকল মাটির গাডি থেকে পুলিশ হাতিয়ে নিচেছ মোটাংকের টাকা।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের গাছ পালা কেটে স্ট্ক করে রাখছে একটি কুচক্র মহল। বর্ষার শেষে পাহাড়ের মূল্যবান বনজ সম্পদ ইট ভাটায় ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।আলীকদম রিজার্ভ থেকেও মূল্যবান সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে উজাড় করছে পাহাড়, আর ন্যাডা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুলি।এ দৃশ্য লামা-আলীকদম সড়কে চার দিকে তাকালে দেখা যায় ন্যাডা পাহাড় গুলি কাঁদছে তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য হারিয়ে ।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো:কামাল উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, পাহাড় ও বন ধংসে আমাদেরও খারাপ লাগে। জনবল সংকটের কারনে সব সময় অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়না। শুনলাম মাত্র, আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খি ওয়ান নু বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে পাহাড় কাটার বন্ধের লক্ষ্যে প্রশাসন অবিলম্বে মাঠে নামবে ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply