১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:০৫/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৩:০৫ অপরাহ্ণ

সদরঘাটে মাদক বেচাকেনা বন্ধের দাবীতে আন্দোলনের ডাক

     

শর্মিলা দাশ ও তাহের উদ্দিন

নগরীর পূর্বমাদারবাড়ী মাদক বেচাকেনার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকার ১৪ স্পটে ৪ গডফাদারের তত্ত্বাবধানে ৫৪ জন বিক্রেতা ওপেন সিক্রেটে ইয়াবা,শিসা,ফেনসিডিল,গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বেচাকেনা করছে। স্থানীয় থানাপুলিশের কতিপয় সদস্যের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এই অপকর্ম চরম আকার ধারণ করেছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মাদকসেবী আর বিক্রেতাদের অবাধ বিচরণে এই এলাকার পরিবেশের ক্রমাবনতির জের ধরে দারোগাহাট মহল্লা কমিটি ও স্থানীয় কাউন্সিলর যৌথ উদ্যোগে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

জানা গেছে, গত ক’বছর ধরে নগরীর সদরঘাট থানাধীন পূর্বমাদারবাড়ী ওয়ার্ডে ইয়াবা-শিসা-ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক বেচাকেনা হয়ে আসছে। গুটিকয়েক বিক্রেতা চুপিসারে মাদকের কারবার চালালেও সম্প্রতি তা চরম আকার ধারণ করেছে। এলাকার অন্যতম শীর্ষ গডফাদার সুলতান,আবছার,ইকবাইল্যা ও রিপনের তত্ত্বাবধানে কমিশনার গলি,দারোগাহাট বাইলেন, সিগারেট কোম্পানির ১ নং-২ নং গলি প্রকাশ ইয়াবা গলি,ধনসওদাগর লেইন,নুরুলহক মাস্টার লেইন,শওকত ফার্নিচারের বাড়ী,নছুমালুম বাই লেইন,কামাল গেইট,বাচুনিমা’র কলোনি,মেথরপট্টি ইসলামাবাদ এপার্টমেন্টের পার্শ্বস্থ ছাউনি, উত্তর ও দক্ষিন নালাপাড়াসহ ১৪ স্পটে ৫৪ জনের পৃথক ৮ সিন্ডিকেট সদস্য মাদকসেবীদের কাছে প্রকাশ্যেই ইয়াবা বিক্রি করছে। ১০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে প্রতি পিস ইয়াবা গ্রাহকের চাহিদামত তাদের ঘরেও হোম ডেলিভারি বেসিস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে কোনো ক্রেতা স্পটে এসে ইয়াবা সংগ্রহ করলে প্রতিপিস ইয়াবায় ৫০-১০০ টাকা ছাড় দেয়া হয়। গ্রাহকের চাহিদামত নির্দিষ্ট জায়গায় ইয়াবা পৌঁছে দেয়ার জন্য অন্তত ১৫ শিশুকিশোর নিয়োজিত রয়েছে। তারা ইয়াবা প্রতি ২৫-৫০ টাকা কমিশন পেয়ে থাকে। ইয়াবা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রায়শ বিবদমান সিন্ডিকেট গুলোর মধ্যে অহরহ মারামারির ঘটনাও সংঘটিত হয়। এসব কারণে এবং মাদকসেবী বখাটেদের ব্যাপক আনাগোনায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ায় এবার মাঠে নেমে এসেছে দারোগাহাট মহল্লা কমিটি। বিশেষ করে দারোগাহাটের আবছার-ইকবাইল্যা,ঝিল্লি মনোয়ারা,নাজির আলী, গং এর হাতে এখানকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখিতে পড়ছেন। ইকবাইল্যার নেতৃত্বে তার ভাই বোন ভাবী বোনের জামাতা চাচা চাচীসহ পুরো পরিবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে রীতিমত কোটিপতি বনে গেছে। এই ইকবাইল্যা একটি রাজনৈতিক দলের জৈনক বড় ভাইয়ের আশির্বাদপুষ্ট বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া ইকবাইল্যা নিজেই বলে বেড়ায় সদর‍ঘাট থানা তার পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, প্রায় প্রতিদিন ভোরে আজানের সময় দারোগাহাটে জেলার কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাইক্রোবাসযোগে দারোগাহাট বাদশা মিয়ার বাড়ীর সামনে ইয়াবার চালান আনা হয় থাকে। পরে তা কামালগেট এবং পার্শ্বস্থ স্টেশন কলোনি,বরিশাল কলোনি হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। অন্তত ৪ জন বোরকা পরিহিত মহিলা ইয়াবাগুলো আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কায়দায় পাচার করে থাকে। [এদিকে ইকবাইল্যা-আবছার ও নাজির আলি,ঝুল্লি মনোয়ারা গং এর অব্যাহত মাদক সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে দারোগাহাট মহল্লা কমিটির ব্যানারে এলাবাসী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা মাদক বিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাড়ার অলিতে গলিতে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মিছিল সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। মাদক কেনাবেচার স্পটগুলোতে পালাক্রমে পাহারা বসিয়ে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের ধাওয়া করছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী এবং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ’র সাধারণ সম্পাদক ও দারোগাহাট মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন ইবনে আহমেদের নেতৃত্বে মাদক বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। অথচ সদরঘাট থানাপুলিশ এখন পর্যন্ত চিহ্নিত কোনো মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেনি। এমনকি কোনো মাদক ব্যবসায়ীর আস্তানায়ও পুলিশ অভিযান না চালানোয় তাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। [অন্যদিকে দারোগাহাট মহল্লাবাসী মাদক-সন্ত্রাস প্রতিরোধে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। মাদক ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে এলাকাবাসী পাড়ার অলিগলিতে গণসংযোগ,সভা-সমাবেশ,মিছিলসহ নানান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার এবং উপ-পুলিশ কমিশনার এস এম মোস্তাইনের সাথে সাক্ষাত করে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply