২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:০৪/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৩:০৪ অপরাহ্ণ

রমজানে জাকাত প্রদান উত্তম

     

মাহমুদুল হক আনসারী

ইবাদতের উত্তম মাস রমজানুল মোবারক। যাকাত প্রদানের উত্তম সময় হলো রমজান মাস। মুসলমানদের মধ্যে যারা শরীয়তের বিচারে যাকাত প্রদান করার মত অর্থের মালিক হন, তারা হিসেব করে রমজান মাসে যাকাত আদায় করে থাকেন। যাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ। এ ফরজ ধনী ও সামর্থবান লোকদের জন্য। যে ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে তিনি নির্দিষ্ট পরিমানে বছরে একবার যাকাত আদায় করবেন। ইসলামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হজ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র ধনীদের জন্য। অর্থের কারণে ধনী লোকদের এ দুটি ফরজ সময় মতো আদায় করতে হয়। মালের সম্পুর্ণ হিসাব নিকাশ করে যাকাতের অর্থ বের করে তার পর উপযুক্ত লোকদের তা দিয়ে দিতে হয়। যাকাত প্রদান করলে সম্পদ কমেনা, বরং সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পরিচ্ছন্ন হয়। যাকাত আদায় না করার ফলে সম্পদের ক্ষতি হয় এবং অমার্জনীয় গুনাহ হয়। ইসলামে যাকাত প্রদানের ফজিলত অনেক বলা হয়েছে। না দেওয়ার করুন পরিনতি ও শাস্তির কথাও কোরআন ও হাদীসে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দাকে ধন সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করার কথা বলেছেন, মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি অন্য প্রাণীর চেয়ে বেশী। মানুষ যা করতে পারে, কোন প্রাণী তা করতে পারেনা। ভালো মন্দ দুটিই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মানুষকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সম্পদ দিয়ে বাস্তবে কি পরিমাণ মানুষ, আল্লাহর সৃষ্টির উপকারে আসে সেটায় পরিক্ষা করতে চান সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তার পরিক্ষার মধ্যে যাকাত একটি বড় পরীক্ষা। কারণ যাকাত হচ্ছে নিজের অর্জিত অর্থ সম্পদ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিলিয়ে দেয়া। বিলিয়ে দিতে হবে এতীম ফকির, মিস্কিন, আভাবি ঋণগ্রস্থ, অসুস্থ এবং যে কোন ধর্মের অভাবি ও বিপদগ্রস্থ লোকদের মাঝে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা দেয়া হয় এতীম, মিছকিন গরীব ছেলে মেয়েরা কোরআন হাদীস ও ইসলামের জ্ঞানঅর্জন করে সে সব প্রতিষ্ঠানে দেয়া যাবে। মসজিদ ছাড়া যে কোন সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। রমজান মাসে অনেক পরিবার আছে, যারা যথাযথভাবে অভাবের কারণে অর্থ সংকটে সেহরী, ইফতার করতে কষ্ট হয়, এমন ধরনের অভাবী পরিবারের মধ্যে যাকাত বিতরণ করলে উত্তম হয়। বৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা উপার্জনক্ষম এমন ধরনের মানুষদের দেয়া যেতে পারে। যাকাত সংক্রান্ত পবিত্র কালামে পাকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘খুজ মিন্ আমওয়ালিহিম; অর্থাৎ তাদের সম্পদ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে পেলো; এর অর্থ দাঁড়ায়, যাকাত সংক্রান্ত এ পবিত্র কালামে পাকের আয়াতের নির্দেশ হচ্ছে, তাঁদের সম্পদ হতে যাকাতের পরিমান মতো অর্থ নিয়ে ফেলো। যাকাত প্রদানের নির্দেশের মাধ্যমে যাকাতের পরিমান নিসাবের মালিক থেকে অর্থ নিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে পবিত্র কালামে পাক। ইসলামী বিশ্বে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন আছে। যাদের নিকট যাকাতের পরিমাণ মত অর্থ আছে, সে দেশের রাষ্ট্র হিসাব করে যাকাতের অর্থ আলাদা করে রেখে নেয় বলে জানা যায়। অর্থাৎ নিসাবের মালিকের নিয়ন্ত্রণ থেকে যাকাতের অর্থ নিয়ে নেয়া হয়। আমাদের দেশে সে ব্যবস্থাও নেই। এ ধরনের উন্নত চিন্তা ও করা হচ্ছেনা। বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধনীলোক আছে, যাকাত দেয়ার মত, সেটা সরকার যদি ব্যাংকের মাধ্যমে হিসেব বের করে, তাহলে দেশে এক বছরেই কোন বড় ধরনের গরীব থাকবেনা, এমন তথ্য ও বিভিন্ন জরিপে প্রকাশ হয়েছে। শরীয়তের বিধান মতে দেশে যাকাত আদায় হয় বলে মনে হয়না। ধনী লোকদের কত পরিমাণ টাকা আছে, তার কত টাকা যাকাত আসছে, তার কোন হিসাব রাষ্ট্রের নিকট নেই বল্লেই চলে, ধনীরা যাকাতকে, গরীবের জন্য অনুকম্পা হিসেবে দেখে থাকে। যাকাত গরীবের জন্য অনুকম্পা নয়; বরং ধনীদের থেকে যাকাত নিয়ে পেলে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে গরীব মানুষগুলো। আমাদের দেশে যাকাতকে গরীবের জন্য ধনীদের সাহায্য হিসেবে এখনো দেখা হয়। সেটা সম্পুর্ণ ভাবে ভূল ধারনা, ধনীর সম্পদ, জানমাল পবিত্র করতে হলে যাকাত প্রদান করার বিকল্প নেই। যাকাত প্রদান করে নিজ পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব-ই পবিত্র করার কথা রয়েছে। ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। সম্পদের নিরাপত্তা ও উন্নতি সাধিত হবে। আর যাকাত আদায় না করার ফলে সম্পদের ক্ষতির আশংখা লেগেই থাকে। যাকাত আদায় করলে সে ব্যবসা ও অর্থের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ পালন করে থাকেন। যাকাত প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে কোন প্রতিকুল অবস্থায় যাকাত আদায় করতে বলা হয়েছে। যাকাত নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি না করতে নির্দেশ আছে। দেশে যে ভাবে যাকাত দেওয়ার সিস্টেম চালু আছে সেটা সঠিকভাবে যাকাত আদায় হচ্ছে বলে মনে হয়না। যাকাত প্রদানকারী ও গ্রহীতার উপকার হয় এমন ভাবে যাকাত দেয়া দরকার। লোক দেখানো মনোভাব পরিবর্তন করে যাকাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য গরীব দুঃস্থ মানুষের নৈতিক কল্যান থাকতে হবে। কি পরিমাণ যাকাত একজন লোককে প্রদান করলে তার উপকারে আসবে সেটা চিন্তায় রেখে যাকাত নামক ফরজ আদায় করলে বহু আগেই মুসলীম সমাজ উপকার পেতো। যিনি যাকাত নিচ্ছেন তিনি সারা জীবন যাকাত গ্রহীতাই থাকছে। গরীব অভাবী অভাবেই থেকে যাচ্ছে, যাকাতে তার কোন উপকার হচ্ছেনা। সাময়িক এক দুইদিন উপকার হলেও সারা বছর অভাবেই থাকতে হচ্ছে। যাকাত আদায়কারী ও গ্রহীতার মধ্যে আদর্শিক ও ভ্রাতৃত্বপুর্ণ সম্পর্ক হলে যাকাত গ্রহীতার অর্থনৈতিক সাফল্য দেখা যেতো। যাকাত নামক ইবাদতের মাধ্যমে সামাজিক সাফল্য আরো বেশী করে পাওয়া যেতো। যাকাতকে যে পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে দেখা হবে না। সে পর্যন্ত যাকাতের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবেনা। প্রকৃত সুফল পেতে হলে যাকাত নামক ফরজ ইবাদতকে সামাজিক ভাবে মানব কল্যানে আদায় করতে হবে। দায়সারা কাজ হিসেবে আদায় করলে মুসলমান সমাজে সুফল আসবেনা এবং এখনো পর্যন্ত যাকাতনামক ইবাদত থেকে সঠিকভাবে সুফল পাচ্ছেনা সমাজ ও রাষ্ট্র। সঠিকভাবে যাকাত প্রদান ও গ্রহণের মধ্যে শৃংখলাবোধ জনগন ও রাষ্ট্রের।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply