২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:৩৮/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৭:৩৮ অপরাহ্ণ

ঘুর্ণিঝড় মোরা’র আক্রমনে উপকুলীয় এলাকা এখনই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে

     

 

মাহমুদুল হক আনসারী

ঘুর্ণিঝড় জ্বলোচ্ছাসের দেশ বাংলাদেশ। বছরের এপ্রিল-মে মাস জুড়েই থাকে ঘুর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছাসের ভয়। উপকুলীয় এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ তখন আতংক আর উদ্বেগের মধ্যে থাকে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, নোয়াখালী, হাতিয়া, বরিশালের উপকূলীয় এলাকাসমূহ এখনো অরক্ষিত। সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, কুতুকদিয়ার অনেক বেড়িবাঁধ সাগরের সাথে একাকার হয়ে গেছে। বেড়ী বাঁধ সংস্কার রক্ষনাবেক্ষনের অগ্রগতি নেই। বেড়িবাঁধ ঘেঁষে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষ ঘুর্ণিঝড় ও বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি আর সাগর পানিতে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকছে। জ্বলোচ্ছাস আর অতিবৃষ্টি হলে তাদেরকের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয় ঘর ভিটা ফেলে। লাখ লাখ উপকূলীয় অসহায় মানুষের জন্য আরো বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। উপকূলীয় মানুষদের তাদের বাড়ী ঘরেই থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যেন তাদের এলাকাতেই নিরাপদে থেকে রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারে সেটাই সরকারকে দেখতে হবে। ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি হলে তাদের চিন্তা আর ভয়ের শেষ থাকে না। তাদেরকে ভয় থেকে সাহস দিতে হবে। তাদের ভয় দুর করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় যাবতীয় বেড়িবাঁধ ঠিক সময়ে টেকসই রেখে কাজ সমাপ্ত করতে হবে। সরকারের সদিচ্ছার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার উপকূল বাসীর জান মাল রক্ষায় ব্যাপক আগ্রহী। সরকারের এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের আগ্রহের শেষ নেই। যারা এলাকার প্রতিনিধি আছে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে তাদেরকে নিজ নিজ এলাকার সমস্যার উন্নয়নে সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান সরকার নাগরিক সমাজ যেখানে আছে সেখানেই দ্রুত কর্মসূচী নিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বকে সমস্যা চিহ্নিত ও বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। উপকূল, পাহাড় পর্বত, সমতল নিয়েই প্রিয় বাংলাদেশ। সব এলাকার মানুষকেই সামগ্রীক ভাবে তার অধিকার দিতে হবে। নাগরিক হিসাবে আমরা সকলেই সমান। বাংলাদেশের সব অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রগতি সমানভাবে চলুক সেটায় জনগন চায় উপকূলে। মানুষের উদ্বেগ উৎকন্ঠা দুর করতে হবে। তারা বাড়ীঘর পৈত্তলিত জমি জমা ফেলে অন্যত্র চলে না আসে সেটা রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। উপকূলের মানুষের উন্নয়নে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির গীর্জা, হাট বাজার সব কিছুর উন্নয়ন দেখতে চাই। তাদের কৃষি, মৎস্য, যার যার ব্যবসা ঠিক ভাবে চালানোর মত পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে রাষ্ট্রকে। তাদের এলাকার বিদ্যুৎ পানি, শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তাঘাট পুল ব্রীজ কালভাটের ব্যবস্থা সঠিকভবে করতে হবে। উন্নয়ন সমানতালে করতে হবে। শহরে উন্নয়ন গ্রাম উপকূল পিছিয়ে থাকবে তা হয়না। গ্রামের মানুষের ক্ষেত খামারের ফসল ফলাদির সুবাধে শহর চলে। তাদের ঘাম ও শ্রমের কথা ভূলে গেলে চলবেনা। যত সুযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব তাদের কথা ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে। বিদ্যুতের মারাত্মক বিপর্যয়ে শহরের তুলনায় গ্রামে বিদ্যুৎ নেই বল্লেই চলে। বিদ্যুৎ বিতরণে শহর-গ্রাম দ্বিমুখী আচরণ হতে পারেনা। শহরের মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পানি পাবে, আর গ্রামের মানুষ দিন রাত চার ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাবেনা সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। গ্রামে গ্রীষ্ম কালে বিদ্যুৎ পানির জন্য হাহাকার অবস্থা, খাল বিল পুকুর নদী নালা শুকিয়ে গেছে। খাবার পানির মারাত্মক সংকট। শিশু মহিলা, বৃদ্ধারা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। পানির লেয়ার অনেক নীচে নেমে গেছে। যাদের সামর্থ আছে তারা গভীর নলকূপ বসায়ে পানি তুলছে। আর যাদের সে সামর্থ নেই তারা পানির হাহাকারে ভোগছে। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করতে হচ্ছে। স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনকে তা দেখতে হবে। জনগনের পানির কষ্ট বুঝতে হবে। সেখানেতো আর ওয়াসার লাইন নেই। কি ভাবে অজ গাঁ গ্রামে খাবার পানির হাহাকার দুর করা যায় তা চিন্তা করে সমাধান দিতে হবে। ৩০ মের মোরার আঘাতে উপকূলীয় এলাকা, কক্সবাজার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম নোয়াখালী সহ প্রায় সব উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ঘর বাড়ী ভেঙ্গে গেছে, গাছ পালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গরীব অসহায় দরিদ্র মানুষ তাদের ঘর বাড়ীর ক্ষতির কারণে উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠায় আছে। বর্তমানে রমজান মাস চলছে। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। কৃষক দিন মজুর মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তার মধ্যে মোরার আঘাতে আরো ক্ষতিগ্রস্থ হলো উপকূলবাসী। এ মুহুর্তে তাদের পাশে যাওয়া দরকার। সরকার ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে তাদের মনোবল শক্ত করতে হবে। তাদের বেঁচে থাকার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। যতটুকু সম্ভব উপকূলের উন্নয়ন কর্মকান্ড যথাসময়ে টেকসই ভাবে শেষ করতে হবে। বেড়িবাঁধ কোন অবস্থায় অরক্ষিত রাখা যাবেনা। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে হবে। উপকূলবাসীর উন্নয়ন অন্য এলাকার তুলনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। কাজের ঠিকাদারদের প্রতি কড়া নজরদারী রাখতে হবে। কোন চাঁদাবাজ ক্যাডারদের সেখানে মাস্তানী করতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে মানীয় প্রধান মন্ত্রীর ইচ্ছা আগ্রহের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে উন্নয়ন সমাপ্ত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারী কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশে ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছাসের প্রবনতা কমবার মতো আশংখা দেখছিনা। এর মধ্যেই উপকূল বাসীকে বেঁচে থাকতে হবে। তাদের বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রের সক্ষমতা সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ ঘর বাড়ী মেরামত, ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ক্ষতিগ্রস্থ জনগনের পাশে যেতে দেরী করা যাবেনা। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার চিহ্নিত করে সঠিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোন প্রকার দলীয় পরিচয় না দেখে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। সবধরনের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যেন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পান সেটা স্থানীয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। ত্রান সামগ্রী যথাযথ সময়ে পৌঁছানোর মাধ্যমে সরকারের উদ্দ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতি এক্ষেত্রে বন্ধ করতে হবে। ত্রান বিতরনে ইতিপূর্বের সরকার সমূহের অনেক দুর্নাম আছে। সে ধরনের দুর্নামের যেন বর্তমান সরকার না পড়ে। সেটাও প্রশাসনকে দেখতে হবে। নজরদারী বাড়াতে হবে। দুস্থদের পাশে গিয়ে তাদের যাহায্যে এগিয়ে যাওয়ায় এখন বিত্তবানদেরও দায়িত্ব।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply