১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২২/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৯:২২ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বঞ্চিত করে বাড়ী বন্দোবস্ত দেয়া হলো রাজাকারের ভাইকে : ভূমি অফিসের চেইনম্যানের কাছে হার মানলো ভূমিমন্ত্রীর আদেশ

     

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘণের মাধ্যমে যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পঙ্গু সাংবাদিককে উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন শাখার চেইনম্যানকে ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত প্রদানের ঘটনায় সুনামগঞ্জের সারা কালেক্টরেক্ট জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কে বড় ? ভূমিমন্ত্রী নাকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চেইনম্যান ? জানা যায়,সুনামগঞ্জ পৌরসভার ষোলঘর মৌজার ১১২নং জেএলস্থিত,১১৪ খতিয়ানের, ৫১ দাগের ৭ শতক জায়গার উপর ২টি টিনসেড ভিটেবাড়ি রয়েছে। যাহা ভিপি মোকদ্দমা নং ২৮৬/৬৬-৬৭ এর আওতাভূক্ত পৃথক ২টি ভিটেবাড়ি। বর্ণিত ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন অব: তাজুল ইসলাম বীরপ্রতিক,সুনামগঞ্জ ৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি বেগম মমতাজ ইকবাল,সুনামগঞ্জ ৩ আসনের এমপি এম.এ মান্নান,সুনামগঞ্জ ২ আসনের এমপি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সুনামগঞ্জ ১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে গত ৬/৫/২০০৯ ইং তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূ :ম/শা-৬/অর্পিত/বিবিধ/০৪/২০০৫/-২৫৩ নং স্মারকে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক আল-হেলালের আবেদন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ভিপি বাড়ী দুটির যেকোন একটি বন্দোবস্ত লাভের জন্য গত ৯ মে সর্বশেষ বর্তমান জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন করেন আল-হেলাল। এর আগেও একাধিক লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। বিষয়টি জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যেক সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরাই অবগত রয়েছেন। কিন্তু ১১ মে বিদায়ী জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম একজন পঙ্গু সাংবাদিক ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের দীর্ঘ ৯ বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে অধীনস্থ ৩ কর্মচারীকে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে বিরোধীয় বাড়ী দুটি বন্দোবস্ত দিয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে আবেদনকৃত ঐ ২টি ভিটেবাড়ী সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ জহির উদ্দিন আহমেদ এর কাছ থেকে নিজেকে তাবলীগ জামাতের কর্মী পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে থাকার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি নেয় চেইনম্যান মছদ্দর আলী। স্বপরিবারে অবস্থান করলেও বাড়ী দুটি বিয়াম স্কুলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এবং এই বাড়ী বন্দোবস্ত লাভের জন্য কখনও মছদ্দর আলী আবেদন করতে পারবেনা শর্তে জহির উদ্দিন আহমেদ তাকে বাড়ীটিতে কেয়ারটেকার হিসেবে থাকার অনুমতি দেন। অথচ বাড়ী দুটির একটিতে স্বপরিবারে অবস্থান করলেও মছদ্দর আলী অপর ভিটের কিছু অংশ মাসিক ২ হাজার টাকায় অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে কয়েক বছরের ভাড়ার টাকা পকেটস্থ করে। ১১ মে ঐ বাড়ী বন্দোবস্ত লাভের আগে বর্ণিত ভিটায় স্বপরিবারে বসবাস করলেও তার মাসিক বেতন হতে বাড়ীভাড়া বাবত কোন টাকা সে সরকারী কোষাঘারে জমা দেয়নি বা তার কাছ থেকে ভূমি বা প্রশাসন হতে কোন বাড়ী ভাড়া নেয়া হয়নি। আরো জানা যায়,সদর উপজেলার রসুলপুর মৌজার ১৪৭৪/১৩-১৪ নং নামজারী ও ৪৯০ নং এসএ খতিয়ানের ২৪৫ নং দাগভূক্ত ৬২ শতক জায়গার মালিক চেইনম্যান মছদ্দর আলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন,বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়া স্বত্তেও সরকারী ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে মছদ্দর আলী। সে তাবলীগ জামাতের সক্রিয় লোক বটে। সে কখনও নিয়মিত অফিস করেনা। আসা আর যাওয়া এবং হাজিরা দেখানো ছাড়া তার কোন কাজই নেই। সরকারী কর্মসুচিগুলোতে নিয়মিত গরহাজির থাকলেও আজোবদি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।
আরো জানা যায়,ভিপি ভিটেবাড়ীর বন্দোবস্ত গ্রহীতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভুমি অধিগ্রহন শাখার চেইনম্যান মছদ্দর আলী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বুরিস্তল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আব্বাছ আলীর পুত্র। যিনি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। মছদ্দর আলীর বড় ভাই আজমান আলীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ড কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অপরাধ তদন্ত বিভাগে দায়েরকৃত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া ২০১২ইং সনে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু প্রকাশিত “রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ”বইটির ১৮৪ পৃষ্টায় সদর উপজেলার রাজাকার আলবদরদের তালিকায় ৫নং ক্রমিকে রাজাকার হিসেবে মছদ্দর আলীর ভাই আজমান আলীর নাম রয়েছে। একজন দেশদ্রোহী রাজাকারের পুত্র ও রাজাকারের ভাই হিসেবে মছদ্দর আলী অবৈধভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরী ভাগিয়ে নিয়ে সদর উপজেলার খাইরঘাট ও গোধর মৌজায় খাস খতিয়ানের কয়েক একর জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে এসব জায়গা অন্যের কাছে বিক্রি করে অবৈধভাবে কোটিপতি হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে মছদ্দর আলীর মুঠোফোনে কল করলে তিনি “আমার মোবাইলে চার্জ নেই বলে তার সংযোগটি কেটে দেন। সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা বলেন,বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়া স্বত্তেও চতুর্থ শ্রেণীর এই কর্মচারী ভিপি ভিটেবাড়ী বেআইনীভাবে বন্দোবস্ত নিয়ে প্রমাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও কর্মকর্তাদেরকে সন্তুষ্ট করে রাজাকার পরিবারের লোকেরা এখনও প্রভাব খাটাতে পারে। এমনকি সরকারী বাড়ীসহ ভাগিয়ে নিতে পারে যেকোন ধরনের অনৈতিক সুবিধা। তারপরও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply