২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:০৩/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৯:০৩ অপরাহ্ণ

পবিত্র রমজানে মসজিদ কমিটি সমীপে হাফেজ নিয়োগ প্রসঙ্গে আমাদের প্রস্তাবনা

     

 

মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন রশিদী

মসজিদ আল্লাহর ঘর। দেশের প্রচলিত নিয়মে মসজিদ কমিটিই মসজিদ পরিচালনা করে থাকে। এই দায়িত্ব আল্লাহ্ ও রাসুল (দ.) কর্তৃক প্রদত্ত। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিকভাবে ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। সম্প্রতি আমাদের দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবীর জন্য হাফেজ নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিযোগিতামূলক চাঁদা আদায় করে হাফেজদের সম্মানী দেয়া হয়। আপ্যায়ন মেহমানদারী, উপহার-উপঢৌকন, হাদিয়া-তোহফা, ইজ্জত-কদর, আদর-যত্নের সীমা থাকেনা। অনেকেই ‘অমুক মসজিদ হতে আমাদের মসজিদে বেশি সম্মানী প্রদান করব’ এই অনৈসলামিক মানসিকতা লালন করে। আসলে রমজান মাসে খতমে তারাবীহর গুরুত্ব অপরিসীম। এই তারাবীর চর্চা হাফেজদেরকে কুরআন সংরক্ষণে সহায়তা করে। ২/৩ বছর খতমে তারাবী পড়াতে না পারলে অনেক হাফেজের হেফজ চলে যায় (ভুলে যায়)। অন্যদিকে সারাদেশে প্রতি বছর অনেক হাফেজে কুরআন বের হচ্ছে। কিন্তু সেই হারে মসজিদ বৃদ্ধি হচ্ছে না। সীমিত মসজিদে হাফেজদের ভাগ্য নির্ণয়ের জন্য রজব-সাবান মাসে হাফেজগণ মলিন চেহারা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে মসজিদে মসজিদে দৌঁড়াদৌড়ি করে। পরে নিরাশ ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। ফলে অনেক হাফেজ লেবাস পরিবর্তন করে, দাঁড়ি মুণ্ডিয়ে সাধারণ মানুষের মত হয়ে যায়। শতকরা ৯৫ ভাগ হাফেজের এখন এই অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই হেফজ বিভাগ অচিরেই ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। এটা হতে পরিত্রাণের জন্য মসজিদ কমিটির প্রতি আমাদের প্রস্তাবনা: (১) পরহেজগার ও মুত্তাকী হাফেজ নিয়োগ দেয়া এবং তারাবীর নামাজে স্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করা। (২) দাঁড়ি মুণ্ডানো বা একমুষ্টি দাড়ি নেই এবং চরিত্রহীন হাফেজকে খতমে তারাবীর সুযোগ না দেয়া। কেননা এ ধরনের হাফেজের পেছনে নামাজ আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। এতে সকল হাফেজে কুরআন বাধ্য হয়ে একমুষ্টি দাঁড়ি রাখবে ও মুত্তাকী হবে। (৩) ২ জন হাফেজকে মোটা অংকের সম্মানী প্রদান না করে একই সম্মানী দিয়ে ৩/৪ জন হাফেজকে সুযোগ দেয়া। ফলে বর্তমানের দ্বিগুণ হাফেজ খতমে তারাবীর সুযোগ পেয়ে হেফজ সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে একমাত্র মোটা অংকের টাকার লক্ষ্যে যারা খতমে তারাবী পড়ে তাদের টাকামুখী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে খোদামুখী চেতনা সৃষ্টি হবে। এই প্রস্তাবনাগুলো অনুসরণ করা না হলে হেফজ বিভাগের বিপর্যয় ঘটবে। হাফেজ হয়ে খতমে তারাবীর সুযোগ না পেলে নতুন হাফেজ সৃষ্টি হবে না। অন্যদিকে মুত্তাকী ও সুন্নতি দাঁড়িওয়ালা হাফেজ ব্যতীত ফাসেক হাফেজদের সুযোগ দিলে হাফেজদের চরিত্রে দিন দিন অবনতি ঘটবে। শুধু রমজান আসলে দাঁড়ি রাখা এবং রমজান চলে গেলে দাঁড়ি মুণ্ডিয়ে ফেলার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো সুবিবেচনাপূর্বক রমজানে হাফেজ নিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করছি। এভাবে আল্লাহর কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব পালন না করলে মসজিদ কমিটি ও মুতাওয়াল্লীগণ চরম গুনাহগার হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply