২৩ এপ্রিল ২০২৪ / ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৫৯/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

বরকতময় লাইলাতুল বারাআত

     

দিবস-রজনী-মাস-বত্সর সবই মহান আল্লাহর অপার সৃষ্টি। তাহার পরও কতিপয় দিন ও রাত্রি রহিয়াছে যাহা অশেষ মহিমান্বিত ও অতি বরকতময়। ইহা তাঁহার শান ও কুদরতেরই প্রমাণ। যে কয়টি রাত্রি মোবারকময় বলিয়া আখ্যায়িত তন্মধ্যে লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুল বারাআত অন্যতম। লাইলাতুল কদরের কথা সরাসরি বলা হইয়াছে কোরআনুল কারীমের সূরা আল-কদরে যাহা সহস্র মাস হইতে উত্তম। কিন্তু লাইলাতুল বারাআতের কথা সরাসরি কোরআন শরীফে বলা হয় নাই। ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলিয়া  যেই রাত্রির কথা বলা হইয়াছে, অধিকাংশ আলেমের মতে, ইহা দ্বারা বুঝান হইয়াছে কদর রাত্রিকেই। তবে একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা এই রাত্রির অস্তিত্ব, গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রমাণিত। হাদিস শরীফে এই রাত্রিকে বলা হইয়াছে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা মধ্য শাবানের রাত্রি। ১৪ শাবানের দিবাগত রাত্রেই ইহার অবস্থান। ইহার একাধিক নামের মধ্যে ‘লাইলাতুল বারাআত’ও অন্তর্ভুক্ত। আরবিতে লাইলাতুন অর্থ রাত্রি, আর বারাআত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। তাই  লাইলাতুল বারাআত অর্থ মুক্তির রাত্রি। এই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে জীবনের গুনাহ-খাতা হইতে মুক্তি পাওয়া যায়। আর সৌভাগ্য রজনী অর্থে ফারসিতে ইহাকে বলা হয় ‘শবে বরাত’।
লাইলাতুল বারাআতের পক্ষকাল পরই আসিতেছে ত্যাগ-তিতিক্ষার অনুপম দৃষ্টান্ত মাহে রমজান। লাইলাতুল বারাআত মাসব্যাপী সেই প্রশিক্ষণের পূর্বপ্রস্তুতি স্বরূপ। এইজন্য ইহাকে বলা হয়, রমজানের মুয়াজ্জিন বা পতাকাবাহী। এই রাত্রের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, ‘…মহান আল্লাহ এই রাত্রে দুনিয়ার প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগপালের পশমের চাইতেও বেশি বান্দাহকে ক্ষমা করিয়া দেন’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ)। কালব আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্র এবং ঐ গোত্রে তত্কালে ২০ সহস্রাধিক ছাগল ছিল। যেহেতু তাহাদের ছাগপালের সংখ্যা বেশি ছিল, তাই মহানবী (স) এই গোত্রের কথা উল্লেখ করিয়াছেন বিশেষভাবে। আসলে এই রাত্রে আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে মার্জনা করিয়া থাকেন। ইবনে মাজার ১৩৮৪ নং হাদিসে এই রাত্রে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটান ও দিনের বেলা রোজা রাখিবার কথা বলা হইয়াছে। আইয়ামে বিযের কারণেও এই সময় রোজা রাখা উত্তম। এই রাত্রে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া ও দীর্ঘ সিজদাহ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে সূরা ও রাকআত নির্দিষ্ট নহে। দুই রাকআত করিয়া নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি এই রাত্রে কোরআন তিলাওয়াত করা, দরূদ শরীফ ও দোয়া পড়া, ইস্তিগফার করা, কবর জিয়ারত ও দান-খয়রাত করা উত্তম। তবে এই রাত্রে অহেতুক আলোকসজ্জা করা, তারাবাতি জ্বালান, আতশবাজি পোড়ান কিংবা পটকা ফুটান অনুচিত। কেননা এইসব শরিয়ত বহির্ভূত ও গর্হিত কাজ।
লাইলাতুল বারাআতে আল্লাহ তায়ালা মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, গণক, কৃপণ, মদ্যপ, সুদখোর, ব্যভিচারী, অন্যের হক বিনষ্টকারী ও পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করিয়া দেন। তবে তাওবাতুন নসুহার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরিয়া আসিলে তিনি তাহাদেরও ক্ষমা করিয়া দিতে পারেন। এই রাত্রে আমরা মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনাসহ দেশ ও দশের সমৃদ্ধির জন্য জন্য দোয়া করিব। বিশেষত দেশের হাওরাঞ্চলে বন্যাজনিত দুর্যোগের কারণে যাহারা বালা-মুসিবতে আছেন, তাহাদের এই সংকট কাটাইয়া উঠিবার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাইব। তিনি আমাদের সর্বান্তঃকরণে ক্ষমা করুন এবং সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার তাওফিক দিন। আমীন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply