২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:৩২/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৯:৩২ অপরাহ্ণ

কাজ সমাপ্তির পূর্বেই ডাম্বিং করা গানি ব্যাগের সিমেন্ট,বালু খসে যাচ্ছে রাজারহাটে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে নিম্নমানের বালু ও স্যান সিমেন্ট গানি ব্যাগ কম দেয়ার অভিযোগ

     

সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর বামতীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের তীর সংরক্ষন সহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কাজ সমাপ্তি পূর্বেই কাজে ব্যবহৃত স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ ছিড়ে ও খসে পড়ছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর তিস্তা নদীর বামতীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের তীর সংরক্ষন সহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফলাতির কারনে ষ্টিমেট বহির্ভূত ভাবে নিম্নমানের কর্দম্যাক্ত বালু দিয়ে কাজ করার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়া প্রায় ৭৫হাজার স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ কম দিয়ে কাজ সমাপ্তির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪ কোটি ২৯ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা ব্যায়ে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ডাংরারহাট আদর্শ গুচ্ছ গ্রামে তিস্তা নদীর বামতীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ১০৩.৩৫০ কিঃমিঃ থেকে ১০৩.৯০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত অস্থায়ী তীর সংরক্ষন ও বাঁধ নির্মাণ কাজের টেন্ডার হয়। মানিকনগর,ঢাকাস্থ ঠিকাদার তাজুল ইসলাম কুড়ি-০৮/২০১৪-১৫ প্যাকেজের আওতায় এই কাজের টেন্ডারপ্রাপ্ত হন। গত ২০১৫ইং সনের ২৪ মে এই কাজ শুরু হয়। ষ্টিমেট অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭৬টি স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ স্থাপন করার কথা রয়েছে। তবে মোট কাজের ৭০ভাগ সমাপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পাউ’বো কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন,মূল ঠিকাদার তাজুল ইসলাম কুড়িগ্রামের সাইদুর নামের এক ব্যাক্তির কাছে কাজের সাব-লিজ প্রদান করেন। সাইদুর রহমান কাজ নিয়ে পাউবো’র এস’ওর সাথে যোগসাজস করে স্যান সিমেন্ট গানি ব্যাগের কাজ এলাকার একটি সিন্ডিকেটের নিকট সাব লিজ প্রদান করায় শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম চলে আসছে বলে অভিযোগ তাদের। বাঁধ নির্মাণ কাজে ১লাখ ৯৬ হাজার ৭৭৬টি স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগের স্থলে প্রায় ১ লাখ ১৮ থেকে ২০ হাজার স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ দিয়ে কাজ সমাপ্তির পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার হাসেন আলী,মোহাম্মদ সহ অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, আগে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তিস্তা নদীর কর্দমাক্ত বালু ,এখন নদীতে পানি হওয়ায় বড়বাড়ি নিমবাড়ি নামক স্থান থেকে নি¤œমানের কর্দম্যাক্ত ভিডি বালু এনে স্যান সিমেন্ট গানি ব্যাগের কাজ চলছে। অজ্ঞাত কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগন এসব বিষয় জেনেও যথাযথ তদারকী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অনিয়ম চলছে। ফলে বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে শংসয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আক্তার আহসান রতন অভিযোগ করেন,নি¤œমানের বালু ব্যবহার সহ কাজে ব্যাপক অনিয়ম চলছে,কিন্তু এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আঃ হাকিম জানান,নি¤œ মানের কাজ হলে এটা করতে দেওয়া যাবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়,বাঁধের তীর সংরক্ষন সমাপ্তির পূর্বেই কাজে ব্যবহৃত স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগের বস্তা গুলো ছিড়ে ও খসে পড়ছে। স্যান সিমেন্ট গানি ব্যাগে ১ থেকে ১.৫ এফ,এম বালু ব্যাবহারের কথা থাকলেও ওই তিস্তা নদী থেকে উত্তোলন করা নি¤œমানের পলি মাটি যুক্ত বালু ব্যাবহার করে দায়সারা ভাবে কাজ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ষ্টিমেট অনুযায়ী স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ তৈরীর ক্ষেত্রে ৮ঃ১ সিমেন্ট ও বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও সেখানে ২০ঃ১ সিমেন্ট-বালু ব্যবহার করে নি¤œমানের কাজ করা হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। আর্থ ওয়ার্কে নির্ধারিত যে পরিমান মাটির কাজ ও ঘাস লাগার কথা তাও সঠিক ভাবে করা হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম অভিযোগ করেন ,কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে নিজেও দেখে এসেছি। কিন্তু মানসম্মত কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার বা পাউবো কর্তৃপক্ষ কখনো সহযোগীতা চান না বা কোন কিছু জানান না।
এ বিষয়ে ঢাকাস্থ ঠিকাদার তাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পাউবো’র সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কল কেটে দিয়ে ফোন ব্যস্ত করে রাখেন।
কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, নিম্ন মানের বালু ব্যবহার বিষয়ো এলাকাবাসীর অনেকেই মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন,তাই এবিষয়ে এস,ও এবং এস,ডি কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply