২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ১:২৭/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিজয়ের মাসে প্রজন্মের চাওয়া

     

আজহার মাহমুদ
বিজয় দিবস বাংলার মানুষের কাছে গর্বের, আনন্দের আর অহংকারের। তাই বিজয়ের মাসও বাংলার মানুষের কাছে গর্বের। বর্তমান প্রজন্মের তরুণরাও এই দিবসটির জন্য গর্বিত। সকলে মিলে উদযাপন করি মহান বিজয় দিবস। মহান বিজয় দিবস ১৯৭১ থেকে ২০১৮। হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বাধীনতার ৪৮ বছরে বাংলাদেশ। এ প্রজন্ম সেদিনের ভয়ানক দৃশ্যগুলো দেখেনি, তবে শুনেছে সেই দিনগুলোর কথা। দেখেনি ৩০ লাখ শহিদের তাজা রক্ত, দেখেছে তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ। মা বোনের সম্ভ্রম হারাতে দেখেনি, তবে সেই নিষ্ঠুর ইতিহাস পড়ে চোখের জল ফেলেছে। বর্তমান প্রজন্ম আজ দেখছে আমাদের এই সাজানো সোনার বাংলাকে অনেক সুন্দরভাবে। কিন্তু এই সোনার বাংলা গড়ার কারিগর কারা ছিলেন তা জনেনা অনেকে। কিন্তু এই না জানাটা আমাদের জন্য বড় দায়। আমরা যদি বিবেকহীন অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকি তবে স্বাধীন দেশে যাদের জন্য বসবাস করছি তাদের কথা স্মরণ করবোনা এবং তাদের কথা জানবোনা অথবা জানার চেষ্টা করবোনা। আর বর্তমান প্রজন্ম বিশ্বাস করে স্বাধীনতার কথা যারা স্বীকার করে না তাদের ভেতর দেশপ্রেম আর দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই। আজ আমরা যাদের জন্য এই সোনার বাংলা পেয়েছি তাদের ভুলে গেলে আমাদের মতো অকৃতজ্ঞ আর কেউ হবে না। দেশের জন্য যারা নিজের জীবন দিয়েছেন তাদের যারা ভুলে যেতে পারে তারা কখনো দেশপ্রেমিকও হতে পারে না। তাই দেশকে ভালোবাসতে হলে, দেশপ্রেমিক হতে হলে অবশ্যই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যাদের অবদান রয়েছে সকলকেই স্মরণ করতে হবে এবং ভালোবাসতে হবে। আর এই স্বাধীন দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলতে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সেই কথা বলেছেন। তিনিও চেয়েছেন সকলে একসাথে মিলে সোনার বাংলা তৈরী করতে। তিনি না পারলেও তার  স্বপ্ন আজ কিছুটা বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে আজ উন্নয়নের চিত্র দেখছি। তবে দেশের মানুষের কাছে এবার বিজয়ের মাস কাটবে অন্যরকম এক আমেজে। আর সেই আমেজ হলো নির্বাচনের আমেজ। এখন থেকে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের ভেতর আমেজ দেখা যাচ্ছে। বিজয়ের মাসে নির্বাচন এটা দারুণ একটি বিষয়। এই মাসে আমাদের দেশ বিজয়ী হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। এই বিজয়ের জন্য দেশের মানুষ হারিয়েছে অনেক কিছু। যার বর্ণনা দিতে গেলে আজ হয়তো আমার লেখা থামতে চাইবে না। তাই বলতে চাই- সেই মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবারের নির্বাচন হতে হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ প্রজন্মও এটা চায়। বিজয়ের মাসে আরো একটি বিজয় সকলেই আঁশা করে। নির্বাচনে যেই সরকার আসুক না কেনো দেশের উন্নয়নের জোয়ার ধরে রাখতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশ উন্নয়নের মধ্যেই রয়েছে। এখন প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসায় পহেলা জানুয়ারি বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গরিব শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। এরকম উন্নয়ন শুধু শিক্ষা খাত নয় দেশের প্রতিটা খাতেই এখন লক্ষণীয়। আজ আমাদের দেশে নির্মাণ হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এভাবে দেশের নানা স্থানে হাজারো উন্নয়নের দৃশ্য দেশের মানুষ দেখছে। এখন আমাদের দেশের উন্নয়নে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ প্রজন্মের প্রত্যাশা এই উন্নয়ন যেনো থমকে না যায়। নির্বাচনে যেনো কোনো ধরনের অসংগতি আর অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেটাই প্রজন্মের চাওয়া। বিজয়ের মাসে নির্বাচনে যে দল বিজয়ী হবে তাদের নিকট অগ্রিম কিছু চাওয়া রইলো বর্তমান প্রজন্মের। আজ আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের অভাব নেই। এর কারণ আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই পর্যাপ্ত। যার কারণে আজ আমাদের দেশে পড়া লেখা করেও হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষা শেষে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলে না। তারা কর্মসংস্থানে সুযোগ না পেয়ে চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে তখন জীবনের তাগিদে নোংরা এবং ঘৃণ্যতম কাজ বেঁছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছে, অনেক সময় হয়ে উঠছে দেশের জন্য বিপদগামী। তাদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কতিপয় মহল তাদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তাই সরকার যিনিই হউক না কেনো এ প্রজন্মের চাওয়াকে গুরুত্ব দেবেন এটাই প্রজন্মের প্রত্যাশা। আর যেনো কোনো শিক্ষিত বেকার বাংলার বুকে না থাকে। কোনো শিক্ষিত ছেলে যেনো কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে। এ জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান যোগান দেয়া। আর এটাই প্রজন্মের প্রত্যাশা। দেশে যখন বিজয়ের মাসে মারামারি, খুন, গুম, চুরি ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট এবং নোংরা অপরাধ চলে তখন প্রজন্মের কাছে এ বিজয়ের আনন্দ অনেকখানি মলিন হয়ে যায়। আমরা সকলে হয়তো জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বিষয়টিও আমাদের কাছে তেমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাদের দেশের মানুষ ভয়হীন বাঁচতে পারছে না। বাজারে গেলে ছিনতাইকারীর ভয়, ঘরে আসলে ডাকাতের ভয়, গাড়িতে উঠলে পকেটমারের ভয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে মৃত্যুর ভয়। ভয় আর ভয়। ভয়হীন বাঁচা যেনো এখন আমাদের কাছে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরেও আজ আমরা বিজয়ের গান গাইছি। কিন্তু এ গান যদি ঠোঁটে আজীবনের জন্য রাখতে চাই, তবে আমাদের দেশকে তৈরী করতে হবে জঙ্গী এবং সন্ত্রাস মুক্ত ভয়হীন বাংলাদেশ। বাংলার মানুষ যেনো ভয় না পায়। সকলেই যেনো যার যার বুক ফুলিয়ে চলতে পারে। এমন ভাবেই দেশ চালাতে হবে। থাকতে পারবে না ধর্মের ভেদাভেদ। পার্থক্য থাকবে না ধনী আর গরীবের মধ্যে। দেশের মানুষ সকলেই সমান ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারে এটাই এ প্রজন্মের চাওয়া। তবে জানি এমন চাওয়া অনেকটাই “আকাশ-কুসুম” এর মতোই। তবুও বিজয়ের এ মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য নিজেকে তৈরী করা। নিজের জন্য না, অন্যের জন্য হতে হবে আমাদের। তবেই বিজয়ের মাসে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হবে। ‘৭১ সালের যোদ্ধারা কি নিজেদের জন্য যুদ্ধ করেছে? না, তারা আমাদের জন্যই করেছে। নিজের জীবন দিয়েছে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য। তবে আমরা কেন নয়? আমাদেরও দেশের জন্য ভাবতে হবে এবং করতে হবে। বিজয়ের এ মাসে আমাদের সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের দেশকে এখন মুক্ত করতে হবে এসব হায়না থেকে। বের করতে হবে তারা কাদের ছত্রছায়ায় আছে। উচ্ছেদ করতে হবে এসকল দেশ বিরোধী শত্রুদের। তবেই দেশ এবং দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে। সর্বপরি বিজয়ের এ মাসে এ প্রজন্মের চাওয়া থাকবে সুষ্ঠ এবং সুন্দর নির্বাচন। এটাই হবে দেশের মানুষের মাঝে নতুন এক বিজয়। বিজয়ের মাসে এর চাইতে বড় উপহার আর কিছুই হতে পারে না । সেই উপহারের অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ এবং এ প্রজন্ম।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply