১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:২৬/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৭:২৬ অপরাহ্ণ

আমজাদ হোসেনের বিদায়ে বাকরুদ্ধ ‘গোলাপী’

     

‘বাংলাদেশে কোনো কেলাস (ক্লাস) নাইক্যা, আমরা হগলেই এক কেলাসের (ক্লাস) মানুষ।’-এটি একটি চলচ্চিত্রের সংলাপ।’হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ।’- এটি একটি জনপ্রিয় গান।

এই গান, এই সংলাপ এখনও বাংলার মানুষের মুখে মুখে। এমনই সহজ ঢঙে জীবনের নিগুঢ় সত্য প্রকাশের প্রজ্ঞা যিনি রাখতেন তিনি কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, অভিনেতা, লেখক ও গীতিকার আমজাদ হোসেন। বাংলা শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্রাঙ্গনের এক বরপুত্র।তার সিনেমার সংলাপ, তার লেখা গান এমনই জীবনঘনিষ্ঠ যে, এখনও তা মানুষের মুখে মুখে। অসংখ্য পাঠক, শ্রোতা, দর্শকের ভালোবাসায় স্নাত হয়েছেন আমজাদ হোসেন। পেয়েছেন সর্বচ্চ সম্মান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।আমজাদ হোসেনের নাম কানে এলেই চোখে ভেসে ওঠে ‘ভাত দে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র ছবি। তার সিনেমার সংলাপ, তার লেখা গান এখনও মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু আজ থেকে এই কিংবদন্তী মানুষটিই হয়ে গেলেন দূরের তারার মতো। আজ থেকে তার লেখা গানের মতো, সিনেমার সংলাপের মতো, তার নামটিও ঘুরে বেড়াবে মানুষের মুখে মুখে। অন্তরে অন্তরে।কিংবদন্তী এই চলচ্চিত্রকার আজ বিকাল তিনটার দিকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুপালি পর্দার মায়া কাটিয়ে ছায়া হয়ে গেছেন অচেনা পর্দায়। ব্রেন স্ট্রোক করে গত ১৮ নভেম্বর সকালে তিনি তেজগাঁয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নেয়া হয় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে দেশবাসীকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন চিরতরে।নির্মাতা আমজাদ হোসেন আর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ যেন সমার্থক শব্দেরই মতো। ‘গোলাপী এখন ট্রেনের’ ‘গোলাপী’ চরিত্রে অভিনয় করা ববিতাকে যখন জানানো হল আমজাদ হোসেন আর নেই তখন ববিতা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। বাকরুদ্ধ ববিতাকে স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় নিতে হয়।তারপর তিনি ভেজা ভেজা কণ্ঠে ফোনের ওপার থেকে কোন রকমে গণমাধ্যমকে বলতে পারলেন, এই মৃত্যু একটা বিরাট আঘাত। আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করেছি তারা জানি, তিনি কাজের প্রতি কতটা আন্তরিক ছিলেন। আমাদের জন্য, আমাদের চলচ্চিত্রের দর্শকের জন্য তার মৃত্যু সংবাদ গভীর বেদনার, খুবই দুঃখের। তার মতো মেধাবী মানুষ আমি জীবনে খুব কম পেয়েছি। আমি তিনশ’র মতো ছবিতে কাজ করেছি। তারমধ্যে আমজাদ ভাইয়ের ছবিগুলো আমার জন্য ছিলো সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার ছবিগুলো খুব অনায়াসে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে কারণ, তিনি জীবন বুঝতেন, তার প্রজ্ঞা ছিলো। তাই তার ছবির গল্প, সংলাপ এমনভাবে আমাদের মনকে ছুঁয়ে যেতো।আমজাদ হোসেন নির্মিত ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।আমজাদ হোসেন ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নানামাত্রিক কাজের জন্য ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply