২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:৪৪/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

ব্যাংক থেকে এক দশকে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাট

     

গত এক দশকে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ২০০৮ সালের পর জালিয়াতি, অনিয়ম ও হ্যাকিং এর মাধ্যমে এসব করা হয়েছে। লোপাট হওয়ার শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক, প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া বেসিক ব্যাংকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ও ফারমার্স ব্যাংকে ৫শ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদে রাজনীতিকদের যুক্ত করা, পরিচালকের দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ঋণ দেওয়ায় সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত সংলাপে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় ম?ূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখারসহ কয়েকটি ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান এমডি এবং বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিরা।

মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বড় কয়েকটি জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লুট হয়েছে। এই পরিমাণ টাকায় দেশের পদ্মা সেতুর ৭৮ ভাগ নির্মাণ করা সম্ভব, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের সাড়ে ৬২ ভাগ যোগান দেওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ অর্থে দেশের চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো। তাছাড়া লোপাট হওয়া এই অর্থের পরিমাণ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩৯ ভাগের সমান।

অর্থনীতি কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি: ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, কয়েক বছর ধরে উন্নতির বদলে অবনতি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। এতে পুরো অর্থনীতি কিছু ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে। তাই নির্বাচনে রাজনীতিবিদদের অঙ্গীকার করতে হবে, ব্যাংকিং খাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না। ব্যাংকিং খাতকে রক্ষায় রাজনৈতিক প্রভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত পুরো ধ্বংস না হলেও ফাটল ধরেছে। পর্ষদে রাজনীতি ঢুকেছে। ব্যাংকিং খাত রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

লুটপাটকারীদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে: ইব্রাহীম খালেদ

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর খবরদারি করছে ব্যাংকের মালিকরা। বেসিক ব্যাংকে ২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেলো। অথচ তার প্রধানকে কেউ স্পর্শ করতে পারলো না, দুদকও না। এটা আইনের শাসনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে ভদ্রলোকদের সরিয়ে লুটপাটকারীদের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসোন বলেন, বড় গ্রাহকদের হাতে ব্যাংকের ঋণ ও মালিকানা কেন্দ্রীভূত। সুশাসনের অভাবে আমানতকারীদের স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়ছে।

নাগরিক কমিশন গঠন করবে সিপিডি: দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংকিং খাত রক্ষায় নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংক রক্ষার ঘোষণা থাকতে হবে। ব্যাংকের উন্নয়নে তারা কি ভূমিকা পালন করবেন এবং হস্তক্ষেপ করবেন না তার ঘোষণাও থাকতে হবে ইশতেহারে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পর নাগরিক কমিশন গঠন করবে সিপিডি। এ কমিশন ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে। ব্যাংক খাত নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা হবে। সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরবে এ কমিশন।

দি ফারমার্স ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু বলেন, রাজনৈতিকভাবে একজন চরম প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার আশপাশের মানুষ ফারমার্স ব্যাংককে শেষ করেছে। সংলাপে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।সৌজন্য ইত্তেফাক

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply