২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:০৭/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৫:০৭ অপরাহ্ণ

তাবলিগ ও কিছু কথা

     

মাহমুদুল হক আনসারী

সাম্প্রতিক সময়ে তাবলিগ জামাতের কর্মকান্ড নিয়ে মুসলিম সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাবলিগ শব্দ আরবী। যার অর্থ হলো পৌছিয়ে দেয়া। কোরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সমাজে প্রচারের নাম তাবলিগ। তাবলিগ সেটা একক ভাবে কোনো গোষ্ঠির জন্য সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের অনুসারী কোরআন, হাদিস, নবী রসূলের অনুসারী যারা তাদের প্রত্যেকের উপর ইসলামের তাবলিগ করা অন্যতম কর্তব্য।মুসলিম দেশে মুসলমানরা বিভিন্নভাবে প্রয়োজনের নিরিখে ইসলামের দাওয়াত এবং তাবলিগ করে থাকেন। সে হিসেবে তাবলিগ শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ কোনো উপাধি বা  নাম হতে পারে না। কারণ তাবলিগের নামে ইসলামের পরিভাষা ব্যবহার করে  নিজস্ব চিন্তা চেতনা মতামত প্রচার প্রসার ইসলাম সম্মত নয়। ইসলাম ধর্মে যে পদ্ধতিতে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ, মুস্তাহাব ব্যবহারের অনুমতি অথবা বিধান রাখা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ইসলাম ধর্ম অনুসরণ অনুকরণের নাম ধার্মিকতা। মনগড়া বক্তব্য আর কর্মসূচী তৈরী করে ইসলামের মূল স্তম্ভকে পরিবর্তন করা কখনো ইসলামী নীতির মধ্যে পড়ে না। যখন থেকে ‘তাবলিগ’ ধর্ম প্রচারের নামে মানুষের মাঝে তৎপর হয়েছে তখন থেকেই তাদের কতিপয় কর্মসূচী নিয়ে মুসলিম সমাজে বিতর্ক দেখা দেয়। আমার উদ্দেশ্য তাদের বিতর্কিত কর্মসূচী নিয়ে নতুন করে আরেকটি বিতর্কের সৃষ্টি করা নয়। যেভাবেই হোক দীর্ঘ কয়েক যুগ থেকে তাবলিগ জামাত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া মুসলিম সমাজে কোরআন ও হাদিসের কতিপয় সহজ সরল বাণী প্রচার করে আসছে। ধর্মীয়ভাবে দুর্বল অর্ধশিক্ষিত মানুষের মাঝে তারা, ইসলামের ইবাদত বন্দেগীর নিয়ম কানুন পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে আসছে। অজ গাঁ গ্রামের সহজ সরল মুসলমান তাদের দাওয়াতের মাধ্যমে উপকৃত হয় নাই বলা যাবে না। ইসলামের মৌলিক ইবাদত, কোরআন ও হাদিসের কতিপয় নির্দিষ্ট সিলেবাস তারা শিক্ষা দিয়ে দুর্বল মুসলমানদের ইসলামের আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। সম্পূর্ণভাবে নিজ নিজ খরচে তাবলিগের অনুসারীরা ইসলামের দাওয়াত প্রচারে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। বলতে গেলে এটা একটা ধর্মীয় মহৎ ও পূণ্যের কাজ। তাবলিগের কর্ম তৎপরতা এবং অনুসারী সারা দুনিয়ায় কম বেশী দেখা যায়। তাদের শ্রম ও নিষ্টার কারণে দুনিয়ার অসংখ্য নর নারী ইসলামের আলো দেখতে পেয়েছে। যদিও সমাজে তাবলিগ জামাত নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ অনেকগুলো বিতর্ক এবং কথা আছে। তারপরও বিতর্কের দিকে না গিয়ে বলা যায় তাবলিগ জামাত মাত্র কয়েক বছর আগেও মানুষের কাছে শান্তিপ্রিয় শৃংখলাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য সংগঠন ছিলো। অরাজনৈতিক ধর্মীয় এ সংগঠন মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই মানুষের সে ধারণা পাল্টিয়ে দিল। অরাজনৈতিক তাবলিগ জামাত হলেও এখানে রাজনৈতিক ব্যাক্তি শক্তি দেখা যায়। অদৃশ্য ভাবে দূর থেকে রাজনৈতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ আছে বলে প্রতীয়মান। ফলে তাবলিগ জামাতের যারা নিয়ন্ত্রক কর্ণধার তারা কোনো না কোনো শক্তির কাছে গাইড হচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারণা। সে কারণে যেখান থেকে এ সংগঠন পরিচালিত হতো সেখানেই উলট পালট হয়ে গেছে। নেতৃত্ব এখন ঠিক কোন জায়গায় সেটা অনুসারীরা বুঝতে পারছে না। সংগঠনের আদর্শ নিয়ম নীতি কর্মসূচী পন্থা বিরোধী বক্তব্য প্রচার হচ্ছে তাবলিগের নামে। যেসব বক্তব্যে সরাসরি কোরআন ও হাদিসের পরিপন্থি। বলা হচ্ছে তাবলিগে উলামাদের প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ না। মাদ্রাসা শিক্ষা তাবলিগের জন্য প্রয়োজন নয়। মাদ্রাসা শিক্ষায় অর্থ দান ইসলাম সম্মত নয়।ইসলামী শিক্ষা দিয়ে বেতনভাতা গ্রহণ করা শরিয়ত সম্মত নয়। এ জাতীয় বক্তব্যের কারণে আজ তাবলিগের মতো শান্ত ও সুশৃংখল ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো। দীর্ঘদিনের একটি সুশৃংখল সংগঠনের অনুসারীদের মধ্যে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশেও মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। বক্তব্যের সূত্র ধরেই অনুসারীদের মধ্যে মারামারি আর হানাহানি। ক্ষমতার ধন্ধ, প্রকট আকার ধারণ করেছে। মসজিদে মসজিদে এলাকায় এলাকায় গ্রুফিং, সমাবেশ পাল্টা সমাবেশ হচ্ছে। এক গ্রুফ আরেক গ্রুফের বিরোদ্ধে স্বসস্ত্র মোকাবেলা করছে। কীসের জন্য মোকাবেলা, ক্ষমতার জন্য। ধর্মের জন্য, ইসলামের জন্য নবীর জন্য নয়। একজন নামাজী মুসলমান আরেকজন নামাজী মুসলমানকে হত্যা করছে। তাবলিগের নামে ধর্মের কথা বলে মাট দখলের জন্য এক ভাই অপর মুসলমান ভাইকে হত্যা করছে। তাহলে বাস্তবে ওই তবলিগকে আপনি কীসের সাথে তুলনা করবেন। আসলে কী তারা ইসলামের জন্য ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছে, নাকি অন্য কিছু। ইসলাম শান্তি সম্প্রীতি ও শৃংখলার ধর্ম। যারা শান্তি শৃংখলা পরিহার করে সন্ত্রাস নৈরাজ্য আর খুনাখুনি করে তাহলে তারা কী প্রচার করতে চায়। কোন ধর্ম তারা প্রতিষ্টা করতে চায়, সেটা এখন আর সাধারণ মানুষের বুঝতে বাকি নেই। নির্দিধায় বলা যায় যে, সে তবলিগ আর আজকের তবলিগ এক নয়। তখনকার আদর্শ আজকের তাবলিগের কর্মকান্ড অনেক তফাৎ। মুসলিম সমাজকে সতর্ক হতে হবে। এখন সতর্ক এবং প্রতিরোধ করার সময়। তাবলিগের নামে ধর্মের আবরণে অধার্মিক অনৈসলামীক কর্মকান্ড কোনো অবস্থায় মুসলিম সমাজ মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশে ৮৭% জনগণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। বিভিন্নভাবে এদেশের মুসলমানগণ তাদের ধর্মকর্ম ইবাদত বন্দেগী আদায় করে থাকে। পীর আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। আলেম উলামা মসজিদ মাদ্রাসা খানেকার দেশ এ মাতৃভূমি। এদেশে ধর্মকে ব্যবহার করে মুসলমানদের মূল্যবান জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া যায় না। জনগণ কখনো এ ধরনের কর্মকান্ড চুপচাপ সহ্য করবে না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে বিরোধী দলীয় প্রধানও মুসলমান। এদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় আচার অনুষ্টান সাধ্যমতো পালন করে থাকে। আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আনুগত্য পোষণ করে থাকে। সরকারকে বলবো তাবলিগের নামে ধর্মীয় আবরণে গড়ে উঠা এসব সন্ত্রাসী সংগঠনকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। কোনো অবস্থায় ইসলামের নামে মুসলিম হত্যা ও সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়। আসুন ধর্মের নামে এসব অধর্মের কালো হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করি।লেখক: গবেষক, প্রবন্ধিক

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply